বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

সতর্ক ১৩ রাষ্ট্রদূতকে

অকূটনৈতিক আচরণ থেকে বিরত থাকতে বলল সরকার

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতিদাতা ১৩ জন বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে সরকার বলছে, তাদের এ কাজে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন হয়েছে। তাদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, সরকারকে পাশ কাটিয়ে বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাতহীনতা বর্জিত আচরণ কেবলই পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি করবে। গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ১২ দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারকে ডেকে সরকারের এ অসন্তোষের কথা জানানো হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতদের কাছে বক্তব্য উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খোরশেদ আলমসহ পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা। কিছু সময়ের জন্য উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৭ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত। উপস্থিত ছিলেন ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং নরওয়ের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার। ছিলেন ইতালি, সুইডেন ও ডেনমার্ক দূতাবাসের প্রতিনিধি। পরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা তলব নয়, তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে এর আগে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধিকে তলব করা হয়েছিল। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। তিন-চার জন রাষ্ট্রদূত তাদের পক্ষ থেকে অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। সরকারের বক্তব্য দেশগুলোর সদর দফতরেও পাঠানো হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে লিখিত বার্তায় বলেন, ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমকে কেন্দ্র করে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে ঢাকাস্থ যেসব দূতাবাস গণমাধ্যমে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল, তাদের রাষ্ট্রদূতদের আমরা ডেকেছিলাম। তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণে আমরা আমাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা দিয়ে সারা দিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। কারণ ওই নির্বাচনে সহিংসতা হয়নি। আশরাফুল আলম সারা দিন গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে অবাধে বিচরণ করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। ভোট শেষ হওয়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনিও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হননি বা কোনো অভিযোগ করেননি। অন্য প্রার্থীরাও কোনো ধরনের সহিংসতা বা কোনো অনিয়মের অভিযোগ করেননি। তাই শুধু একটি কেন্দ্রের শেষ মুহূর্তের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে গুটিকয় কূটনীতিক যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তা কখনোই সারা দিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রতিফলিত করে না। দ্রুত একটি প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তারা তাদের মূল্যায়নটির বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেননি।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঘটনা সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন কমিশন এবং সরকার দ্রুত ও আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। ১৯ জুলাই কূটনীতিকদের বিবৃতি দেওয়ার অনেক আগেই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ১৮ জুলাই আপনারাও তা মিডিয়ায় প্রকাশ করেছিলেন। অথচ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরও এই কূটনীতিকরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন; যা অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়। সত্যি বলতে, যে দ্রুততা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ঘটনাটির সমালোচনা তারা করেছেন, সেই গুরুত্ব ও দ্রুততার সঙ্গে কিন্তু তারা সরকারের গৃহীত তাৎক্ষণিক ও ত্বরিত আইনি ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করেননি। তাই যৌথ বিবৃতিটির বস্তুনিষ্ঠতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনার অবকাশ থেকেই যায়। আবার যাকে কেন্দ্র করে এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাটি ঘটল সেই আলম কিন্তু ঠিকই পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন এবং সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাৎক্ষণিক উদ্যোগ এবং ব্যবস্থা গ্রহণকে সাধুবাদ জানিয়ে পূর্ণ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রদূতদের যৌথ বিবৃতিটি যে ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে যথাসময়ের অনেক আগেই তড়িঘড়ি করে অপরিণতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, আশা করি আমাদের আলোচনার পর তারা তা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন অকূটনৈতিক আচরণ থেকে বিরত থাকবেন। এ কারণে আমরা তাদের কূটনৈতিক আচরণবিধি সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন স্মরণ করিয়ে দিয়ে গঠনমূলক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি এও সতর্ক করা হয়েছে যে, সরকারকে পাশ কাটিয়ে বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাতহীনতা বর্জিত আচরণ কেবলই পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি করবে। বৈঠকে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রদূতদের কারও কোনো প্রতিক্রিয়া জানার সুযোগ সাংবাদিকদের হয়নি। কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া কী ছিল- এ প্রশ্নে শাহরিয়ার বলেন, এটার পরিপ্রেক্ষিতে যে চার-পাঁচ জন কথা বলেছেন, তারা মূলত ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন যে, এটা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করা হয়নি। তারা আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করার জন্য করেছেন। তারা মনে করেছেন যে, এটি আমাদের সঙ্গে কন্টিনিউয়াস অ্যাঙ্গেজমেন্ট আছে, এটাই ধারাবাহিকতার অংশ। তাদের এ যুক্তি খন্ডন করেছেন জানিয়ে শাহরিয়ার বলেন, ভিয়েনা কনভেনশনে পরিষ্কার বলা আছে, যে কোনো রাষ্ট্রদূতের প্রথম যোগাযোগের জায়গা হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গণমাধ্যমের সঙ্গে তাদের কথা, তাদের যোগাযোগ আমরা সব সময় সাধুবাদ জানাই। কিন্তু কোনো বিষয়েই প্রথম তাদের উচিত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে আমাদের তা জানানো। সে ক্ষেত্রে তারা এ কাজটি যথাযথ করেননি। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এতে কোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্কের সংকট হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর