শিরোনাম
শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

অধ্যাপিকা পান্না কায়সার আর নেই

অধ্যাপিকা পান্না কায়সার আর নেই

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

বিশিষ্ট লেখক, গবেষক, শিশু সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য পান্না কায়সার (৭৩) আর নেই। গতকাল সকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের স্ত্রী ছিলেন পান্না কায়সার। তিনি অভিনেত্রী শমী কায়সারের মা। তাঁর আরেক সন্তানের নাম অমিতাভ কায়সার।

পান্না কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। গতকাল দুপুরে গুলশানের আজাদ মসজিদে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে পান্না কায়সারের মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর ইস্কাটনের গাউস নগরের বাসায়। সেখানে খেলাঘরের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে বাদ আছর গাউস নগরে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ রাখা হয় বারডেমের হিমঘরে। সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আগামীকাল রবিবার বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে মরদেহ। এরপর বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তৃতীয় ও শেষ জানাজা শেষে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে পারিবারিক সূত্র। ১৯৫০ সালের ২৫ মে জন্মগ্রহণ করেন পান্না কায়সার। তার পারিবারিক নাম সাইফুন্নাহার চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষে বেগম বদরুন নেসা কলেজে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন পান্না কায়সার। ১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শহীদুল্লা কায়সারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর সংসার জীবন স্থায়ী হয় মাত্র দুই বছর দশ মাসের মতো। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর কজন সদস্য শহীদুল্লা কায়সারকে তাঁর বাসা ২৯ বি কে গাঙ্গুলী লেন থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফেরেননি। স্বামী শহীদুল্লা কায়সারের হাত ধরেই আধুনিক সাহিত্য ও রাজনীতির সঙ্গেই পান্না কায়সারের পরিচয় ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৩ সাল থেকে তিনি শিশু-কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর আসর’-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। ১৯৯০ সালে তিনি এই সংগঠনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পান্না কায়সার ১৯৯৬-২০০১ সালের জাতীয় সংসদে তিনি সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা, গল্প-উপন্যাস মিলিয়ে বেশ কয়েকটি সাড়া জাগানো গ্রন্থের রচয়িতা পান্না কায়সার। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- ‘মুক্তিযুদ্ধ : আগে ও পরে (১৯৯১)’, ‘মুক্তি (১৯৯২)’, ‘নীলিমায় নীল (১৯৯২)’, ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ (১৯৯৩)’, ‘মানুষ (১৯৯৪)’, ‘অন্য কোনখানে (১৯৯৪)’, ‘তুমি কি কেবলই ছবি (১৯৯৪)’, ‘রাসেলের যুদ্ধযাত্রা (১৯৯৪)’, ‘দাঁড়িয়ে আছ গানের ওপারে (১৯৯৪)’, ‘আমি (১৯৯৪)’, ‘না পান্না না চুনি (১৯৯৫)’, ‘অন্যরকম ভালোবাসা (১৯৯৫)’, ‘সুখ (১৯৯৫)’ ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এদিকে পান্না কায়সারের মৃত্যুতে আরও শোক জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু।

সর্বশেষ খবর