রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সরকারি প্রতিষ্ঠানও ঋণখেলাপি

♦ ৩৮ প্রতিষ্ঠানের ঋণ ৩৬ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা ♦ খেলাপি হয়ে গেছে ১৮৫ কোটি টাকা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পরিচালন ব্যয় মেটাতে সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে থাকে ব্যাংক থেকে। চলতি বছরের জুন শেষে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর নেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো পরিশোধ না করার কারণে এর মধ্যে প্রায় ১৮৫ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক থেকে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

রাষ্ট্র মালিকানাধীন, স্বায়ত্তশাসিত ও স্থানীয় সরকারের অধীনস্থ মোট ৩৮ প্রতিষ্ঠানের জুনভিত্তিক বকেয়া ও ঋণখেলাপির তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক থেকে এসব ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক থেকেই নেওয়া ঋণের পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। এ ছাড়া জনতা ব্যাংক থেকে ৯ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৫২০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি হয়েছে রূপালী ব্যাংকের। এ ব্যাংকটির ১১১ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ সোনালী ব্যাংকের, যার পরিমাণ ৫৮ কোটি টাকা। বাকি তিন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ সামান্য। ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ জুটমিল করপোরেশন (বিজেএমসি)। প্রতিষ্ঠানটির নেওয়া ৬৬৩ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১৩২ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। এরপর বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল করপোরেশন (বিটিএমসি)-এর নেওয়া ঋণের প্রায় পুরোটাই খেলাপি হয়ে গেছে। বস্ত্র খাতের এ প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েও পরিশোধ করেনি। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ঋণের প্রায় পুরোটাই ২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঋণখেলাপি হয়ে গেছে। ঋণখেলাপির তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি)-এর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ ছাড়া সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান টিসিবি এবং বিপিসির নামও রয়েছে ঋণখেলাপির তালিকায়। তবে শেষের দুটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ কোটি টাকারও কম। সূত্রগুলো জানায়, পরিচালন ব্যয় মেটাতে সময় সময় সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ নিলেও কিছু প্রতিষ্ঠান গৃহীত ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে পারছে না, যা আশঙ্কার। এমনিতেই বেসরকারি খাতের খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলো ঝুঁকিতে আছে। এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করলে এটি ব্যাংকিং খাতের সুশাসনে আঘাত করবে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে চাইবে না-যেটি ব্যাংকিং খাতের জন্য অশনিসংকেত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থাকে মূলত সরকারের নির্দেশেই ঋণ দেওয়া হয়। বিপুল পরিমাণ ঋণ সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের কাছে দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া পড়ে থাকায় রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া ওই অর্থ বিনিয়োগের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এসব ঋণের বিপরীতে সময় সময় সরকারের পক্ষ থেকে কাগুজে বন্ড দেওয়া হলেও এর সুদের হার আমানতের সংগ্রহের ব্যয়ের তুলনায় কম।

সর্বশেষ খবর