মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সামান্য আন্দোলন দেখে ভয় পাবেন না

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সামান্য আন্দোলন দেখে ভয় পাবেন না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আন্দোলন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। সামান্য আন্দোলন দেখে ভয় পাবেন না। যতক্ষণ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে ততক্ষণ ভয়ের কিছু নেই। আমরা অগ্নিসংযোগ-সন্ত্রাসকে আর বরদাশত করব না।

জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পুরস্কার-২০২৩’ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য কাজের জন্য ২৮ জন কর্মকর্তা ও দুটি সরকারি দফতরকে পুরস্কার দেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা, মননশীলতা এবং উদ্ভাবনী প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করতে ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন বিভাগে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস প্রতি বছর ২৩ জুলাই পালিত হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সে সময় ইতালিতে সরকারি সফরে থাকায় ২৩ জুলাই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয়নি। পুরস্কার প্রাপকরা তাদের নামের শেষে টাইটেল হিসেবে ‘বিপিএএ’ ব্যবহার করতে পারেন। প্রত্যেককে একটি স্বর্ণপদক (১৫ গ্রাম ওজনের) এবং রাষ্ট্রীয় মনোগ্রামসহ একটি প্রশংসাপত্র দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত অবদানের জন্য ২ লাখ টাকা এবং দলগত অবদানের জন্য ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচএন আশিকুর রহমান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। একটি কথা মনে রাখবেন, যারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সমর্থন দেয়নি, তাদের মনের শত্রুতা এখনো কাটেনি। তিনি বলেন, তবে আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবনে সমস্যা আসবে এটা স্বাভাবিক, তবে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হলে মনোবল ও শক্তি প্রয়োজন। তিনি বলেন, এই শক্তি (মনোবল) নিয়ে এগিয়ে গেলে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমি এটি বিশ্বাস করি। তিনি আরও বলেন, সরকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করছে, এমনকি দুস্থ সম্প্রদায়েরও। তাই দ্রব্যমূল্য নিয়ে দুর্দশা গ্রামীণ এলাকায় প্রায় নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা সরকারি কর্মচারীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের সেবা করা তাদের দায়িত্ব। পাশাপাশি তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের সর্বদা উদ্ভাবনী ধারণা খুঁজে বের করার এবং তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার করে দেশকে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, তরুণ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেক বেশি উদ্ভাবনী শক্তি রয়েছে। এখন নতুন প্রযুক্তির যুগ। আপনি যখন আপনার নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেন, তখন সর্বদা চিন্তা করুন কী কী উদ্ভাবন করা যায় এবং কীভাবে দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।

পুরস্কার পেলেন যারা : খাদ্য মন্ত্রণালয়কে ‘নীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা সংস্কার’ বিভাগে এবং ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে ‘মানব কল্যাণে গবেষণা এবং এর ব্যবহার’ বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়। ‘সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা’ বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন লক্ষ্মীপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন আকন্দ, সিভিল সার্জন ডা. আহমেদ কবির, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) নূর-ই-আলম, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান হোসেন ও রায়পুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন দাস।

‘উন্নয়ন প্রশাসন’ ক্যাটাগরিতে পদক পেয়েছেন খাগড়াছড়ির সাবেক জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, সাবেক এডিসি কে এম ইয়াসির আরাফাত, সাবেক সহকারী কমিশনার বাসুদেব কুমার মালো এবং সাবেক সহকারী কমিশনার শেখ নওশাদ হাসান। ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ ক্যাটাগরিতে চার কর্মকর্তা-শরীয়তপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক উপ-পরিচালক মাতলুবর রহমান, জাজিরা উপজেলার ইউএনও কামরুল হাসান সোহেল এবং কৃষি কর্মকর্তা জামাল হোসেনকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

‘পরিবেশ উন্নয়ন’ বিভাগে পাঁচজন কর্মকর্তা পুরস্কার পেয়েছেন। তারা হলেন- হবিগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান, এডিসি (সাধারণ) মিন্টু চৌধুরী, জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদার, সহকারী কমিশনার নাভিদ সারোয়ার ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী দিলীপ কুমার দত্ত। ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন’ বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে পাঁচজন কর্মকর্তাকে। এরা হলেন- গাইবান্ধা বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) উপ-পরিচালক আবদুস সবুর, সদর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা তাহাজুল ইসলাম, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা এনামুল হক ও পলাশবাড়ী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান। ‘দুর্যোগ ও সংকট ব্যবস্থাপনা’ ক্যাটাগরিতে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামানকে পুরস্কার দেওয়া হয়। ‘পাবলিক সার্ভিসে উদ্ভাবন’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১১’এর সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের কমান্ডার মির্জা সালাহউদ্দিন এবং ‘অপরাধ প্রতিরোধ’ ক্যাটাগরিতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার ইউএনও সোহাগ চন্দ্র সাহা। ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ ক্যাটাগরিতে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পুরস্কার পেয়েছেন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হক। এ ছাড়া ‘সামাজিক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ ক্যাটাগরিতে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরের ইউএনও সাদি উর রহিম জাদিদকে পুরস্কার দেওয়া হয়।

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি সেপ্টেম্বরে আসবে : রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র্রের (আরএনপিপি) পারমাণবিক জ্বালানি সেপ্টেম্বরে দেশে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে রোসাটমের মহাপরিচালক (ডিজি) অ্যালেক্সি লিখাচেভ এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রী ও রোসাটমের ডিজির বৈঠকের বিষয়াদি লিখাচেভের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আরএনপিপির কাজ শত বাধা অতিক্রম করে এগিয়েছে এবং এই কেন্দ্রের জন্য পরমাণু জ্বালানি সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে পৌঁছবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ইহসানুল করিম বলেন, রোসাটম ডিজি প্রধানমন্ত্রীকে আরএনপিপির সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করাসহ প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা করেন। তারা আরএনপিপির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়েও কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী কভিড-১৯ মহামারি এবং বৈশ্বিক সংকট সত্ত্বেও আরএনপিপির কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তার জন্য রাশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠনে রাশিয়ার সমর্থন ও সহযোগিতার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা ভবিষ্যতেও রাশিয়ার সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এ সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, অ্যাম্বাসাডর অ্যাটলার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. শহীদ হোসেন এবং রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান উপস্থিত ছিলেন।

নবনিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ : নবনিযুক্ত নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম নাজমুল হাসান গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণবভনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন বলেন, সাক্ষাৎকালে তাঁরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ফুলের তোড়া দিয়ে নতুন নৌ-বাহিনী প্রধানকে অভিনন্দন জানান এবং তার সফলতা কামনা করেন। নৌবাহিনী প্রধানও ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁর দোয়া কামনা করেন।

 

সর্বশেষ খবর