রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইমরান খান গ্রেফতার

তিন বছরের দণ্ড, পাঠানো হলো কারাগারে, সমর্থকদের বিক্ষোভ

প্রতিদিন ডেস্ক

ইমরান খান গ্রেফতার

ইমরান খানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সমর্থকদের বিক্ষোভ -এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। গতকাল দুপুরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশটির প্রধান প্রধান শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। সন্ধ্যায় সরকারি বাহিনী এবং ইমরান সমর্থকরা মুখোমুখি অবস্থানে ছিলেন। যদিও গ্রেফতারের আগে ইমরান খান তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা, জিও নিউজ, এনডিটিভি।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, লাহোরের জামান পার্ক এলাকার বাড়ি থেকে ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল দুপুরে তাঁর বিরুদ্ধে আনা তোশাখানা মামলায় আদালত থেকে তিন বছরের সাজার রায় ঘোষণার পরপরই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে গ্রেফতার করেন এবং পরে লাহোরের কোট লখপত জেলখানায় পাঠানো হয়। খবরে উল্লেখ করা হয়, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সমীক্ষায় যখন তাঁর পক্ষে জনমত সর্বশীর্ষে দেখা যায়, তখনই তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাঁর নির্বাচনে দাঁড়ানোর পথ বন্ধ করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। রায় ঘোষণার সময় ইসলামাবাদের জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (এডিএসজে) হুমায়ুন দিলাওয়ার বলেন, ‘এ রায়ের ফলে ইমরান খান আগামী পাঁচ বছর ভোটে লড়তে পারবেন না’। রায়ে তিন বছর সাজা ছাড়াও ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। এ রায়ের সময় ইমরান খান আদালতে উপস্থিত ছিলেন না, তাঁর আইনজীবীরাও ছিলেন না। এদিকে ইমরানকে গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই পাকিস্তানের প্রধান প্রধান এলাকার রাজপথগুলো বিক্ষোভে উত্তাল হতে থাকে। পিটিআই সমর্থকদের দেখা যায় রাস্তায় নেমে পড়তে। পর্যবেক্ষকরা এ অবস্থায় পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার আশঙ্কা করছেন। উল্লেখ্য, এ বছরের নভেম্বরেই পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। খবরে বলা হয়, এক দিন আগেই ইমরান খান গ্রেফতারের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বিবিসি হার্ডটক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ‘প্রচণ্ড ভীত’ হয়ে পড়েছে। পাকিস্তান বর্তমানে ‘অঘোষিত সামরিক আইনে’ চলছে। ‘ফ্যাসিবাদীরা’ দেশটিকে ‘অন্ধকার যুগের’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি এও বলেছিলেন, তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পাকিস্তানের একমাত্র দল যেটি সামরিক একনায়কদের দ্বারা তৈরি হয়নি। আর এ কারণেই পিটিআইকে ভেঙে দিতে তারা তৎপর হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনাকারীদের আশা ছিল তাঁকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর তাঁর দল দুর্বল হয়ে যাবে। সাধারণত কিছু সময়ের জন্য ক্ষমতার বাইরে থাকলে এটিই ঘটে। কিন্তু উল্টো এখানে তাঁর দলের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই এখন কেবল পাকিস্তানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে। খবরে বলা হয়, গত ৩ জুলাই শাহবাজ শরিফ সরকারের কঠোর সমালোচনা করে ইমরান খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তাঁকে জেলে ঢোকানোর জন্য পাক সরকার একটা ‘প্ল্যান’ করেছে। ‘লন্ডন প্ল্যান’ অনুসরণ করে তাঁকে গ্রেফতার করা হতে পারে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গ্রেফতারের আগেই নিজ সমর্থক ও দেশবাসীর উদ্দেশে একটি ভিডিওবার্তা দেন ইমরান খান। ওই ভিডিওবার্তায় তিনি দেশের জনগণকে বাড়িতে নীরবে বসে না থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আমার নয়, তুমি এবং তোমার সন্তানদের জন্য লড়াই করছি। আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, ন্যায়ের জন্য লড়াইয়ে তোমরা শামিল হও।’ নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা ওই ভিডিওবার্তার বিষয়ে ইমরান কয়েক লাইন ভূমিকাও লেখেন। এতে তিনি জানান, তাঁকে যে গ্রেফতার করা হবে-তা আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। গ্রেফতারের বিষয়টিকে লন্ডনের পরিকল্পনার একটি পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন ইমরান এবং সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ, অবিচল ও শক্ত থাকার আহ্বান জানান। এদিকে ইমরানের বিরুদ্ধে আদালতের রায় তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মেহমুদ কুরেশি। তিনিও এটিকে সরকারের পূর্বপরিকল্পিত রায় বলে অভিযোগ করেন। জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কুরেশি বলেন, ‘আদালতের এ রায় প্রত্যাখ্যান করছি। এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত।’ কুরেশি বলেন, ‘রায় ঘোষণার খবর যখন মাত্র টেলিভিশনের স্ক্রলে প্রচার হলো, ওই সময় জামান পার্কে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ! ইমরান খানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তারা। তারা কি রায়ের সিদ্ধান্ত সম্পর্ক আগে থেকেই জানত?’

তোশাখানা মামলা : এ মামলার সূত্রপাত গত বছর। ইমরান ক্ষমতা হারানোর পর দুবাইয়ের এক ব্যবসায়ী দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিদেশ থেকে ইমরান খান একটি দামি ঘড়ি উপহার পেয়েছিলেন। সেটি তিনি ২০ লাখ ডলারের (প্রায় ৫৬ কোটি পাকিস্তানি রুপি) বিনিময়ে ইমরানের কাছ থেকে কিনেছিলেন। ব্যবসায়ীর দাবি, ২০১৯ সালে যখন ইমরানের দল পাকিস্তানের শাসনক্ষমতায় ছিল, তখন সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান তাঁকে ওই বহুমূল্য ঘড়ি উপহার দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা অন্য মন্ত্রীরা যা উপহার পান, তা সরকারি কোষাগারে জমা হওয়ার কথা। তবে ১০ হাজার পাকিস্তানি রুপির কম মূল্যের উপহার হলে প্রধানমন্ত্রী তা নিজের কাছে রাখতে পারেন। তার বেশি মূল্যের কোনো উপহার পছন্দ হলে, বাজারমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করে তা তিনি নিজের কাছে রাখতে পারেন। কিন্তু আনীত অভিযোগ অনুযায়ী, ইমরান খান সেই আইন এড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে উপহার পাওয়া সামগ্রীর দাম কমিয়ে দেখিয়েছিলেন। এই দুর্নীতির কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে তোশাখানা মামলা করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর