সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

আধিপত্য বিস্তার পানির ব্যবসা নিয়ে খুন

রুবেল হত্যা :- ডিবি-র‌্যাবের কবজায় ১০ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আধিপত্য বিস্তার ও পানির ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে খুন হয়েছেন যুবলীগ নেতা অলিউল্লাহ রুবেল।

রাজধানীর শাহজাহানপুরের গুলবাগে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন র‌্যাব-পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটজন এবং র‌্যাব দুজনকে গ্রেফতার করেছে। ডিবির হাতে গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন হাবিব আহসান, আলিফ হোসাইন, রবিউল সানি, মো. মেহেদী হাসান, মো. শাহজালাল, রফিকুল ইসলাম, নুর আলম ও মো. সুমন মীর। র‌্যাব গ্রেফতার করেছে আদনান আসিফ ও মো. শাকিলকে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহজাহানপুরের মালিবাগ বাজার রোডের ১৫৬ নম্বর বাড়ির সামনে রুবেলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় দুর্বৃত্তরা। বাসা থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে জখমের পর ছটফট করছিলেন যুবলীগ নেতা রুবেল। সিসিটিভি ফুটেজে এমন দৃশ্য ধরা পড়ে। গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী তানজিনা দেওয়ান বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আটজনের গ্রেফতারের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, আটজনকে গ্রেফতারের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবি জানতে পারে, যুবলীগ নেতা রুবেলের সঙ্গে নিবিড় ও শাহজালালের এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ হয়। আধিপত্য বিস্তারের জেরে নিবিড় ও শাহজালাল দুজন মিলে রুবেলকে মারার জন্য হাবিবকে ঠিক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় হাবিবকে নিবিড় চাপাতি কেনার জন্য ৪ হাজার টাকা দেন। টাকা দিয়ে হাবিব খিলগাঁও বাজার থেকে দুটি চাপাতি কেনেন। পরবর্তী সময়ে ঘটনার আগের দিন শাহজালাল ও হাবিব দুজন রুবেলকে মারার পরিকল্পনা করেন। অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, ঘটনার দিন সন্ত্রাসীরা রুবেলের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল নিয়ে তার গতিবিধি লক্ষ করতে থাকে। হাবিব ও আলিফ চাপাতি নিয়ে রুবেলের বাড়ির সামনে অবস্থান নেন। মেহেদী হাসান ও সানি দুই পাশে লোকজনের পাহারায় থাকেন। রুবেল রিকশাযোগে বাসার দিকে রওনা দিলে অন্যরা মোটরসাইকেল চালিয়ে তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। আর হাবিব ও আলিফ প্রস্তুত থাকেন চাপাতি নিয়ে। ইতোমধ্যে রুবেলকে রিকশায় দেখতে পেয়ে হাবিব ও আলিফ চাপাতি নিয়ে এগিয়ে যান। রুবেল দৌড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলে পেছন থেকে হাবিব ও আলিফ তাকে ধাওয়া করেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাথায় আলিফ চাপাতি দিয়ে কোপ দিলে রুবেল মাটিতে পড়ে যান। এ সময় হাবিব ও আলিফ চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। হত্যায় অংশ নেওয়া অন্য চারজনও দৌড়ে পালিয়ে যান। পালানোর সময় চাপাতি রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে যান। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রুবেল। এদিকে একই ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দীন আহমেদ কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পানির ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চেষ্টা করছিলেন রুবেল। এর বাইরে এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাহজালাল নামের একজনের সঙ্গে তার শত্রুতা তৈরি হয়। এ শত্রুতার কারণেই ঘটনার আগের দিন মালিবাগ পিডব্লিউডি সরকারি কলোনির মাঠে শাহজালালের নির্দেশে হাবিব, সানি, আলিফ, শাকিল, আসিফ এবং আরও কয়েকজন মিলে রুবেলকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। পরদিন ২০ জুলাই দিবাগত রাত ১১টার দিকে রুবেল বাসায় ফেরার পথে তার গলির মুখে অবস্থান নেন গ্রেফতার আসিফ ও শাকিল। এ দুজনের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, রুবেলকে হত্যার জন্য হাবিবকে দায়িত্ব দেন শাহজালাল। শাকিল ও আসিফ কিলিং মিশনে সক্রিয় অংশগ্রহণের পর দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে নিজ নিজ বাসায় চলে যান। পরদিন টঙ্গীতে এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে গা ঢাকা দেন শাকিল। আর অন্যরা কুমিল্লায় পালিয়ে যান।

সর্বশেষ খবর