শিরোনাম
শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঝালকাঠি যুবলীগ ছাত্রলীগের ব্যাপক সংঘর্ষে রণক্ষেত্র

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

ঝালকাঠিতে সালিশ বৈঠক কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগে দুই দফা হামলা, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্তসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঝালকাঠি শহরের হোগলাপট্টির জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনিরের বাসভবনে প্রথম দফা সংঘর্ষ হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় রাত পৌনে ১২টার দিকে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় সংঘর্ষ বাধে।

এ ঘটনায় আহতদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে পাঠানো হয়। এ ছাড়া মাথায় আঘাত লেগে আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্মসম্পাদক রফিকুল ইসলামকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্য আহতদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক দফতর সম্পদক ফারদিন আহমেদ সান (২৫), জেলা ছাত্রলীগ সদস্য সাকিব, আবদুল্লাহ আল অভি (২২), ভৈরবপাশা ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি রাজীব হোসেন (৩২), সুলতান হাওলাদের স্ত্রী সালমা বেগম (৪৯), মেয়ে হাফসা সুলতানাসহ (৩০) ১৫ জন। এ ঘটনায় আটকরা হলেন পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান (৩৫), সাকিব (২৫), মুন্না (৩৫) ও কালু (৩৫)।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ঝালকাঠি শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় স্থানীয় দুই ব্যবসায়ী সোহরাব হাওলাদার ও সুলতান হাওলাদারের মধ্যে তিন দিন আগে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সেই বিরোধ কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনিরের বাসভবনে সালিশ বৈঠক বসে। বৈঠকে ব্যবসায়ী সুলতান হাওলাদারের ছেলে নুরুন্নবী লিসান (২৯) ছাত্রলীগের সদস্য হওয়ায় তার পক্ষে অবস্থান নেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম পারভেজ। অন্য পক্ষ সোহরাব হাওলাদারের ছেলে জিহাদ হাওলাদারের পক্ষে অবস্থান নেন শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হক খলিফা।

সালিশ বৈঠকে দুই পক্ষকে মিলিয়ে দেন খান সাইফুল্লাহ পনির। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবদুল হক খলিফার দুই ছেলে আমিন খলিফা ও রাজীব খলিফার হাতে থাকা হাতুড়ি দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহর বৈঠকখানার টেবিলের গ্লাস ভেঙে ফেলেন। এরপর আমিন খলিফা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলামের ভাই জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের গালে ও মুখে হাতুড়িপেটা করেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চেয়ার-টেবিল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। পরে সেখান থেকে উভয় পক্ষকে খান সাইফুল্লাহ পনির বের করে দেন।

 

এ ঘটনার সূত্র ধরে লঞ্চঘাটের দীর্ঘদিনের অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ে আবদুল হক ও তার জামাতা মন্টুর গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এ ঘটনার সঙ্গে পূর্ববিরোধ চাঙা হয়। দুই গ্রুপ দুই ভাগ হয়ে এলাকায় মহড়া দিতে থাকে। উত্তেজনার রেশ ধরে রাত পৌনে ১২টার দিকে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরে এর জেরে মধ্যরাতে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় উভয় পক্ষের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের চারজনকে পুলিশ আটক করেছে। গুরুতর আহত চারজনকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। হামলা-ভাঙচুর ও সংঘর্ষের পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ বিষয়ে শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হক খলিফা বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে।’

এ বিষয়ে সুলতানের ছেলে নুরুন্নবী লিসান বলেন, ‘সালিশ বৈঠকে হামলা শেষে দ্বিতীয় দফায় আমাদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে।’ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি সালিশ বৈঠকে বসে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সামনে আমার ভাই রফিকুল ইসলামকে হাতুড়িপেটায় গুরুতর আহত করে হক খলিফার দুই ছেলে। আমরা এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

ঝালকাঠি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন সরকার জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট মারতে হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষই মামলা করেনি। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে থানায় আনা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর