শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে মৃতের ৫৬ শতাংশই শিশু

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত সাড়ে পাঁচ মাস বয়সী এক শিশুকে মা-শিশু জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম (প্রেশার কমে যাওয়া, মাথা ঘোরানো ও শরীরে পানি কমে যাওয়া) দেখা দেওয়ায় তাকে স্থানান্তর করা হয় আইসিইউতে। পরে অভিভাবক আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই শিশুটিকে বেসরকারি  একটি হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। শিশুটির শারীরিক অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন বলে জানা যায়। সূত্র জানান, চট্টগ্রামে শিশুরা বেশি মাত্রায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ছয় থেকে ১৪ বছরের শিশু রোগীর দ্রুত সংকটাপন্ন অবস্থা তৈরির প্রবণতা বেশি। চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশই শিশু। আর আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর মধ্যে শিশু ৫৬ শতাংশ। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় ২ হাজার ৪০৯ জন। এর মধ্যে শিশু ৬১৩ জন, ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। পুরুষ আক্রান্ত হয় ১ হাজার ১১০ ও মহিলা ৬৮৬ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৫ জন। এর মধ্যে শিশু ১৪ জন, ৫৬ শতাংশ। আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর মধ্যে ছয়জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, শিশুরা কেন আক্রান্ত হচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, শিশুদের বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অনেক শিশু দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তখন মশায় কামড়ায়। বড়রা মশায় কামড়ালে বুঝতে পারলেও শিশুরা পারে না। স্কুলে অনেক বাচ্চা একসঙ্গে জটলা হয়ে বসলে একজনকে কামড়ালে সঙ্গে আরও অনেককেই কামড় দেয়। শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম বলে তাদের শারীরিক অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। তাই শিশুদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে রাখতে হবে। চট্টগ্রাম মা-শিশু জেনারেল হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিশু তালুকদার বলেন, এ হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত তিন শিশু রোগী আইসিইউ ও তিনজন এইচডিইউতে ভর্তি আছে। এবারের ডেঙ্গুর স্ট্রেইনটি বেশ গুরুতর হওয়ায় শিশুদের শারীরিক অবস্থা দ্রুত খারাপ হচ্ছে, প্রেশার কমে যাচ্ছে, নিতে হচ্ছে আইসিইউতে। লক্ষণীয় হলো, অতীতে একবার ডেঙ্গু আক্রান্তরা আবার আক্রান্ত হলে দ্রুতই খারাপ হওয়ার প্রবণতাটা বেশি দেখা যাচ্ছে। ছয়-১৪ বছর বয়সী শিশুরাই বেশি সংকটাপন্ন। তা ছাড়া শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম। ইতোমধ্যে যাদের দেখেছি, তার অধিকাংশই মধ্যবিত্ত বা উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের। যাদের ঘরে জমানো পানি থাকার সম্ভাবনা খুব বেশি। বিশেষ করে ঘরে আর ছাদে জমানো পানি বা এডিস মশার লার্ভা প্রজননের উপযুক্ত স্থান রয়েছে। তবে তারা সবাই মশারি ব্যবহার করত। কারও বাসায় হয়তো মশার তেমন উপদ্রব ছিল না। সূত্র জানান, চট্টগ্রামে ২৭ জুলাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় ৫৭, ২৬ জুলাই ১১১, ২৫ জুলাই ১১৪, ২৪ জুলাই ৯৩, ২৩ জুলাই ১১১ এবং ২২ জুলাই ১৪৩ জন।

সর্বশেষ খবর