বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা

তারেক ৯ জোবাইদার ৩ বছর জেল

আদালত প্রতিবেদক

তারেক ৯ জোবাইদার ৩ বছর জেল

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৯ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে আদালত তারেক রহমানকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তারেককে ৩ কোটি টাকা ও জোবাইদাকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। আইনের দৃষ্টিতে দুই আসামি পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিরও আদেশ দিয়েছেন বিচারক।

এ বিষয়ে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের জনান, তারেক রহমানকে দুদক আইনের দুটি ধারায় ছয় ও তিন বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা না দিলে তাকে আরও ৩ মাস সাজা ভোগ করতে হবে। জোবাইদাকে দুদক আইন ও দণ্ডবিধির দুই ধরায় ৩ বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানা করা হয়েছে; জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও ১ মাস সাজা ভোগ করতে হবে। তারেক-জোবাইদা দম্পতির অপ্রদর্শিত সম্পদ হিসেবে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রায়ে। এ মামলায় ২৭ জুলাই দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর রায়ের দিন ধার্য করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় তারেক রহমান ও জোবাইদার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে রায় হয়েছে।

এদিকে রায় ঘোষণার আগে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। গতকাল সকাল ১০টা থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায় তাদের। তাদের হাতের ব্যানারে লেখা ছিল- ‘তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা মিথ্যা রায় মানি না, মানব না’। বৃষ্টির মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, ঢাকা বার ইউনিটের ব্যানারে আয়োজিত এই বিক্ষোভ মিছিল থেকে সরকারবিরোধী ও বিএনপির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন আইনজীবীরা। তাদের বলতে শোনা যায়, ‘ফরমায়েশি রায় মানি না’, ‘তারেক-জোবাইদার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’। রায়ের পর জুতা হাতে মিছিলে নামেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা তারেক ও জোবাইদার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন আদালত প্রাঙ্গণে। এ মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় মোতায়েন করা হয় বাড়তি পুলিশ। পরে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান বেলা ৩টায় এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এ মামলাটি করা হয় ২০০৭ সালে সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। তখন তারেক রহমান গ্রেফতার হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে তারেক জামিনে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান চিকিৎসার জন্য। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি। প্রবাসে থেকেই বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান হন তিনি। তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদে আসীন হন তিনি। তারেক বিদেশে থাকা অবস্থায়ই এর আগে চারটি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাজার রায় আসে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে ২ বছর, অর্থ পাচারের দায়ে ৭ বছর, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর এবং একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় তার। জোবাইদা চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে ছিলেন। ছুটি নিয়ে যাওয়ার পর আর কর্মস্থলে না ফেরায় ২০১৪ সালে তাকে বরখাস্ত করে সরকার। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে স্বামীর অপরাধে সহযোগিতা এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।

এর আগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, তারেক ও জোবাইদার ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। মামলায় জোবাইদার মা ইকবাল মান্দ বানুকেও আসামি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয় আদালতে। পরে উচ্চ আদালত ইকবাল মান্দ বানুর মামলার কার্যক্রম বাতিল করে দেন।

সর্বশেষ খবর