বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

এক যুগ পর রংপুরে জনসভা শেখ হাসিনার

রফিকুল ইসলাম রনি ও নজরুল মৃধা, রংপুর থেকে

আজ থেকে দেড় দশক আগেও রংপুর মঙ্গাপীড়িত এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। সে পরিচয় এখন পাল্টে গেছে। দূর হয়েছে ‘মঙ্গা’ শব্দটি। যাঁর নির্দেশনা ও শাসন আমলে পাল্টেছে তিনি আর কেউ নন, রংপুরের পুত্রবধূ, দেশের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বদলে দেওয়া শ্বশুরালয়ে আজ আসছেন পুত্রবধূ শেখ হাসিনা। রংপুরবাসীও প্রস্তুত তাদের পুত্রবধূকে বরণ করে নিতে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে রংপুর বিভাগজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রংপুরের পুত্রবধূ এবার শ্বশুরালয় থেকেই শুরু করবেন নির্বাচনী জনসভা। জনসভায় রংপুরবাসীর জন্য যেমন উন্নয়ন উপহার নিয়ে আসবেন, তেমনি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি আসনে নৌকা তথা জোটের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ওয়াদা করাবেন। বিকাল ৩টায় জিলা হাইস্কুল মাঠে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১১ সালে জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী।

রংপুর জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সাড়ে ১৪ বছর একটানা আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে উত্তরাঞ্চলের জনপদ। রংপুর এখন দেশের উন্নত জেলাগুলোর অন্যতম। যেখানে তিন বেলা খাবার জুটত না মানুষের, সেখানে উদ্বৃত্ত খাদ্যপণ্য। চাহিদার দ্বিগুণ খাদ্য উৎপন্ন হয় এখানে। বরং রংপুর থেকেই খাদ্য নিয়ে আশপাশের অনেক জেলা তাদের ঘাটতি পূরণ করছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১০ সালে রাজশাহী বিভাগ থেকে আট জেলা নিয়ে রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা করা হয়। এর দুই বছর পর ২০১২ সালে রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী রংপুরকে সিটি করপোরেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় এ দুই উপহারের মধ্য দিয়ে রংপুরে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু রংপুর।

রংপুরের উন্নয়নের আরেকটি অর্জন হতে যাচ্ছে ‘রংপুর-ঢাকা ছয় লেন মহাসড়ক’ প্রকল্প বাস্তবায়ন। বর্তমানে বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান। এ সড়কের কাজ শেষ হলেই ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার বিপ্লব ঘটবে। তখন পাঁচ ঘণ্টায় রংপুর থেকে রাজধানী ঢাকায় যেতে পারবে এ এলাকার মানুষ। এ প্রসঙ্গে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, দেশের অন্য এলাকার মানুষ রংপুরকে মঙ্গা এলাকা হিসেবে জানলেও এখন আর তা নেই। কারণ রংপুর এখন চাহিদার দ্বিগুণ খাদ্য উৎপাদন করে অন্য জেলায় সরবরাহ করছে।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের কৃষক মো. গছিম উদ্দিন বলেন, ‘একসময় আমরা ভাত খাবার পারতাম না। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আমাদের এখন ভাতের অভাব নেই। জমিতে একটা নয়, তিনটা ফসল ফলাই। দুবার ধান ফলাই। আরেকবার ভুট্টা, বাদাম, মিষ্টিকুমড়া, পাটসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ফলাই। এখন তিস্তা ব্যারাজ হয়ে গেছে।’

রংপুরের তারাগঞ্জের সুমনা আকতার লিলি আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘হামরা হামার পুত্রবধূকে বরণ তৈরি হসি’ (আমরা আমাদের পুত্রবধূকে বরণ করতে প্রস্তুত)।

আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, টানা তিনবার ক্ষমতায় থেকে প্রধানমন্ত্রী রংপুরকে যেভাবে উন্নয়নের মোড়কে সাজিয়েছেন, তা বিগত কোনো সরকার করতে পারেনি। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে রংপুর মহানগরীর ২১টি পয়েন্টে করা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। ১ হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রবেশপথগুলোয় সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে জনসভায় আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। রংপুরের পীরগঞ্জের লালদীঘির পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন রংপুরে। বধূবরণে আয়োজনের বিন্দুমাত্র কমতি নেই কোথাও। মিছিলে মিছিলে এবং নৌকা প্রতীকে একাকার নগরী। চলছে বর্ণিল-বর্ণাঢ্য প্রচার। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ রংপুরে এসেছিলেন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এ সময় তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনী জনসভা করেন। সাড়ে চার বছরের বেশি সময় পর তিনি আবার রংপুরে আসছেন। এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর