বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না- এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ কোনো দিন পালায় না।

শোকের মাস আগস্ট ও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল দুপুরে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে কৃষক লীগ আয়োজিত ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। তার ছেলে তারেক জিয়া খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি মামলার আসামি। সেই আসামি যে দলের নেতা তাদের মুখে বড় বড় কথা! আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। তোরা তো পালাইয়া আছিস। এক পলাতক আসামির তত্ত্বাবধানে এত লম্বা কথা আসে কোথা থেকে! ১/১১ সরকারের সময় দেশে ফিরে আসার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালে মুচলেকা দিয়ে দেশত্যাগ করেছিল যে আর কোনো দিন রাজনীতি করবে না, ওই খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক জিয়া। আর সেই সময় আমি বিদেশে ছিলাম। আমাকে তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসতে দেবে না। সমস্ত আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসকে বলে দিয়েছে কেউ যেন আমাকে নিয়ে ঢাকায় ল্যান্ড না করে। ঢাকায় তাদের অবতরণ করতে দেবে না। এ ধরনের নির্দেশ দেওয়ার পরও আমি এক রকম জোর করে বাংলাদেশে ফিরে আসি। তিনি বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের হুমকি দিয়েছিল, কেউ যদি এয়ারপোর্টে যায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের নেতা-কর্মীরা তো মানেনি। যেদিন আামি জোর করে নামলাম ঢাকায়, হাজার হাজার মানুষ সেদিন এয়ারপোর্টে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমি ফিরে এসেছি। আমাকে অনেক ভয় দেখানো হয়েছিল। যে মুহূর্তে নামব সেই মুহূর্তে গুলি করে মারবে। আমি বলেছি খুব ভালো কথা, দেশের মাটিতে তো মরলাম। আমাকে বলেছে এমন জায়গায় নেওয়া হবে কেউ খোঁজ পাবে না। আমি বলেছি বাংলাদেশে এখনো সে রকম জায়গা সৃষ্টি হয়নি যে আমাকে নিয়ে গেলে বাংলাদেশের মানুষ খুঁজে বের করবে না। আমি তার পরও যাব। আমি তো জোর করে ফেরত এসেছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি। গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। আমাকে যারা হত্যা করার চেষ্টা করেছে, যারা মানি লন্ডারিং কেস, দুর্নীতি, সেই পাওয়ার প্লান্টের দুর্নীতি, সড়কের দুর্নীতি, যার বিরুদ্ধে আমেরিকার এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে, যে সাক্ষ্যে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত। আর তার ছেলে তারেক জিয়া খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি মামলার আসামি, যেখানে আমেরিকা পর্যন্ত যার ভিসা দেয়নি। ভিসা বাতিল করে দিয়েছে এবং যার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে সেই আসামি যার দলের নেতা তাদের মুখে বড় বড় কথা- আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না!

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা সহনশীলতা দেখাচ্ছি। কিন্তু আবার দেখলাম তাদের সেই অগ্নিসন্ত্রাস, সেই ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে তারা যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, ২০০১-এর নির্বাচনের পর যেভাবে আমাদের নেতা-কর্মীর ওপর অত্যাচার করেছে, আমরা যদি তার এক ভাগ প্রতিশোধ নিতাম তো তোদের হদিসই পাওয়া যেত না। কারও হদিসই পাওয়া যেত না। তিনি বলেন, আমরা তো প্রতিশোধে বিশ্বাস করিনি। ঠিক আছে যার যার পার্টি করো, আমরা তো মানা করিনি। আমরা তো আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকতেই পারতাম না। পুলিশ দিয়ে বাধা দেওয়া হতো। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমার ওপর, সেদিন কিন্তু পুলিশ ছিল না। শেখ হাসিনা বলেন, তাদের (বিএনপি) প্রভু জিয়াউর রহমানও তো চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। পেরেছে? পারেনি। তারপর এরশাদ আর খালেদা জিয়া- এরা তো রীতিমতো ’৭১-এর হানাদার বাহিনীর মতো গণহত্যা চালিয়েছে। ২১ হাজার নেতা-কর্মী হত্যা করেছে। চোখ তুলে নিয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে, দখল করেছে, বসতবাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে কলাগাছের চারা পুঁতেছে। বিএনপি মিটিং করার জন্য টাকা কোথায় পাচ্ছে- প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন কোথা থেকে এত টাকা পাচ্ছে? যত চুরি করা টাকা ছিল সেগুলো এখন বেরোচ্ছে নাকি! একেক মিটিং করতে যে কতগুলো টাকা খরচ হচ্ছে, টাকাগুলো কোথা থেকে আসছে? শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য বারবার বাধা এসেছে। তাদের প্রভুরা এখনো চক্রান্তে লিপ্ত। তিনি বলেন, ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার ঘোষণা দিয়ে দেড় মাসও থাকতে পারেনি। ৩০ মার্চ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেছিলেন। ২০০৬ সালের ১ কোটি ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করেন। এ ভোটও বাতিল হয়েছিল। ভোট চুরির কারণে দুবার যাদের নির্বাচন বাতিল হয়েছে, তাদের মুখে এত লম্বা কথা আসে কীভাবে? একটা প্রবাদ আছে, চোরের মার বড় গলা! প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান সম্পূর্ণভাবে জড়িত। এটা তো প্রমাণিত। যে কারণে খুনি মোশতাক অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি হয়েই জিয়াকে প্রথম সেনাপ্রধান বানাল। জিয়ার সঙ্গে যদি সখ্য না থাকত, চক্রান্তে না থাকত কেন তাকে সেনাপ্রধান বানাল? মোশতাকের পতন হলো আর জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেয়। তার পতনের পর তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আরেক সেনাপ্রধান এরশাদ। আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রের জন্য। রক্ত দিয়েছে আমাদের নেতা-কর্মীরা। ওরা কতজন এ দেশের জন্য স্যাক্রিফাইস করেছে? এ দেশের জন্য, এ দেশের মানুষের জন্য যত আত্মত্যাগ করেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শের কর্মীরা। আওয়ামী লীগসহ আমাদের সহযোগী কর্মীরা।

সরকারপ্রধান বলেন, কৃষি খাতে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। ’৯৬ সালে আমরা যখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আমার সঙ্গে লম্বা একটা তালিকা নিয়ে বসেন। তাদের অনেক প্রস্তাব- এই করতে হবে, ওই করতে হবে। আমি শুধু বলেছিলাম দেশটা আমাদের, কী করতে হবে আমি জানি। দেশের মানুষের জন্য কোথায় কীভাবে কাজ করতে হবে সেটা আমার জানা আছে। তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন যে, কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। তাহলে আমরা অর্থ দেব না। তাকে বলেছিলাম অর্থ দেওয়া লাগবে না, আমরা নিজের টাকা কৃষককে দেব। শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। বিদ্যুৎ চাইছিল সেচের জন্য, সেটা খালেদা জিয়ার কাছে অপরাধ ছিল। গুলি করে তাদের মারে। আমি ছুটে গিয়েছিলাম সেখানে, প্রতিটি পরিবারকে আমরা সহযোগিতা করেছি। আমরা সব সময় মানুষের পাশে থাকি। মানুষের জন্য কাজ করি।

কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির পরিচালনায় বক্তব্য দেন সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুর রাজ্জাক, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কৃষক লীগের শরীফ আশরাফ, বিশ্বনাথ সরকার বিটু, কাজী জসিম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে কৃষক লীগের উদ্যোগে ১৫১ জন কৃষক স্বেচ্ছায় রক্ত দান করেন। প্রধানমন্ত্রী ঘুরে ঘুরে রক্তদাতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

সর্বশেষ খবর