সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

মাঠ নেতাদের ভোট প্রস্তুতির নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাঠ নেতাদের ভোট প্রস্তুতির নির্দেশ

তৃণমূল নেতাদের নির্বাচনের প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামনে নির্বাচন। এই নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে হবে। আমি প্রতি ছয় মাস পর পর জরিপ করি। সেই জরিপের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সমাপনী বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাদের কাছে জানতে চান, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে তারা কাজ করবেন কি না। এ সময় উপস্থিত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নেতা-জনপ্রতিনিধি দুই হাত তুলে ওয়াদা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, সামনের নির্বাচনে বিজয়ের পতাকা নিয়ে গণভবনে আসবেন। আপনাদের আসার আমন্ত্রণ থাকল।

‘শত সংগ্রামে অজস্র গৌরবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’ বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে ১০টায় সভা শুরু হয়ে বেলা সোয়া ২টায় খাবার ও নামাজের জন্য বিরতি দেওয়া হয়। পরে বিকাল ৩টা ৫ মিনিটে সভা শুরু হয়ে সোয়া ৫টায় শেষ হয়। এতে তৃণমূল থেকে আসা প্রায় ৩০ জন নেতা-নেত্রী বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় আমরা যাকেই নমিনেশন দিই, ভালো-মন্দ, কানাখোঁড়া যা-ই হোক, আপনাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়া। সেই কথাটা মাথায় রেখে আমাদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। কারণ আমরা যখন নমিনেশন দেব, অবশ্যই আমাদের মাথায় এটাও থাকবে যে, কাকে নমিনেশন দিলে ওই সিটটা আমরা ফিরে পাব। সেখানে অনেক এসএমএস পাঠালে, আর কারও গিবত গাইলেই যে আমরা সে কথা শুনব, তা কিন্তু আমি শুনব না। স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, ওই কথা আমি শুনব না। কারণ, আমার নিজের হিসাব-নিকাশ আছে। আজকে ৪২ বছর আপনাদের সঙ্গে প্রতিটি এলাকায় ঘুরেছি। কাজেই আমার একটা ধারণা আছে। আমার দলেরও আছে। আমরা সার্ভে করি। রিপোর্ট নিই। কার অবস্থান কতটা? সেটা বুঝে কিন্তু আমরা নমিনেশন দিই।

দলের নমিনেশন দেওয়ার প্রক্রিয়া তুলে ধরে মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সময় আমি খবর পাই, মাঝে মাঝে  মেসেজও পাই যে, এক এলাকায় আমাদের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অথবা নেতার বিরুদ্ধে আমাদেরই লোকটা নানা অপপ্রচার চালায়। আমি তাকে লিখলাম, ওপর দিকে থুথু ফেললে নিজের গালেও পড়ে। যাকে খাটো করার চেষ্টা হচ্ছে সে খাটো হলে দলই খাটো হবে। আর নৌকার ভোট কমবে।

কাজেই একজনকে খাটো করে যদি কেউ নমিনেশন চায়, সে তো বড় হতে পারবে না। সে ভোটে জিততেও পারবে না। কারণ মানুষের মন থেকেই তো মুছে যাবে। আর এত কাজ যে আমরা করলাম, সেটা থাকবে না। সেটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। নমিনেশন আমরা যখন দেই, আমাদের নমিনেশনের কতগুলো নিয়ম আছে। আমি কিন্তু ঘরে বসে থাকি না। সারা দিন যেমন দেশ গড়ার কাজ করি, সংগঠনের কাজও বসে করি। কোথায় কার কী অবস্থা আমরা ছয় মাস পর পর সার্ভে করি। আমাদের এমপিদের অবস্থা বা আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবস্থা, তাদের কী কাজকর্ম, তার কিন্তু হিসাব নেওয়ার চেষ্টা করি।

‘দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করেন’, এমনটি জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘নমিনেশন চূড়ান্ত হওয়ার পর কেউ কেউ মনে করেন, আওয়ামী লীগ তো নমিনেশন দিল না। একটা সিট না পেলে কী হবে? আরও বাকি সিট তো পাব। ক্ষমতায় তো যাব। তো এটাকে আমরা হারাই। হারিয়ে নিজেদের ক্ষমতাটা দেখাই। আর ওটা দেখাতে গিয়ে যে, পুরোটাই হেরে যাবেন আর তারপর? ২০০১ সালে হেরে যাওয়ার পর বিএনপির যে অত্যাচার-নির্যাতন, সেটা কি মনে আছে কারও? না ভুলে গেছেন সবাই। আমরা আবার যদি ক্ষমতায় আসতে না পারি, আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপরে কী নির্যাতন হবে? আর বাংলাদেশটার কী দশা হবে? এরা তো লুটে খাবে। ২০০১-২০০৬ সালের মতো লুটে খাবে তারা। এরা তো লুটেরা। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে এখন সেই টাকা ব্যয় করে। এখন লন্ডনে বসে আছে খালেদা জিয়ার ছেলে। যত রকমের অপকর্ম করে গেছে।’

দলের নেতাদের উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলেন, ‘সামনে আমাদের নির্বাচন। এ ব্যাপারে এখন থেকে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের একমাত্র শক্তি হচ্ছে জনগণ।

সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সদস্য সংগ্রহ দেখি কেউ করেন, কেউ করেন না। কেন করেন না আমি জানি না। সদস্য সংগ্রহ করা, সংগঠন তৈরি করা আজকে আমরা অনেককে বক্তব্য দিতে দেইনি।

সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের শক্তিই হচ্ছে আওয়ামী লীগের শক্তি। আওয়ামী লীগের কোনো প্রভু নাই, দেশের জনগণই আওয়ামী লীগের প্রভু। জনগণের কাছেই আমরা দায়বদ্ধ। জনগণের কল্যাণে আমরা কাজ করি। আমরা কতটুকু করতে পেরেছি এবং ভবিষ্যতে কী করব; তা আমরা শুধু জনগণকে বলি, অন্য কাউকে নয়। আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে আমি আহ্বান করব, তারা কি চান বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে চলুক? জনগণ ভোটের মালিক, তারা যদি চান উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, প্রতিষ্ঠিত হবে, তাহলে আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ভোট পেলেই এটা সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কতিপয় লোক আছে যারা চোর, দুর্নীতিগ্রস্ত ও খুনি। আসলে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া সবাই খুনি। দেশের মানুষ তাদের হাতে নিরাপদ নয়, দেশও নিরাপদ নয়। তাই আপনাদের (দলের তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধি) প্রতি আমার অনুরোধ, ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ যেসব উন্নয়ন কাজ করেছে তার সব জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণের পাশে থাকে, জনগণ উপকৃত হয়। সবার জন্য আমরা কাজ করব- এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিশেষ বর্ধিত সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রথম অধিবেশন পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। এরপর দীর্ঘসময় সারা দেশের তৃণমূল নেতাদের কথা শোনেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নানা নির্দেশনাও দেন তিনি। দ্বিতীয় অধিবেশন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই পরিচালনা করেন। এ সময় তৃণমূল নেতাদের তাঁর সরকারের সাড়ে ১৪ বছরের অর্জন জনগণের সামনে তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে আগামী সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি দলকে শক্তিশালী করতে বলেন এবং জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করার আহ্বান জানান। সকাল ১০টার মধ্যে গণভবনের সামনের মাঠে নির্মিত বিশাল প্যান্ডেল তৃণমূল নেতাদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন পর একে অপরের সঙ্গে দেখা পেয়ে কুশল বিনিময়ে মেতে ওঠেন প্রবীণ-নবীন তৃণমূল নেতারা। বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নেতা-কর্মী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, আওয়ামী লীগের জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌরসভা ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের নেতাদের নির্দেশনা দিতে এ ধরনের সভা করে আওয়ামী লীগ। ২০১৭ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গতকাল শেষ বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হলো।

ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টির প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণেই দেশে ওয়ান ইলেভেন হয়েছিল। খালেদা জিয়া ভোটচোর হিসেবে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। ভোট চুরি করলে দেশের মানুষ মেনে নেয় না বলেই খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা জনগণের কাছে তুলে ধরতে সারা দেশের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য আওয়ামী লীগই কাজ করেছে। আগে অন্য কেউ কোনোদিন মানুষের কথা ভাবেওনি, কিছু করেওনি। সেই কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে আজকে ২০২৩ সাল এই সাড়ে ১৪ বছরে বাংলাদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে বলেই আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পেয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তাঁর সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আজ শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পেয়েছে। কই এর আগে তো বহু সরকার ছিল, তারা করতে পারেনি কেন? তারা ক্ষমতায় থেকে শুধু লুটপাট করেই খেয়েছে। তারা দেবে কোথা থেকে? আর আওয়ামী লীগ মানুষকে দিতে এসেছে। আজকে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ। বিশ্বব্যাপী গ্যাস ও কয়লার দাম বেড়েছে, যে কারণে কিছুদিন আমাদের সমস্যা হয়েছে। আমরা নিজেদের গ্যাসফিল্ড থেকে গ্যাস উত্তোলন করছি। গ্যাস ব্যবহার করছি। কাজেই আমরা আমাদের সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, একইদিনে শত সেতু আর একই দিনে শত সড়ক উদ্বোধনের এই রেকর্ড আর কেউ করতে পারে নাই। বাংলাদেশ করতে পেরেছে। পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু দুর্নীতির কথা উঠেছিল, চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি।

 আজকে সারা বাংলাদেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ হয়ে গেছে। আর নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার এই একটা সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। যে না, বাংলাদেশ পারে। আমরা পারি। আমাদের মাটি আছে মানুষ আছে। জাতির পিতা বলেছিলেন, এই মাটি ও মানুষ দিয়েই দেশ গড়ে তুলবেন। আমরাও তাই করব। তাই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সবাইকে খাদ্য উৎপাদনের দিকে জোর দিতে হবে।

দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগে ছিল, সেখান থেকে ১৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। আগামীতে ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারলে দেশে দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে আনার ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।

দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না করে সরকারপ্রধান বলেন, এক অর্থনীতিবিদ লিখেছেন কোনো এক বিশেষ এনজিও ক্ষুদ্র ঋণে নাকি দেশে দারিদ্র্য কমেছে! আওয়ামী লীগ ২০০৯ এ সরকার গঠন করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করেই তো আজকে আমরা দারিদ্র্যের হার ১৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। কোনো বিশেষ এনজিওর ক্ষুদ্রঋণে যদি দারিদ্র্য কমে তবে এই ১৮ ভাগ আগে কেন হয়নি?

শেখ হাসিনা বলেন, যারা বলে এনজিওর ক্ষুদ্রঋণে দারিদ্র্য কমেছে তারা কোন অঙ্কে হিসাব করেন। দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে, কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মসূচি গণমুখী। তিনি বলেন, জনগণকে দারিদ্র্য মুক্ত করা, জনগণের শিক্ষার হার বাড়ানো, স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, কর্মসংস্থানের জন্য বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দেওয়া, তৃণমূল পর্যন্ত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলেই এই দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে। কোনো এনজিওর ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দারিদ্র্য হ্রাস পায় নাই।

আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে মন্তব্য করে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আওয়ামী লীগ। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আসি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটের অধিকারে বিশ্বাস করে, সে কারণেই আওয়ামী লীগ সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে।

দেশের কামার, কুমার, তাঁতি, জেলেসহ সব পেশার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবার জন্যই কাজ করব, এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। আওয়ামী লীগ প্রতিটি মানুষের জন্য কাজ করেছে; এর আগে আর কেউ জনগণের জন্য চিন্তা বা কাজ করেনি। প্রধানমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের এই বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে এবং একই সঙ্গে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার ফলে আজ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ প্রদত্ত ‘উন্নয়নশীল দেশের’ মর্যাদা পেয়েছে। এ জন্য দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হয়েছে।

বিএনপির ‘দুর্নীতি ও দুঃশাসনের’ ফলেই এদেশে সামরিক শাসন জারি হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করতে আওয়ামী লীগই সংগ্রাম করেছে। স্বাধীনতার পরে একটি চক্রান্ত শুরু হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই চক্রান্তে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের হত্যা করা হয়। দীর্ঘ ২১ বছর আমাদের শুধু আহতদের চিকিৎসা ও লাশ টানতে হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে মানসিক শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় মঙ্গা চলত রংপুরে, যার জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো সেখানকার লোকদের। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেখানে কোনো মঙ্গা নেই, নেই দুর্ভিক্ষও। এর কারণ হলো আওয়ামী লীগ, যে দলের প্রতিষ্ঠা করেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, জনগণের জন্য কাজ করে। মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটায়।

সর্বশেষ খবর