শিরোনাম
শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঢাকায় প্রবেশ পথে পথে তল্লাশি আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় প্রবেশপথগুলোসহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে এ তল্লাশি শুরু হয়, চলে গতকাল দুপুর পর্যন্ত। তল্লাশির সময় গাড়িতে ঢুকে, গাড়ি থেকে নামিয়ে নানা বিষয়ে জেরা করা হয় যাত্রীদের। অনেকের মোবাইল ফোন ঘেঁটে সমাবেশে যাচ্ছে কি না তার প্রমাণ খোঁজার চেষ্টা করে পুলিশ। আবদুল্লাহপুরে মোবাইল ফোন ঘেঁটে ৩০, বছিলা সেতুর কাছ থেকে ১৩, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু ও বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ৭২ জনকে আটক করা হয়। রূপগঞ্জে মাইক্রোবাস যাত্রীদের নাম-পরিচয়-মোবাইল ফোন নম্বর লিখে রেখে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বুড়িগঙ্গা নদীর খেয়াঘাটগুলোতে নৌকা চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে গতকাল গাড়ি চলাচল কম থাকায় দৈনন্দিন কাজে বের হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ঢাকার আবদুল্লাহপুর, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের চন্দ্রা ত্রিমোড় ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড ও রূপগঞ্জ, সাভার, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর ও কেরানীগঞ্জের খেয়াঘাট এলাকা থেকে পাওয়া তথ্যে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।

ঢাকার প্রবেশমুখ আবদুল্লাহপুর মোড়ে যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালায় পুলিশ। ওই বাসের রফিকুল ইসলাম নামের এক যাত্রীর দাবি, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি কোনো সভা-সমাবেশেও যান না। তবু বাসে তল্লাশির সময় তার ব্যাগ, মোবাইল ফোন তল্লাশি করা হয়েছে। তার ভাষ্য, তল্লাশির নামে এটা যাত্রী হয়রানি ছাড়া আর কিছু না। বৃহস্পতিবার রাতেও পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে অভিযান চালিয়ে ৪২২ জনকে গ্রেফতার করে। তবে পুলিশ বলছে, এর মধ্যে ৯০ জন পলিটিক্যাল অ্যারেস্ট (রাজনৈতিক গ্রেফতার)। বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় গ্রেফতার ব্যক্তিরা তাদের দলের নেতা-কর্মী। মহাসমাবেশে যোগ দিতে বাধা দিতেই পুলিশের এই গ্রেফতার অভিযান। এর আগে মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পুলিশ ৪৪৭ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপির অভিযোগ রাজনৈতিক। যারা আগুনসন্ত্রাস করেছেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে। 

মোবাইল ঘেঁটে আটক : রাজধানীর আবদুল্লাহপুরে গতকাল তল্লাশির সময় যাত্রীদের মোবাইল ফোন ঘেঁটে ৩০ জনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, আটক ব্যক্তিরা বিএনপির মহাসমাবেশে যাচ্ছিলেন। বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা থাকায় তাদের আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিদের দাবি, পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই তাদের আটক করেছে।

চন্দ্রা ত্রিমোড়, চান্দনা চৌরাস্তা, সাইনবোর্ড, সাভারে তল্লাশি : ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা ত্রিমোড়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় ঢাকামুখী গাড়িগুলোতে তল্লাশি করে পুলিশ। যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোতে পুলিশের তল্লাশির ফলে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। পুলিশের তল্লাশির কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় যানবাহন চলাচল কমে যায়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাব সুলতানা কামাল সেতু এলাকায় দেখা যায়, পুলিশ ঢাকামুখী বাস, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসে তল্লাশি ও যাত্রীদের কাছে ঢাকায় যাওয়ার কারণ জানতে চায়। অনেক যাত্রীর মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখে। ঢাকামুখী তিনটি মাইক্রোবাস থামিয়ে জেরা করলে যাত্রীরা বলেন, তারা ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে যাচ্ছেন। এরপর পুলিশ তাদের নাম-পরিচয় ও মোবাইল ফোন নম্বর লিখে রেখে বাড়িতে ফেরত পাঠায়। ঢাকার সাভারের আমিনবাজারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে, নবীনগর, হেমায়েতপুর, বিরুলিয়া, আশুলিয়ার ধউর, জিরানী, জিরাবো ও বাইপাইলে তল্লাশি করা হয়।

বুড়িগঙ্গায় নৌকায় পারাপার বন্ধ : ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদী পাড়ি দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের আগমন ঠেকাতে কয়েকটি খেয়াঘাটে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেন। সকাল থেকেই খেয়াঘাটগুলোতে নৌকা চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কেরানীগঞ্জের বছিলা সেতুর কাছে ঘাটারচর এলাকায়, বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর কাছে কদমতলী এলাকায় এবং ঢাকা-মাওয়া সড়কের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় ঢাকাগামী যানবাহনগুলোতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। পুলিশ জানায়, বছিলা সেতুর কাছ থেকে ১৩ জন এবং বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু এলাকা ও বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ৭২ জনকে আটক করা হয়েছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারের বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় পূর্ব আগানগর এলাকার আলম মার্কেট এলাকায় বুড়িগঙ্গার খেয়াঘাটে এসে দেখি নৌকা চলাচল বন্ধ। ঘাটে পুলিশ বসে আছে। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ঢাকায় দুটি দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধে তল্লাশি জোরালো করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-চট্টগাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বসানো হয় পুলিশের প্রায় অর্ধশত চেকপোস্ট। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ১৫ নেতা-কর্মীকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা। রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : তারাব এলাকার সুলতানা কামাল সেতু, পূর্বাচল উপশহরের ৩০০ ফিট এলাকা ও গোলাকান্দাইল মোড়ে তল্লাশি চালানো হয়। সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁয়ে কাঁচপুরে এলাকায় পুলিশের তল্লাশি চৌকি দেখা যায়। কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) : কেরানীগঞ্জ থেকে রাজধানীতে প্রবেশের তিনটি সেতুতেই গতকাল তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ।

সর্বশেষ খবর