মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

একমাত্র পথ বিএনপির নির্বাচনে ফিরে আসা

ড. হারুন-অর রশিদ

একমাত্র পথ বিএনপির নির্বাচনে ফিরে আসা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেছেন, বিএনপির একদফা হটকারী সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন ভেঙে দেওয়া, নতুন কমিশন গঠনের দাবির মধ্য দিয়ে তারা আলোচনার পথ বন্ধ করেছে। আদর্শিক বিভাজন থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনা হতে পারত। কিন্তু বিএনপিই এ পথ বন্ধ করেছে। রাজনৈতিক যে অবস্থা চলছে, তা সমাধানের একমাত্র পথ তাদের নির্বাচনে ফিরে আসা। জনগণের ম্যান্ডেড নেওয়া।

গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে বর্তমান রাজনীতির অবস্থা নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। দুই দলের মুখোমুখি অবস্থান- রাজনৈতিক সমাধান কী? জানতে চাওয়া হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হারুন-অর রশিদ বলেন, রাজনৈতিক সমাধানের পথ একটাই আছে, বিএনপিকে নির্বাচনে ফিরে আসতে হবে। তাদের ৩১ দফা দাবি নিয়ে জগণের ম্যান্ডেড নিতে হবে। জনগণ যদি তাদের দাবি গ্রহণ করে ম্যান্ডেড দেয়, তাহলে তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসবে, আর না দিলে বিএনপিকেই পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে হবে। কিন্তু রাস্তায় আন্দোলন করে তাদের দাবি-দাওয়া পূরণ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) মনে করেছিল বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু সেটা হয়নি। এখন তারা বলছে, বিদেশিদের দরকার নেই। রাজপথেই সব সমাধান হবে। এত শক্তি বিএনপির নেই যে তারা রাজপথে সব লক্ষ্য অর্জন করে ফেলবে। বিএনপির সামনে দুটি পথ খোলা, একটা হবে ২০১৪ সালের মতো ফিরে যাওয়া, নির্বাচন বর্জন করা। কিন্তু এটা হবে চরম আত্মঘাতী। এতে করে জনগণ থেকে আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। অন্যদিকে আছে, ৩১ দফা নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়া, নির্বাচনে ম্যান্ডেড নেওয়া।

ড. হারুন-অর রশিদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি দুটো ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলমান। নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলন ঘনিভূত হয়। এখনো তাই হচ্ছে। কিন্তু বিএনপির একদফার আন্দোলনের ডাক দিয়ে আলোচনার পথ বন্ধ করেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির আদর্শিক বিভাজন সত্ত্বেও নির্বাচন ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু একদফা দিয়ে সে পথ বন্ধ করেছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। সংসদ ভেঙে দিতে বলেছে। নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন কমিশন গঠন করতে বলেছে। এসব দাবি বাস্তবায়নের কোনো সম্ভবনা নেই। তাদের মানুষের প্রতি আস্থা নেই। জনগণের ব্যাপক সমর্থন নেই। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষিত ছয় দফাও আমাদের সামনে একটা শিক্ষণীয়। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দিয়ে ছয় বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল একটা- সেটা হলো দেশের স্বাধীনতা। এ জন্য কিন্তু দীর্ঘ ছয় বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। এরপর ’৬৯ সালের গণ অভ্যূত্থান, ’৭০ সালের নির্বাচনের পর স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আর বিএনপি কয়েক মাস আন্দোলন করেই এক দফায় চলে গেল? বিএনপির এক দফা হটকারী। আলোচনার সব পথ বন্ধ করেছে। হারুন-অর রশিদ বলেন, এবার ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। সবাই ভোট দিতে পারবে। কয়েকটি সিটি ভোট, গাইবান্ধা উপনির্বাচন, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন দেখে বোঝা যায়, এবার ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। জনগণ পছন্দের ব্যক্তি বা প্রতীককে ভোট দিতে পারবে। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন কমিশন নতুন করে গঠন করতে বলেছে, তাদের কথা কে শুনবে? তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন কি এর চেয়ে ভালো নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল? তারা যে অপকর্ম করেছিল, সেগুলো কি দেশের মানুষ ভুলে গেছে? তারা আন্দোলনের ডাক দেবে, জনগণ ঝাপিয়ে পড়বে? এটা হবে না।

তাহলে কি সংঘাত না সমঝোতা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কী হবে, সময়ই বলে দেবে। তবে সরকার এখন পর্যন্ত সহনশীল আছে। আর বিএনপিও যে সহজেই সংঘাতে জড়াবে এমনটাও মনে হয় না। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে ততই স্মায়ুচাপ বাড়বে। বিএনপির উচিত জনগণের কাছে যাওয়া। ম্যান্ডেড নেওয়া। এভাবে আন্দোলন করে কোনো অর্জন হবে না।

সর্বশেষ খবর