শিরোনাম
সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

জুলাইয়ে সাত গুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী

♦ টিকার বিষয়ে ভাবছে সরকার ♦ আক্রান্ত ৪৯ হাজার ছাড়াল, মৃত্যু ২৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাইয়ে সাত গুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী

জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে দেশে সাত গুণেরও বেশি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ ভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মসূচি আরও জোরদার করার পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

গতকাল দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন। গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত       হয়েছেন ২ হাজার ৭৩১ জন এবং মারা গেছেন ৮ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ হাজার ১৩৮ জন এবং মারা গেছেন ২৪৭ জন। গতকাল ঢাকায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৮৪ জন এবং ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৪৭ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৯ হাজার ৪১৮ জন। গত ২৯ জুলাই মারা গেছেন ১০ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ২০২ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১ হাজার ১৪৩ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ হাজার ৫৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। অধ্যাপক ডা. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, জুন মাসে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে সর্বমোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিল ৫ হাজার ৫৬ জন। জুলাই মাসের ৩০ দিনে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৩৮ হাজার ৪২৯ জন। অর্থাৎ জুলাই মাসে জুনের তুলনায় সাত গুণেরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভার্তি হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত সর্বমোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। শতকরা বিবেচনায় পুরুষ ডেঙ্গু রোগী ৬৪ শতাংশ, আর নারী ৩৬ শতাংশ। মধ্যবয়সী যারা, বিশেষ করে ১১ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঢাকার ভিতরে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছে মুগদা হাসপাতালে। তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা শহরে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার ঢাকার বাইরের তুলনায় বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই পরিচালক জানান, বর্তমানে রাজধানীর অনেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর শয্যা পূর্ণ হয়ে গেছে, কিছু হাসপাতালে অল্প কিছু সিট খালি আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ডেঙ্গু রোগীরা যাতে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা নিতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করছি। পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করার জন্য নানা ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ঢাকার বাইরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল জানান, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসে এ হাসপাতালে ছয়জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যায় আবারও নতুন রেকর্ড হয়েছে। গতকাল ২৩৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। যা সাম্প্রতিক বছরে চিকিৎসাধীন সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগীর রেকর্ড। 

বরগুনা প্রতিনিধি জানান, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে গতকাল ৫২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু চিকিৎসাধীন আ. রহিম (৮০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি সদর উপজেলার ফুলঢলুয়া গ্রামে। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বরগুনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭৮ জন ভর্তি হয়েছে। জেলায় গতকাল ভর্তি ছিল ১৩০ জন। বরগুনার পাথরঘাটা এবং তালতলী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তিন বছরের অধিক প্যাথলজি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদ শূন্য থাকায় ল্যাবে কোনো ধরনের পরীক্ষা হচ্ছে না। 

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, চট্টগ্রামে প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ। বয়স্কদের সঙ্গে সঙ্গে শিশুরাও আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের শঙ্কার শেষ নেই। সবার মাঝে বাড়ছে আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে গত ৩০ জুলাই আক্রান্ত হয় ১৩৯ জন, ২৯ জুলাই আক্রান্ত হয় ১০৪ জন। তবে বয়স্কদের সঙ্গে সঙ্গে শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে শিশু ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল ৩০ জন। কিন্তু এখানে ডেঙ্গু রোগীর জন্য ব্লক করা হয় ২৮ শয্যার। তাছাড়া চট্টগ্রাম মা শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে মোট রোগী ভর্তি আছে ৭৯ জন। এর মধ্যে শিশু রোগী ৪৩ জন। চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, বড়দের সঙ্গে সঙ্গে শিশুরাও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে শিশু ওয়ার্ডে ২৮ শয্যার একটি পৃথক ব্লক করা হয়েছে। কিন্তু এখন শয্যার চেয়ে রোগী বেশি আছে। তবে সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে শয্যা বাড়ানো হবে। সবাইকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

চট্টগ্রাম মা শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিশু তালুকদার বলেন, প্রতিদিনই আক্রান্ত হয়ে বয়স্ক ও শিশুরা ভর্তি হচ্ছেন। তবে তুলনামূলক শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে মা-বাবাদের সতর্ক থাকা উচিত। মশারি ছাড়া শিশুদের যেন ঘুমাতে না দেওয়া হয়। জানা যায়, চট্টগ্রামে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে মোট আক্রান্ত হয় ২ হাজার ৬৭৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ২১৮ জন, মহিলা ৭৭০ জন ও শিশু ৬৮৮ জন। ইতোমধ্যে মারা গেছেন ২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ছয়জন, মহিলা পাঁচজন ও শিশু ১৪ জন। অন্যদিকে, আক্রান্তদের মধ্যে শহরের তুলনায় গ্রামে কম। ইতোমধ্যে শহরে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৩৪ জন এবং ১৫ উপজেলায় আক্রান্ত হয় ৭৪২ জন।

 

 

 

সর্বশেষ খবর