মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা

দুই দেহরক্ষীসহ হিন্দাল শারক্বীয়ার আমির গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

টার্গেট কিলিংয়ের পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’। সে অনুযায়ী পাহাড় ছেড়ে সমতলে অবস্থান নিয়েছিলেন সংগঠনটির আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আত্মগোপনের জন্য দুই দেহরক্ষীসহ গিয়েছিলেন মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে। তবে তার সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে র‌্যাবের কারণে। রবিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০-এর একটি দল মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সেই বাড়িতে অভিযান চালায়। গ্রেফতার করে আনিসুরসহ তার দুই দেহরক্ষীকে। তারা হলেন- কাজী সরাজ উদ্দিন ওরফে সিরাজ ও মাহফুজুর রহমান বিজয় ওরফে বাবুল ওরফে জাম্বুলি। টার্গেট কিলিংয়ের মতো ভয়ংকর পরিকল্পনা ছিল তাদের।

গতকাল সকালে কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের অবহিত করেন বাহিনীর মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’কে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি শক্তিশালী জঙ্গি সংগঠন বানাতে চেয়েছিলেন মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ। সংগঠনকে সংগঠিত করে টার্গেট কিলিংয়েরও পরিকল্পনা ছিল তার। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল অন্যতম। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রবাদী বই জব্দ করা হয়। এ ছাড়া আনিসুরের কাছে যে অস্ত্র ছিল সেটি তার আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করতেন। তাদের প্রশিক্ষণের বিভিন্ন কৌশল দেখে মনে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের নাশকতার মাধ্যমে সংগঠনের জানান দিতে চেয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে খন্দকার মঈন বলেন, আনিসুর মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের একটি সিএনজি রিফুয়েলিং পাম্পে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি ইতিপূর্বে হুজির সদস্য ছিলেন। পরে তার সঙ্গে কুমিল্লার একটি রেস্টুরেন্টে আনসার আল ইসলামের রক্সি ও ফেলানীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে তারা যাত্রাবাড়ীতে একটি মিটিং করে নতুন একটি সংগঠন তৈরি ও বিস্তারের পরিকল্পনা করে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার কার্যক্রম শুরু করে।

তিনি বলেন, আনিসুর রহমান ২০১৬ সাল পরবর্তী বিভিন্ন সময় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। ২০২০ সালে বান্দরবানের গহিন এলাকায় আসলাম নামক এক ব্যক্তির কাছে প্রায় এক মাস সামরিক কৌশল, অস্ত্র চালনা, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কুমিল্লায় তার বাড়ি জমিসহ বিক্রি করে দেন, এর মধ্যে কিছু টাকা তিনি সংগঠনে দান করেন। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে সাড়ে ৩ বিঘা জমি কিনে ওই বছরই সেখানে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং পোলট্রি ফার্ম, চাষাবাদ ও গবাদি পশুর খামার পরিচালনা করতেন। তিনি আরও বলেন, আনিসুরের আগে নতুন জঙ্গি সংগঠনটির আমির ছিলেন মাইনুল ইসলাম ওরফে রক্সি। ২০২১ সালে রক্সি গ্রেফতার হলে আনিসুর রহমানকে আমির করা হয়। কেএনএফ প্রধান নাথান বম ও সেকেন্ড ইন কমান্ড বাংচুংয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয় আনিসুরের। পরে তাদের মধ্যে পাহাড়ে জামাতুল আনসারের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে চুক্তি হয়। কেএনএফ প্রধান নাথান বম পার্শ্ববর্তী দেশের মিজোরামে অবস্থান করছে। বিভিন্ন সময়ে কেএনএফের হামলা ও আক্রমণের বিষয়ে তার ইন্ধন থাকতে পারে। টাঙ্গাইল, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনের পর ৭-১০ দিন আগে তিনি মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে একটি বাসা ভাড়া নেয় ও সংগঠনের বেশ কিছু সদস্য নিয়মিত বাসায় আসা-যাওয়া করত। নিরাপত্তার জন্য তিনি সবসময় তার সঙ্গে দুজন সশস্ত্র দেহরক্ষী রাখতেন। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কেএনএফ ২০২৩ সাল পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেবে। এর বিনিময়ে কেএনএফকে ৩-৪ লাখ টাকা দিত তারা। এই টাকা দিতে জঙ্গি সংগঠন দেশ-বিদেশে অর্থ সংগ্রহ শুরু করে। আমিরের নির্দেশে কেএনএফ থেকে ১৭ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের ভারী অস্ত্র ও বিদেশি অগ্নেয়াস্ত্র কিনে সংগঠনটি। এই অস্ত্র ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ নিত। এ ছাড়া মাহমুদের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থানে আনসার হাউস তৈরি এবং পরিচালিত হতো। পলাতক জঙ্গি নেতা চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার সঙ্গে মাহমুদের একাধিকবার দেখা হয়েছে জানিয়ে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, আমির মাহমুদের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের নেতাদের সুসম্পর্ক ছিল। শীর্ষ জঙ্গি চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার সঙ্গে তার বেশ কয়েকবার পাহাড়ে দেখা হয়েছিল। ২০২২ সালে কিশোরগঞ্জে আনসার আল ইসলামের সঙ্গে একটি মিটিংয়ে মাহমুদের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আনসার আল ইসলাম মাহমুদকে ১৫ লাখ টাকা দেয়।

সর্বশেষ খবর