সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজপথে আবার সংঘাত

বিএনপির ঢাকা প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ গুলি আগুন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজপথে আবার সংঘাত

রাজধানীতে পুলিশের গাড়িতে হামলা, বাসে আগুন ও সংঘর্ষ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আবারও সংঘাত শুরু হয়েছে রাজপথে। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়িতে।

এসব ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাত থানায় ১১টি মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ৪৬৯ জনকে। মামলাগুলোর এজাহারে আসামি হিসেবে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীসহ ৪৬৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ১৪৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা জেলার সাভার ও আশুলিয়া থানার তিনটি মামলায় ১০৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। 

ঢাকার পাঁচটি প্রবেশপথে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে ব্যাপক সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি, টিয়ার শেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ, গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, মাতুয়াইল, শনির আখড়া, নয়াবাজার (বাবুবাজার), উত্তরা এলাকা ছিল রীতিমতো রণক্ষেত্র। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানসহ ৩ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অর্ধশতাধিক। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক মামলা করা হয়েছে। একদিনেই বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদসহ ২১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষে রাজধানীর সাত থানায় ১১টি মামলা হয়।   

শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের কঠোর অবস্থান ছিল লক্ষণীয়। রাজধানীর অন্তত পাঁচটি জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। অন্যদিকে ‘সতর্ক পাহারার’ নামে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাও লাঠিসোঁটা নিয়ে কোনো কোনো জায়গায় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের এ ধরনের ভূমিকায় নতুন ডাইমেনশন ছিল-বিএনপির দুই সিনিয়র নেতার দুটি ঘটনা। ঘটনা দুটিা এখন মানুষের মুখে মুখে।

শুক্রবার লাখো মানুষের জমায়েতে ঢাকায় মহাসমাবেশ করার পরদিনই বিএনপি শনিবার রাজধানীর চারটি প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছিল। কিন্তু বিএনপির ঘোষিত জায়গাগুলোতে অবস্থান কর্মসূচিতে দলটির নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণ সেভাবে ছিল না। তারা বেশি সময় টিকে থাকতে পারেননি পুলিশের বাধা ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সতর্ক পাহারার মুখে। 

বিএনপি বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিলেও তারা কোনো কোনো জায়গায় আধা ঘণ্টা এবং কোনো জায়গায় ঘণ্টাখানেক সময় থাকতে পেরেছে। মাতুয়াইল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। মাতুয়াইল ও ধোলাইখাল এলাকায় পুলিশ কাঁদুনে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে।

ধোলাইখাল এলাকায় সংঘর্ষের সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং গাবতলীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমানউল্লাহ আমানসহ অনেকে আহত হয়েছেন। এ ঘটনাগুলো বিএনপির পক্ষে যাবে বলে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন। কিন্তু মহাসমাবেশে বড় জমায়েত করার পরদিনই বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল না। অল্প সময়ের মধ্যেই মাঠ ছেড়ে যেতে হয়েছে তাদের। এমন পরিস্থিতি নেতা-কর্মীদের মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, এই আলোচনাও দলটির কারও কারও মধ্যে রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, তারা এখন ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিনই ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচি রাখার পরিকল্পনা করেছেন। সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে রাজপথ-রেলপথ অবরোধ, সচিবালয় ঘেরাও, নির্বাচন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি বিবেচনায় রেখেছেন তারা। বিএনপি এখন একটি দিনও কর্মসূচির বাইরে রাখতে চায় না। সে জন্য তারা শনিবার পবিত্র আশুরার (বন্ধের) দিনেও অবস্থান কর্মসূচি নিয়েছিল। কিন্তু শনিবারের কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনার পর রবিবার বিরতি দিয়ে আজ সোমবার দেশের সব মহানগর ও জেলায় জেলায় জনসমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। শনিবার রাতে এই কর্মসূচি ঘোষণার সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু রবিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে, সে জন্য তারা একই দিনে কর্মসূচি দিচ্ছেন না। কারণ, তারা সংঘাত এড়াতে চান।

তবে শনিবার বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের ঘটনা ছাড়াও রাজধানীতে ছয়টি যাত্রীবাহী বাস আগুন দিয়ে পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার জন্য বিএনপি ও ক্ষমতাসীনরা পরস্পরকে দায়ী করেছে। কিন্তু বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, গত ডিসেম্বর থেকে তারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও পদযাত্রার মতো কর্মসূচি পালন করে আসছেন। শনিবারের অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতের ঘটনায় সরকার আবার বিএনপির বিরুদ্ধে পুরনো অভিযোগ আনার সুযোগ নেবে। আন্দোলনের এ পর্যায়ে এসে সরকারের ফাঁদে পা দেওয়া হলো কি না, এমন আলোচনা রয়েছে দলটির ভিতরে। তবে আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি বাসের ড্রাইভার গণমাধ্যমের সামনে বলেছেন যে, বাসটির দুই পাশেই অসংখ্য পুলিশ অস্ত্র নিয়ে দায়িত্ব পালন করছিল। তার মধ্যেই দুটি মোটরসাইকেলে করে কয়েকজন এসে বাসে আগুন দিয়ে চলে যায়। অথচ পুলিশ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, তাদের অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলো নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের ব্যাপারেই নেতিবাচক ধারণা হবে। এতে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

এত দিন বিএনপির সভা-সমাবেশ বা পদযাত্রাসহ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরকার সেভাবে বাধা দেয়নি। বরং অনেক কর্মসূচিতে পুলিশের নিরাপত্তাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শনিবারের অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশকে কঠোর অবস্থানে দেখা যায়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হতেই পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস, গুলি, বুলেটসহ সাঁজোয়া যান থেকে গরম পানি ব্যবহার পর্যন্ত কিছুই বাকি রাখেনি। শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অটল বিএনপি। রাজপথে দুই পক্ষেরই নিজ নিজ কঠোর অবস্থানের মনোভাব সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার কিছুটা প্রতিফলন দেখা গেল শনিবার বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। এদিকে অবস্থান কর্মসূচির নামে ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা ছিল বিএনপির বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, তাদের থামাতে গিয়ে অন্তত ৪০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রাজারবাগ হাসপাতালেই ৩১ জন পুলিশ সদস্য চিকিৎসা নেন। শনিবার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে বিএনপি নেতা-কর্মীদের হামলায় আহত পুলিশ সদস্যদের পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

তবে এ বিষয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর দাবি, শনিবারের অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ৫০০ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানসহ ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি আবু আশফাকসহ আরও অনেক কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন।

তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩২০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয় প্রায় ১৪৫০ নেতা-কর্মীকে। এ পর্যন্ত (রবিবার) মোট গ্রেফতার হয়েছেন ১ হাজার ৫১৪ জন। 

শনিবার ঢাকার প্রবেশপথে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে এই সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমানউল্লাহ আমান আহত হয়েছেন। আমানকে হাসপাতালে এবং গয়েশ্বর রায়কে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও তাদের গ্রেফতার দেখায়নি পুলিশ। ঢাকার মাতুয়াইল এলাকায় তিনটি বাসে আগুন, শ্যামলীতে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এবং আরও কয়েকটি এলাকায় প্রাইভেট কার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। শনিবার বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকার ধোলাইখালে অবস্থান নেওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের পুলিশ ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের ধাওয়ায় তারা কিছুটা পিছু হটে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আহত হন। তার মাথা ফেটে রক্ত পড়তে দেখা যায়। তিনি শুয়ে পড়লে তাকে পুলিশ লাঠিপেটা করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ক্রমেই তা ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।

ঢাকার মাতুয়াইল এলাকায় তিনটি বাসে আগুন, শ্যামলীতে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এবং আরও কয়েকটি এলাকায় প্রাইভেট কার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ধোলাইখালে এক ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে পুলিশ লাঠিচার্জ ছাড়াও কাঁদুনে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়ে। বেলা ১১টার দিকে গাবতলী এলাকায় সড়কের পাশে বিএনপি নেতা-কর্মীরা আমানউল্লাহ আমানের নেতৃত্বে অবস্থান নেন। তার অল্প দূরেই অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ আমানকে সরে যেতে বললে তিনি রাজি হননি। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করার পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে তাকে ফল ও খাবার পাঠান। চিকিৎসার খোঁজ নেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য যে কোনো জায়গায় যেতে চাইলে তার ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। পরে আমান মুক্ত হয়ে সেখান থেকে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে চলে যান। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ডিবি কার্যালয়ে আপ্যায়ন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। পরবর্তীতে তাদের খাবার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাতে নানা মন্তব্য করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। উত্তরা এলাকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানে অন্তত ১০ জন আহত হন। গাবতলীতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, পুলিশ তো সরকারের বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। পুলিশ আর আওয়ামী লীগ শনিবার একযোগে হামলা চালিয়েছে। তারা সিনিয়র নেতাদেরও রেহাই দেয়নি। আমরা অবহিত করেছি পুলিশকে। তাদের দায়িত্ব ছিল আমাদের নিরাপত্তা দেওয়া। এই কর্মসূচি পালনে পুলিশের অনুমতির দরকার নেই। আমরা তো সরকার পতনের আন্দোলন করছি। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপি যে একটা সন্ত্রাসী দল সেটা আবার প্রমাণ হলো। তারা ক্ষমতায় থাকাকালে যে রকম ক্ষমতার বাইরেও একই রকম। শনিবার আবারও কর্মসূচি পালনের নামে পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর এবং গাড়িতে আগুন দিয়েছে। তারা আগুন সন্ত্রাসেই বিশ^াসী।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি। সুযোগ পেলেই তাদের প্রকৃত চরিত্র উন্মোচিত হয়। তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা জনগণ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার জন্য যা প্রয়োজন তাই করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং অপরাধ বিজ্ঞানী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, সত্যি বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। শনিবার সংঘাত সংঘর্ষের যে ঘটনা ঘটেছে তাতে মনে হচ্ছে রাজপথের  রাজনীতিতে সংঘাত সংঘর্ষ ফিরে আসছে। দুটি দল যেভাবে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে যাচ্ছে তাতে আশঙ্কা বাড়ছে।

১৪ মামলা : রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলার ৯টির বাদী পুলিশ। বাকি দুটি মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত দুজন। মামলাগুলোর মধ্যে উত্তরা পূর্ব থানায় সবচেয়ে বেশি তিনটি দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া বংশাল, যাত্রাবাড়ী থানায় দুটি, উত্তরা পশ্চিম থানায় দুটি এবং সূত্রাপুর, কদমতলী ও বিমানবন্দর থানায় একটি করে মামলা হয়েছে। দায়েরকৃত এসব মামলার বাইরেও আরও কয়েকটি থানায় (দারুস সালাম, ডেমরা ও উত্তরা পশ্চিম থানা) মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল। গতকাল বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, ডিএমপি অনুমতি না দেওয়া সত্ত্বেও বিএনপি একটি বেআইনি সমাবেশ করে। বিএনপির বেআইনি সমাবেশ থেকে অগ্নিসংযোগ, বাস ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, এপিসি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা এবং পুলিশের সরকারি কাজে বাধা প্রদান করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি ফারুক হোসেন বলেন, বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমানউল্লাহ আমানকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হামলায় অন্তত ৪০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সাভার-আশুলিয়ায় তিন মামলা : ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুন ও নাশকতার ঘটনায় আশুলিয়া থানায় দুটি ও সাভার থানায় একটি মামলা হয়েছে। আশুলিয়া থানায় করা মামলা দুটিতে বিএনপির ৬২ নেতা-কর্মীকে ও সাভার থানায় করা মামলায় ৪৩ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। একটি মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত বাসচালক ও বাকি দুটিতে পুলিশ। আলাদা তিন মামলায় ১০৫ জনসহ অজ্ঞাত আরও বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর