শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিচার বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে তাঁর সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফলে ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের বিশ্বাস এবং আস্থা আছে যে, তারা অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবে।’ সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গতকাল এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (এসসি) প্রাঙ্গণে ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন করেন। খবর বাসস

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কার্যক্রম উদ্বোধনের পর যেখান থেকে ভাষণ দিয়েছিলেন সেই স্থানটিকে সংরক্ষণের লক্ষ্যে স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে দেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ৬৯ জন আইনজীবীর নাম স্মৃতিস্তম্ভে খোদাই করা আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত ইতোমধ্যে তাঁর কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করেছে এবং অনলাইনে মামলার কার্যতালিকা, রায় ও মামলার বিবরণ রয়েছে। যার মাধ্যমে কেউ বিদেশে অবস্থান করেও তার মামলার বর্তমান পরিস্থিতি জানতে পারবেন। তিনি বলেন, তার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট দেশে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বিচার বিভাগকে স্মার্ট করার পথে বেশ এগিয়ে থাকায় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ করে প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ভার্চুয়াল আদালত স্থাপন করেছে যা উল্লেখযোগ্য হারে মামলার বিশাল জট কমাতে সহায়তা করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তাঁরা দেশের সব আদালতে দরিদ্র ও অসচ্ছল বাদী-বিবাদীদের জন্য আইনি সহায়তা চালু করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এসব ব্যবস্থা ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ সহজ করেছে।’ একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের রেকর্ড ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রকাশনা ‘আমাদের বিচারালয়’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের যাত্রার ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজউদ্দিন ফকির। শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের হত্যার বিচার করার মাধ্যমে তাঁর সরকার অপরাধীদের রেহাই দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসেছে। সামরিক একনায়ক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রেহাই দিতেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে এবং তাদের বিদেশি মিশনে চাকরি দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতার শুরু করা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যও তিনি বন্ধ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচার পেতে আমার ৩৫ বছর লেগেছে এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর আমি এটি পেয়েছি।’ যারা এ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলে তাকে সহায়তা করে বিচার শুরুর পথ খুলে দেন তিনি সেই বিচারক ও আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংবিধানের ১৫তম সংশোধন অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের জন্যও প্রধানমন্ত্রী বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানান। ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয় এবং গণতন্ত্রের পথ হয় মসৃণ। ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মৃতিস্তম্ভের উদ্বোধন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করতে (এসসি প্রাঙ্গণ) উপস্থিত হতে পেরেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন স্নাতকদের জন্য বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে দেশে আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁর সরকার ইতোমধ্যে আইনজীবীদের অফিসের জন্য এসসি প্রাঙ্গণে ১৫ তলা বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণ করেছে। আইনজীবীদের সংখ্যা বাড়ার কারণে আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হবে বলে তিনি জানান। তবে তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এটি বাংলাদেশকেও আঘাত করছে। এ কারণে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির চাকা যেন কখনই থেমে না যায়, তা নিশ্চিত করতে আমাদের সবার সমর্থন দরকার।’ তিনি বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে।

সন্তানদের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের আরও মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গতকাল সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা-২০২৩-এর ফলাফল উন্মোচনকালে বলেন, ‘আপনার বাচ্চাদের অন্য ব্যক্তির বাচ্চাদের সঙ্গে তুলনা করবেন না বরং তাদের মেধা অনুযায়ী দক্ষতা বিকাশ করতে দিন।’

পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া সন্তানদের পড়ালেখায় অভিভাবকদের উদ্যোগ নেওয়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ‘তাদের তিরস্কার করবেন না, বরং তাদের আরও স্নেহ এবং ভালবাসা দিন যাতে তারা তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে। এর আগে তিনি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছ থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সম্মিলিত ফলাফলের পরিসংখ্যান গ্রহণের পর ফলাফল প্রকাশ করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সচিব সুলেমান খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ খবর