বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদেশি খেলোয়াড়দের খেলতে দেওয়া যাবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশি খেলোয়াড়দের খেলতে দেওয়া যাবে না : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি নির্বাচনে না এসে তাদের বিদেশি প্রভুদের দিয়ে দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই খেলোয়াড়দের (বিদেশি) খেলতে দেওয়া যাবে না।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রোমের পারকো ডেই প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেলে এক নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচন হলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। কাজেই তারা নির্বাচন চায় না। তারা  কিছু বিদেশি প্রভুর পদলেহন করে। পদলেহন করে তাদের দিয়ে দেশের মানুষকে কষ্ট দিতে চায়। আজ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে গতিধারা সেটাকে ব্যাহত করতে চায়। কারণ ক্ষমতায় থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বানিয়ে যে লোভ এসে গেছে, ওইটাই তাদের কাছে সবচেয়ে বড়। তিনি বলেন, ওরা তো ক্ষমতায় ছিল। অবৈধভাবে জিয়াউর রহমান এসেছে। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এরশাদ এসেছে, এরপর খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে এসেছে। তারা এ দেশের কল্যাণ কোনো দিন চায়নি। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। তারা ভোটে মানুষের কাছে দাঁড়াতে পারেনি। তারা চায় এ দেশে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হবে এবং সেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা। এটাই তাদের উদ্দেশ্য। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অশুভ শক্তির পদচারণ থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। বিএনপি কোন মুখে জনগণের কাছে ভোট চাইবে প্রশ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসে আর্মি রুলস লঙ্ঘন করে সেনাপ্রধান, আবার নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন। ঘোষণা দিয়ে তার রাজনীতি শুরু। ওই অবস্থায় হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি ভোট, সব ভোটই তো ভুয়া! এভাবে চুরি করে করেই তো... সেই জেনারেলের পকেট থেকে যে দলের সৃষ্টি, জনগণের কাছে যাওয়ার তাদের মুখটা কোথায়! আর অগ্নিসন্ত্রাস করে যাদের হত্যা করেছে, তাদের সামনে তারা কোন মুখে ভোট চাইবে!

জঙ্গি সৃষ্টি করে কারা : সন্ত্রাস-জঙ্গি দমনে র?্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয়, এর পরও কেউ কেউ নিষেধাজ্ঞা দেয়। যাদের দ্বারা আমরা সন্ত্রাস দূর করলাম, যাদের দ্বারা আমরা জঙ্গিবাদ দমন করলাম তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, এর রহস্য তো বুঝলাম না। বিষয়টি কী? তাহলে এই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসটা কারা সৃষ্টি করে? সেটাই তো আমাদের প্রশ্ন। তিনি বলেন, আবার কথায় কথায় হুমকি ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবে। আমি সেটা বলেছিলাম, মহাদেশ তো আর একটাই না পৃথিবীতে। আর আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে না গেলে আমাদের কিছু হবে না। আরও মহাদেশ আছে, মহাসাগর আছে। শেখ হাসিনা বলেন, আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে যে, আমরা দেশ স্বাধীন করেছি মুক্তিযুদ্ধে। যাদের সমর্থন পাইনি তারা এখন নানাভাবে আমাদের দেশকে নিয়ে খেলতে চায়। তো এই খেলোয়াড়দের খেলতে দেওয়া যাবে না।

করো আন্দোলন, দেখি কত জোর : বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ক্ষমতায় থাকতে যত চোরা টাকা রেখেছে বাইরে, সেগুলো দিয়েই এখন আন্দোলন... আন্দোলন করে নাকি সরকার উৎখাত করবে। তো আমরাও ছেড়ে দিয়েছি যে, ঠিক আছে, করো আন্দোলন, দেখি কত জোর! তিনি বলেন, তার দল ও সরকার আন্দোলন করতে কাউকে বাধা দিচ্ছে না। কিন্তু তারা তো মাঠেই নামতে দিত না। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ অফিসে কোনো দিন যেতে পারতাম না, আমাদের নেতা-কর্মীরা যেতে পারত না। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতা-কর্মীকে বিএনপি হত্যা করেছে। কারও চোখ তুলে নিয়েছে, কারও হাত কেটে নিয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেছে। কী না অত্যাচার করেছে! আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী কত না সহ্য করেছে! আগামীতে আবার নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য- ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের বদ্বীপটাকে উন্নত, বদ্বীপের অধিবাসী প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে তারা যেন সুন্দরভাবে থাকতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়ে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছি। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি এবং বাস্তবায়নের কাজও শুরু করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যে কাজগুলো আমরা হাতে নিয়েছি সেগুলো সম্পন্ন করতে হলে আওয়ামী লীগকে আবারও সরকারে আসতে হবে। এজন্য দরকার দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস আর ভোট। তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, নৌকায় ভোট দিয়ে খাদ্যনিরাপত্তা পেয়েছে, নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে যে স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে এটার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে, বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়তে হলে আবার নৌকা মার্কায় ভোট চাই।

দেশের পথে প্রধানমন্ত্রী : ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত ফুড সিস্টেম সামিট শেষে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে রোমের ফিউমিসিনো বিমানবন্দর থেকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশের উদ্দেশে রওনা হন। দোহায় ট্রানজিট বিরতির পর কাতার এয়ারওয়েজের আরেকটি ফ্লাইটে ঢাকা পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এর আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আয়োজিত ফুড সিস্টেম সামিটে যোগ দিতে রবিবার (২৩ জুলাই) স্থানীয় সময় বিকালে ইতালির রোম আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে জাতিসংঘের ফুড সিস্টেম সামিটে অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক বিনিময় বিষয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক বিনিময় হয়। এ ছাড়া রোম সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল, ইতালির তিন মন্ত্রী- কৃষিমন্ত্রী ফ্রান্সেস্কো ললোব্রিগিদা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাতেও পিয়ান্তেডোসি এবং বিচারমন্ত্রী কার্লো নর্দিও, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মহাপরিচালক কিউ দোঙ্গিউ, ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড অব এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের (আইএফএডি) প্রেসিডেন্ট আলভারো ল্যারিওর সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আঞ্চলিক দূত সম্মেলনে অংশ নেন। এ ছাড়া তিনি ইতালিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর