মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাময়িকীতে মন্তব্য

শ্রিংলা : নিজেকে সুপ্ত করে রাখা এক পাওয়ার হাউস

প্রতিদিন ডেস্ক

শ্রিংলা : নিজেকে সুপ্ত করে রাখা এক পাওয়ার হাউস

ভারতের সভাপতিত্বে দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে (৯-১০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠেয় শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি২০-এর শীর্ষ সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে তাকে। তিনি হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। নিজেকে সুপ্ত করে রাখা এক পাওয়ার হাউস (শক্তি উদ্দীপক) তিনি। এ মন্তব্য করেছেন ঔপন্যাসিক-কলামিস্ট শোভা দে। ভারতীয় সাময়িকী ‘দ্য উইক’-এ ‘দ্য রাইজ অ্যান্ড রাইজ অব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা’ শীর্ষক নিবন্ধে শোভা দে তাঁর সঙ্গে শ্রিংলার দীর্ঘকালের জানাশোনা এবং মিথস্ক্রিয়ার মুগ্ধকর বর্ণনা দিয়েছেন। কূটনীতিক শ্রিংলা ছিলেন ভারতের ৩৩তম পররাষ্ট্র সচিব। তার আগে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রাষ্ট্রদূত। এর আগে বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার। শোভা দে লিখেছেন : হর্ষবর্ধন শ্রিংলার টানা ও চমৎকার উত্থান কোনো দৈবক্রমিক ঘটনা নয়। মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসে ঢোকেন। তার আগে ছিলেন করপোরেট চাকুরে। করপোরেট চাকরির আরাম-বিলাসের চেয়ে কূটনীতির কঠোরতাকে প্রাধান্য দিয়ে চলে এলেন পররাষ্ট্র পরিষেবায়। এখানে যোগদানের সময় থেকেই তিনি ভারতের নীতিকে সব সময় সঠিক দিকে পরিচালিত করেছেন। ২৬ বছর বয়সেই সর্বকনিষ্ঠ ভারতীয় কনসাল জেনারেল হিসেবে যোগ দেন ভিয়েতনামে। মাত্র নয় বছর বয়সে সুদূর আজমিরের এক বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হন। তাঁর দূরদর্শী বাবা মনে করেছিলেন, ছেলেকে প্রিয় দার্জিলিং থেকে দূরে রাখলে তাঁর অর্জিত শিক্ষা ভালো কাজে আসবে। স্পষ্টতই হর্ষবর্ধন শ্রিংলার জন্য এটি ছিল সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত। ভারতের বিশিষ্ট পররাষ্ট্র সচিব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তাঁর কার্যকলাপ দেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেশ মুগ্ধ হন। ফলত ভারতে অনুষ্ঠেয় জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে শ্রিংলার নাম ঘোষণা করা হয়। একদিন আমি মুম্বাইয়ের গেটওয়ে হাউসে কূটনীতিকে ঠাসা একটি আলোচনায় আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। বৈদেশিক নীতি থিঙ্কট্যাঙ্কের কয়েকজন বন্ধুও সেখানে ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করছিলেন মনোজিৎ কৃপালানি। ওই আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলাও। তাঁকে কী বলে সম্বোধন করব, তা নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলাম। তাই আমি তাঁকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করি কোন সম্বোধনে তিনি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। তিনি খুব সহজ করে বললেন, ‘আমাকে হর্ষ বলেই সম্বোধন করুন...’। আমি আসলে হর্ষকে তাঁর আগের পোস্টিং থেকেই জানতাম, বিশেষত যখন থাইল্যান্ডে তিনি কনসাল জেনারেল ছিলেন। খুব সহজেই সাক্ষাৎ পাওয়া এবং সহায়ক মনোভাবের জন্য স্থানীয়রা বেশ পছন্দ করতেন তাঁকে। ভারতের একটি উৎসবে তিনি সদয়ভাবে কয়েকজন লেখককে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে আমিও ছিলাম। তিনি তাঁর স্ত্রী হেমালকে নিয়েই আমাদের সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা আমাদের ব্যাংককে একটি সুন্দর নাইট ক্রুজে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে আমরা নদীর ধারে মনোরম দৃশ্য উপভোগ করেছি। সেখানে লেখকদের আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপারগুলো হয়ে গেলে তাঁরা (লেখকরা) কিছুটা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সময় এমন শান্ত-সুস্থির হর্ষর আবির্ভাবে। তখন কেউ তাকে ‘বন্ধুত্বের শাহেনশাহ’ বলে আখ্যা দিলেন। আবার কেউ বললেন, ‘তিনি সবচেয়ে মাটিঘেঁষা কূটনীতিক। আর সেজন্যই তিনি সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়।’

এসব তো বোঝাই যায়। তবে ভুল করবেন না। বাইরে বুদ্ধসদৃশ ভাবচ্ছবির পেছনে রয়েছে তীক্ষè, চতুর মস্তিষ্কের একজন প্রতিযোগিতামূলক এবং যোগ্য, প্রত্যক্ষ এক কূটনীতিক, যিনি প্রয়োজনে হার্ডবল খেলতেও রাজি। আমাদের যোগাযোগ অত্যন্ত আকর্ষক এবং তথ্য আদানপ্রদানমূলক, আমাদের প্রতিবেশী এবং এর বাইরের বিশ্বের সঙ্গে ভারতের নীতির বিষয়ে প্রশ্নগুলোর জবাবে ব্যাখ্যামূলক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন হর্ষ। এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হর্ষ স্পষ্টতই বেশ প্রভাবিত করেছিলেন। তাই রাষ্ট্রদূত হিসেবে তাঁর মেয়াদ শেষে তাঁকে উষ্ণ বিদায়ের জন্য হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কূটনীতিক হিসেবে হর্ষবর্ধন শ্রিংলার বিস্তর অভিজ্ঞতা; এসব অভিজ্ঞতা বর্ণনার সময় তাঁর মন খুলে কথা বলার ভঙ্গিটি মুগ্ধকর। অনেকের সঙ্গেই এ ধরনের কথা হয়েছে। কিন্তু হর্ষের সঙ্গে আমার এ যোগাযোগটা সহজ ছিল। কেননা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সময় নেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিষয়টিকে আরও সহজ করে তোলেন; যার ফলে তাঁর সঙ্গে সংলাপ হয়ে ওঠে ‘অর্থপূর্ণ’। সেখানে কোনো বিতর্ক ছিল না। আমরা সেখানে দীপমালা রোকা রচিত প্রকাশিত জীবনী ‘নট অ্যান অ্যাকসিডেন্টাল রাইজ’ নিয়ে আলোচনা করছিলাম। তখনও অনেক বিষয় অবতারণার বাকি ছিল। আমরা অনেক সময় ব্যয় করে ফেলেছিলাম। সে সময় আমার কাছ থেকে চূড়ান্ত একটি প্রশ্ন ছিল। ঠিক করলাম যে, আগের আলোচনার গতি অন্যদিকে ফেরানোর জন্য প্রশ্নটা একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে তুলব। বললাম, ‘চলতি দুনিয়ায় আরও শক্ত-নাকযুক্ত মহাবিশ্বে শ্যাম্পেন পান ও ভোজন উৎসবে শহুরে কূটনীতিকদের মেতে থাকবার দিন কি শেষ হয়ে গেছে?’ প্রশ্ন শুনে হাসিতে ফেটে পড়লেন হর্ষ। ভেবেছিলাম, তিনি আমাদের আশ্বস্ত করবেন যে, আন্তর্জাতিক কূটনীতির দুর্লভ বিশ্ব থেকে গ্ল্যামার পুরোপুরি চলে যায়নি। কিন্তু তিনি আমার সবচেয়ে খারাপ সন্দেহটিই নিশ্চিত করলেন। বললেন, ‘কাজই সব, আজকাল এর বাইরে কোনো খেলা নেই।’ শোভা দে তাঁর লেখার শেষ দিকে হর্ষবর্ধনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি কোথায়, ০০৭, যখন আপনাকে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমি অবশ্যই কাসাব্লাঙ্কার কোনো পানশালায় হর্ষের সঙ্গে মার্টিনির গ্লাসে চুমুক দেওয়ার স্বপ্ন দেখি। ঝাঁকিয়ে নেওয়া মার্টিনি উপচে পড়বে পড়বে মতো নয়, অবশ্যই!’

সর্বশেষ খবর