বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
ইসির সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

আসছে মার্কিন পর্যবেক্ষক দল

♦ যুক্তরাষ্ট্র অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে : পিটার হাস ♦ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ প্রয়োজন : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসছে মার্কিন পর্যবেক্ষক দল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে অক্টোবরে বাংলাদেশে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল’। গতকাল ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ খবর দেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি সিইসিকে জানিয়েছি, অক্টোবরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রি অ্যাসেসমেন্ট ইলেকশন মনিটরিং টিম পাঠাবে। এ টিমে বিশেষজ্ঞরা থাকবেন, যাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তুতি নিয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচন প্রত্যাশা করে জানিয়ে পিটার হাস বলেন, ‘যাতে বাংলাদেশের জনগণ জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন।’

এদিকে সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে ফের এক টেবিলে বসে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, উনারাও বিশ্বাস করেন, (সমস্যা সমাধানে) রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ডায়ালগ প্রয়োজন। ডায়ালগ ছাড়া এ সংকট আসলে রাজপথে মীমাংসা করার বিষয় নয়। তিনি বলেন, কমিশন মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলোর এক টেবিলে বসা উচিত; একসঙ্গে চা পান করা উচিত। তারপর আলোচনা করে সংকট নিরসনের চেষ্টা করা উচিত। বৈঠকে আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনী, নতুন দল নিবন্ধনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, ইসি সচিব জাহাংগীর আলমও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে গত মাসে টানা ১৫ দিন বাংলাদেশে সফর করেছে ইউরোপী ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী মিশনের প্রতিনিধিরা। তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ইইউ সিদ্ধান্ত নেবে তারা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে আসছে হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। গতকাল বৈঠকের পর রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে ফের দলগুলোকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ প্রয়োজন। যে সংকটটা বিরাজ করছে তা রাজনৈতিক। এর সঙ্গে আমাদের কাজের কোনো সংঘাত নেই। কিন্তু এ সমস্যাগুলো যদি রাজনৈতিকভাবে সমাধান হয়ে যায়, তাহলে আমাদের জন্য নির্বাচন আয়োজন অনেক কমফোর্টেবল হবে। হাবিবুল আউয়াল বলেন, কমিশন প্রত্যাশা করে, রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে কতগুলো বিষয় নিয়ে সংকট প্রকটভাবে রয়েছে, সেগুলো যে কোনো মূল্যে সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। ‘একটা স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক। যে স্থিতিশীল পরিবেশে আগামী নির্বাচনটা হবে।’ আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল অক্টোবরে বাংলাদেশে আসবে বলে জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে সেই প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘অক্টোবরে উনাদের (যুক্তরাষ্ট্র) প্রি-অ্যাসেসমেন্ট টিম আসবে। উনারা আরপিও সংশোধনের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। উনিও দেখেছেন, শুনেছেন, আরপিও সংশোধনে আমাদের ক্ষমতা কমিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা উনার কাছে কীভাবে এটা বাড়ানো হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করেছি। উনি জানতে পেরেছেন, শুনেছেন, এখানকার মোর ভাইব্রেন্ট পলিটিক্যাল পার্টিকে নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। যাদের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে তারা ওইভাবে ভাইব্রেন্ট নয়।’

হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এর জবাবে আমরা বলেছি, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিতে গেলে আমাদের বিধিমালা অনুযায়ী যে ধরনের ক্রাইটেরিয়া পূরণ করতে হয়, আমরা সেগুলো স্ট্রিক্টলি ফলো করেছি। এ জন্য অনেক দল নিবন্ধন পায়নি। মাত্র দুটি দল নিবন্ধন পেতে পারে। তারা উপজেলা ও জেলা লেভেলে ক্রাইটেরিয়াগুলো পূরণ করেছে।’ নির্বাচনে স্বচ্ছতার জন্য মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা যে গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা পিটার হাসকে বলেন সিইসি হাবিবুল আউয়াল। আর মার্কিন রাষ্ট্রদূত সিইসির কাছে জানতে চান, আগামীতে গণমাধ্যম কর্মীরা নির্বাচনের দিন মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি পাবে কিনা। বিষয়টি নিয়ে সিইসি বলেন, ‘এর জবাবে আমরা বলেছি, এ বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় আছে। স্থানীয় পর্যায়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা ওখানকার অবস্থা বিবেচনা করে মোটরসাইকেল ব্যবহারের অনুমতি দেবেন। আমরাও কেন্দ্রীয়ভাবে এ বিষয়টি পর্যালোচনা করে অবহিত করব।’ অন্যদিকে সম্প্রতি ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় ১৩টি বিদেশি মিশনের যৌথ বিবৃতিকে ‘ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে, যখন অন্যান্য দেশ আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে আমাদের কাছে সমস্যা উত্থাপন করে, তখন আমরা তাদের কথা শুনি এবং আমরা তাদের কাছ থেকে শিখতে পারি। আমরা মনে করি না এটা ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন।’

সর্বশেষ খবর