বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন উৎসাহিত করে জাতিসংঘ

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন উৎসাহিত করে জাতিসংঘ

ফারহান হক

জাতিসংঘের প্রেস ব্রিফিংকালে মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক ৩১ জুলাই সোমবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় জাতিসংঘ সব সময়ই বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের জনসাধারণের উদারতার প্রশংসা করেছে এবং আশা করছি সব সময় তা করে যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ কংগ্রেসম্যান কর্তৃক বাংলাদেশকে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ থেকে বহিষ্কার অথবা সদস্যপদ স্থগিতের দাবি প্রসঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের এই মুখপাত্র বলেন, ‘সেটি মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য-রাষ্ট্রসমূহের ব্যাপার। আমার মন্তব্য করার কিছু নেই।’

আসন্ন নির্বাচন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানের যে আবদার ১৪ কংগ্রেসম্যানসহ কথিত সুশীল সমাজের কিছু মানুষ কর্তৃক করা হচ্ছে অথবা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, সে প্রসঙ্গে ফারহান হক বলেন, ‘জাতিসংঘ বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনকে উৎসাহিত করে।’ ফারহানের এমন জবাবে সহজেই অনুধাবন করা যাচ্ছে যে, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের সুপারিশকে আমলে নেওয়া হয়নি। ঠিক আগের মতোই বক্তব্য পাওয়া গেছে জাতিসংঘের। উল্লেখ্য, শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকারও তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংকালে বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রশ্ন করেছিল, এক মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতার ক্ষেত্রে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। এতদসত্ত্বেও কথিত সুশীল সমাজের কিছু মানুষ, মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত কয়েকটি সংস্থা এবং এমনকি মার্কিন কংগ্রেসের কিছু সদস্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বাংলাদেশকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছে। এমন দাবির ব্যাপারে জাতিসংঘ কিছু জানে কি না। এর জবাবে ফারহান হক উপরিউক্ত কথা বলেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের অপর প্রশ্ন ছিল, এখানে আরও উল্লেখ করতে চাই যে, কথিত সে সব সুশীল সমাজ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত কিছু ব্যক্তি (১৪ কংগ্রেসম্যানের প্রতি ইঙ্গিত করে) পরামর্শ দিচ্ছেন যে, আসন্ন সংসদ নির্বাচন যেন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করা হয়। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছে এবং বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো অবাধে সভা-সমাবেশও শুরু করেছে। এমন অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কি? অথবা হস্তক্ষেপ করার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশে বিরাজ করছে কি? এ ধরনের দাবি ও পরামর্শ সম্পর্কে জাতিসংঘের অবস্থান কী?

উল্লেখ্য, আসন্ন সংসদ নির্বাচন যেন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করা হয় এবং শান্তিরক্ষা মিশনে র‌্যাবসহ মানবাধিকার হরণকারীদের নিষিদ্ধ করতে ২৭ জুলাই জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস গ্রিনফিল্ডকে চিঠি দিয়েছেন ১৪ কংগ্রেসম্যান। চিঠিতে তারা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের সন্ত্রাস, নির্যাতন ও বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য আপনাকে চিঠি লিখছি।’ একই চিঠিতে তারা বাংলাদেশে জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তারা দীর্ঘ চিঠিতে আরও বলেছেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফ্রিডম হাউস ও রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসহ বিপুলসংখ্যক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নথিভুক্ত করেছে; যার মধ্যে ভয়ভীতি, হামলা, মিথ্যা কারাদণ্ড, নির্যাতন, গুম, এমনকি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন যে, বাংলাদেশ ‘সাংবাদিক এবং মানবাধিকার রক্ষাকারীদের দীর্ঘায়িত বিচারের জন্য দোষী’। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদসহ র‌্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যা-ই হোক, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো সরকারের সন্ত্রাসকে মন্থর করেনি। গত ছয় থেকে আট মাসে হাজার হাজার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। এই বিক্ষোভগুলো প্রায়ই সহিংসতা, নৃশংস হামলার সম্মুখীন হয়েছে। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমরা অত্যন্ত সন্দিহান যে, হাসিনা সরকার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের অনুমতি দেবে। এই কারণগুলোর জন্য এবং আরও অনেক দুর্নীতি, অত্যাচার, সহিংসতা ও অপব্যবহার বন্ধে নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলো কার্যকর করার জন্য অনুরোধ করছি-

এক. জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্যপদ অবিলম্বে স্থগিত করার ব্যবস্থা নিন। শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা নিন। বিশেষ করে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তার সরকার যে সব ব্যবস্থা নিয়েছে। দুই. অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) যে কোনো সদস্যকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মোতায়েন করা বন্ধ রাখতে হবে। তিন. জাতিসংঘ বিশ্বজুড়ে নিরপেক্ষ সরকারগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তত্ত্বাবধানে ও পরিচালনায় অংশ নেবে। এতে ভোটারদের ভয়ভীতি, ভীতি প্রদর্শন, হয়রানি বা ভোটারদের ওপর হামলা প্রতিরোধের জন্য শান্তিরক্ষা বাহিনী গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করবে। এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কংগ্রেসম্যান বব গুড, অ্যানা পলিনা-লুনা, র‌্যালফ নরম্যান, টম পেরি, যশ ব্রেচেন, এন্ড্রু ক্লেড, এইলি ক্রেইন, পল এ গসার, রনি এল জ্যাকসন, ব্রইন বেবিন, করি মিলস, ডাগ লামাফা, র‌্যান্ডি ওয়েবার ও গ্লেন গ্রোথম্যান।

সর্বশেষ খবর