বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভোটে হ্যাঁ ভোটে না

নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে দ্বিমুখী তৎপরতা, যেতে চায় এক পক্ষ অনীহা আরেক পক্ষের

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ভোটে হ্যাঁ ভোটে না

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপিতে দ্বিমুখী তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক পক্ষ বলছে, ভোটে যাওয়া উচিত। নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমেই ক্ষমতাসীন দলের সব অপতৎপরতা রুখে দিতে হবে। এজন্য তারা সংলাপেরও পক্ষে। সংলাপের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে বলে মনে করেন তারা।

তবে দলের বড় অংশেরই বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চরম অনীহা। তাদের মতে, এ সরকারের অধীনে কোনো অবস্থায়ই ভোটে যাওয়া যাবে না। তারা চান, আগে সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারে ক্ষমতা হস্তান্তর। তারপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের অধীনে নির্বাচন। এজন্য তারা সমমনা দলগুলো নিয়ে এক দফা দাবিতে মাঠে নেমেছেন। বিএনপির বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, আন্দোলন চালিয়ে গেলেও ভিতরে ভিতরে জাতীয় নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এমনকি নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির জন্যও দলের উচ্চ পর্যায়ের তিন সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। অন্যদিকে নেতাদের মধ্যে কেউ যেন তাঁদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে ভুলেও দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে কোনোরকমের দ্বিমত পোষণ না করতে পারেন, সেজন্য হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে মিডিয়ার ‘টক শো’য় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা কখনোই ভোটের বিপক্ষে নই। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। তবে সে নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে নয়। বরং বর্তমান অবৈধ সরকারকে হটাতে সমগ্র জাতি আজ এক হয়েছে। জনগণ জেগে উঠেছে। জনতার বিজয় অনিবার্য। তিনি বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রই আর কাজে দেবে না। গণ আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে। জানা গেছে, মাঠের আন্দোলনের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের সবরকম প্রস্তুতিই নিচ্ছে রাজপথের সর্ববৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি। সারা দেশে ৩০০ আসনের বিপরীতে প্রার্থী বাছাই কাজও শুরু করেছে অনেক আগেই। ২০১৮ সালের মতো এবার আর একই আসনে একাধিক প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেবে না দলটি। চূড়ান্ত প্রার্থীর হাতেই মনোনয়নপত্র তুলে দেওয়া হবে। সে লক্ষ্যে গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ চলছে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় হওয়া-না হওয়ার ওপর। বিএনপির ঘোষণা অনুসারে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে দলটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না। সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারে ক্ষমতা হস্তান্তরের এক দফা দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নেমেছে বিএনপিসহ সমমনা ৩৬ দল। সম্প্রতি তারা ঢাকায় যুগপৎভাবে একটি মহাসমাবেশ কর্মসূচিও পালন করেছে। নতুন কর্মসূচি ঘোষণার আগ পর্যন্ত বর্তমানে যুগপৎ কর্মসূচিতে সাময়িকভাবে বিরতি পালন করা হচ্ছে। এর সঙ্গে রবিবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। দলটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ সেদিন বিএনপির সব কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি শুধু বিএনপিরই নয়, সমগ্র দেশবাসীর। সব গণতান্ত্রিক দল ও সংগঠনের দাবি। আর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সব সময়ই নির্বাচন তথা মানুষের ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সেই ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতেই দলটি জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করছে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ভোটে যেতে বিএনপির মেমরিতে ‘না’ বলে কোনো কথা নেই। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার আজ প্রতিষ্ঠিত হলে বিএনপি কালই নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। একটি নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিএনপি যে কোনো মুহূর্তেই প্রস্তুত আছে। জানা গেছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি দুটোই একসঙ্গে চালাচ্ছে দলটি। নানা মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে প্রতি আসনে দুজন করে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই করছেন হাইকমান্ড। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে নানাভাবে খোঁজখবর নেওয়ার পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলা শুরু করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি সংসদীয় আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা ধরে দলীয় কর্মসূচি পালনসহ নানা ইস্যুতে নিজ নিজ এলাকায় থাকার নির্দেশনাও দিচ্ছেন তিনি। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, নির্বাচনী ‘মাস্টারপ্ল্যান’ নিয়েই এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে বিএনপি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলন ও নির্বাচনোত্তর জবাবদিহিমূলক কর্মসূচির ৩১ দফা রূপরেখাও ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে দলটি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ক রূপরেখা’ শিরোনামে ঘোষিত এ রূপরেখার মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা এবং টানা দুই মেয়াদের বেশি এসব পদে না থাকা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রচলন, প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈষম্যহীন ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা এবং জাতীয় সমঝোতা কমিশন গঠন, বিতর্কিত সংশোধন বাতিলে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন ও নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনাসহ নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনে চারটি প্ল্যাটফরমে সক্রিয় রয়েছে বিএনপিসহ ৩৭ সমমনা দল। তার আগে ১২ জুলাই ঢাকায় যুগপৎভাবে সমাবেশের মাধ্যমে সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ৩৬ দল। ব্যারিস্টার আন্দালিবের দল যুক্ত হওয়ায় এখন সেটি ৩৭ দলে পরিণত হয়েছে। তারা চারটি প্ল্যাটফরমে আলাদা মোর্চা গঠন করে বিএনপির সঙ্গে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। জোটগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এই সমমনা দলগুলো নিয়ে গঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। ১২টি দলের সমন্বয়ে রয়েছে ১২-দলীয় জাতীয়তাবাদী জোট। সমমনা গণতান্ত্রিক জোট। পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট। এ ছাড়া জোটের বাইরে থাকা কর্নেল (অব.) অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণ অধিকার পরিষদ (ড. রেজা কিবরিয়া), গণ অধিকার পরিষদ (ভিপি নূর), গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টিসহ অন্য দলগুলোও যুগপৎ কর্মসূচি পালন করছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর