সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
ঝালকাঠির বাস দুর্ঘটনা

চালকের অসতর্কতায় প্রাণহানি

মহাসড়কেও অবৈধ যান, পুলিশের তদারকি নেই

প্রতিদিন ডেস্ক

চালকের অসতর্কতায় প্রাণহানি

ঝালকাঠির ছত্রকান্দায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী বাস বাশার স্মৃতি পরিবহন (ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-৬৫৪৯) পুকুরে পড়ার ঘটনায় নিহত ১৭ জনের পরিবারের শোকের মাতম চলছেই। এ ঘটনায় দুই দিনেও ভুক্তভোগীদের পক্ষে কেউ মামলা করতে যাননি। অনেকেই এরকম দুর্ঘটনার জন্য চালকের দায়িত্বহীনতা ও অসতর্কতাকে দায়ী করছেন। সড়ক নিয়ে পুলিশের তদারকির অভাবকেও অভিযুক্ত করছেন তারা। অন্যদিকে বাস মালিকরা দুর্ঘটনার জন্য মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচলকে দায়ী করছেন। সার্বিক বিষয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- ঝালকাঠি : ঝালকাঠির দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের পরিবারে শোকের মাতম চলছেই। শনিবার সন্ধ্যায় লাশ হস্তান্তরের পর তাদের যার যার বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ সুপার জানিয়েছেন,  দোষী চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটি ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে।

বাসের চালক মোহন, হেলপার বুলেট আশিক ও সুপারভাইজার মো. ফয়সাল ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। বাস দুর্ঘটনায় আহত ৩৫ জনের মধ্যে ৩৩ জন রবিবার চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তারা চিকিৎসাধীন ছিলেন। আহত বাকি দুইজন মো. জলিল ও তার স্ত্রী মিনারা বেগম ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তাদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। মামলার ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে বাস দুর্ঘটনায় নিহত স্বজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা আহতদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কেউই মামলা করতে আগ্রহী না হওয়ায় গতকাল রাতে ঝালকাঠি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।

পিরোজপুর : বিয়ের ১০ বছরেও জন্ম হয়নি কোনো সন্তান। এরপর বাবা হওয়ার জন্য যখন অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন ঠিক সেই মুহূর্তে সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে হতভাগ্য পিতার জীবন। গত শনিবার সকালে ঝালকাঠি সদর উপজেলায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মধ্যে একজন এ অনাগত সন্তানের বাবা শাহীন মোল্লা। প্রায় ১০ বছর পূর্বে পাশের কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের আবদুল মজিদ খানের মেয়ে নাজমার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া গ্রামের ছালাম মোল্লার ছেলে শাহীন মোল্লার। তবে গার্মেন্ট কর্মী নাজমা এবং গাড়িচালক শাহীন দম্পতির ঘরে কোনো সন্তান ছিল না। বিয়ের এ দীর্ঘ সময় পর নাজমা এখন সাত মাসের গর্ভবতী। আর এতে আনন্দের কোনো সীমা ছিল না তাদের পরিবারে। তবে সন্তানের মুখ দেখার আগেই এ পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়েছে শাহীনকে। একই দুর্ঘটনায় নিহত দক্ষিণ ভান্ডারিয়া গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী তারেক মাহমুদের বাড়িতেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সাত বছর বয়সী ছেলে মাহাদিকে নিয়ে ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালে চিকিৎসা করতে যাচ্ছিল তারেক। এ দুর্ঘটনায় ছেলেকে বাঁচাতে পারলেও, নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি তারেক। নিহত তারেকের মাহাদি ছাড়াও সাত মাস বয়সী আরও একটি সন্তান রয়েছে। উল্লেখ্য, শনিবারের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মধ্যে আটজনের বাড়িই ভান্ডারিয়ায়।

এদিকে দুর্ঘটনায় নিহত ভান্ডারিয়া উপজেলার আটজনের পরিবারে দেখা দিয়েছে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা পরিবারের অন্য সদস্যরা। মর্মান্তিক এ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এসব পরিবার দায়ী করছে বাসচালকের খামখেয়ালীকে। দায়ী চালকের শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তারা। আহত শামীম মোল্লা জানান, বাসচালক ও হেলপারের খামখেয়ালীর জন্য এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। বাস ছাড়ার পর থেকে তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে যাত্রী উঠায়। বাসে বসার জায়গা না থাকায় যাত্রী উঠাতে নিষেধ করেন বাসে থাকা লোকজন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করেন বাসের চালক। চালক পেছনের দিকে তাকিয়ে ঝগড়া করার একপর্যায় বাস নামিয়ে দেন রাস্তার বাইরে। তিনি কোনোমতে জীবন বাঁচাতে পারলেও তার বাবা ও বড় ভাই মারা যান। বাসচালকই তার বাবা ও ভাইকে হত্যা করেছেন। নিহত সালাম মোল্লার মেয়ে শারমিন আক্তার জানান, তার যে ভাই মারা গেছেন তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। এখন তার ভাবি ও তার অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ কি হবে? তারা কারও সহায়তা চায় না। তারা বিচার চায়।

বরিশাল : গত শনিবার ঝালকাঠিতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জলাশয়ে পড়ে ১৭ জন নিহতের ঘটনার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালকের অবহেলা-অসাবধানতা, অতিরিক্ত যাত্রীবহন, বেপরোয়া গতি, সড়ক-মহাসড়কে থ্রি হুইলারসহ অবৈধ যান নিয়ন্ত্রণ ও আলাদা সার্ভিস লেন নির্মাণ, সড়কের পাশে বাজার উচ্ছেদ, বিপজ্জনক বাঁক ও মোড় সম্প্রসারণ এবং রোড সাইন স্থাপন করা না হলে মৃত্যুর মিছিল বাড়বে। এ জন্য মালিক-শ্রমিকদের পাশাপাশি সড়ক বিভাগ, বিআরটিএ ও পুলিশকে আরও দায়িত্ববান হতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

 

সর্বশেষ খবর