বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঝুলছে ডিজিটাল অপরাধের সাড়ে ৫ হাজার মামলা

ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন

আরাফাত মুন্না

দেশের আট সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার মামলা। গুজব ছড়ানো, বিভ্রান্তি সৃষ্টি, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করাসহ অনলাইন প্ল্যাটফরম ব্যবহারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর মতো ডিজিটাল অপরাধে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হলে এসব মামলার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আইনজ্ঞরা বলছেন, পুরনো আইনে দায়ের করা মামলাগুলোর বিচার পুরনো আইনে চলতে কোনো বাধা নেই। তবে বিদ্যমান আইনে সাজার পরিমাণ বেশি রয়েছে। আর প্রস্তাবিত আইনে সাজা কম। ফলে একই অপরাধে দুই ধরনের সাজা দেওয়া হলে, তা হবে বৈষম্যমূলক। তাই বিচারাধীন এসব মামলার সাজার বিষয়ে নতুন আইনে স্পষ্ট করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা। এদিকে চলমান মামলাগুলোতে পুরনো আইনে সাজা প্রদানে কোনো বাধা দেখেন না সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অপরাধের সময় ও ধরন অনুযায়ী বিচারটা চলবে। যে আইনে বিচার হচ্ছে, সেই আইনে যে সাজাটা রয়েছে, আসামিকে সেই সাজাই দেবেন আদালত। তিনি বলেন, তবে যেহেতু নতুন আইনে সাজা কমানো হয়েছে, সে ক্ষেত্রে বিতর্ক এড়াতে পুরনো আইনে দায়ের করা মামলাগুলোর সাজার বিষয়ে নতুন আইনে স্পষ্ট করা যেতে পারে। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন মনে করেন, একই অপরাধে একই আদালত থেকে দুই ধরনের সাজা প্রদান বৈষম্যমূলক। একই সঙ্গে এটা সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক হতে পারে। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখনো যেহেতু আইনটা পাস হয়নি, তাই এই সংকট কাটানোর সুযোগ রয়ে গেছে। প্রস্তাবিত আইনটিতে পুরনো আইনে চলমান মামলাগুলোর বিচার ও শাস্তি প্রক্রিয়া স্পষ্ট করলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিচারাধীন মামলা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আইনের অবস্থান হলো যেসব অপরাধ পুরনো আইনে করা হয়েছে, সেই পুরনো আইনে যে শাস্তি, সেই শাস্তি অপরাধীকে দিতে আদালত বাধ্য। কিন্তু সেখানে চিন্তাভাবনা করা হবে, এই আইনে যেহেতু শাস্তির পরিমাণ অনেকাংশে কমানো হয়েছে এবং সেই কমানোটিই সরকারের এবং আইনসভার উদ্দেশ্য। তাই সেই কমানোটি যাতে বাস্তবায়িত হয়, সেই চেষ্টা করা হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাসহ সাইবার অপরাধ সম্পর্কিত মামলার বিচারের সরকার ২০১৮ সালে দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে একটি করে সাইবার ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করে। এর আগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলার জন্য ঢাকায় একটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল ছিল। নতুন সাতটিসহ দেশে এখন সাইবার ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা আট।

সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আট সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫ হাজার ৫১২টি। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে ২৪৭টি মামলা। আর উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত মামলার সংখ্যা ৭৬। পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছর এসব ট্রাইব্যুনালে দুই হাজার ৬১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর অন্যান্য আদালত থেকে বদলি হয়ে এই আদালতগুলোতে এসেছে আরও ১ হাজার ১২৫টি মামলা। একই সময়ে আট ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ২ হাজার ৫৫টি মামলা।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডিজিটাল অপরাধের সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে ঢাকায়। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২ হাজার ১৪১টি। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ১ হাজার ৪০৫টি, রাজশাহীতে ১৫৬টি, খুলনায় ৩৫৪টি, বরিশালে ৩৮১টি, সিলেটে ৪৩৪টি, রংপুরে ৪০০টি এবং ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনালে ২৪১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে সাইবার ট্রাইব্যুনালে শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই মামলা দায়ের হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের কোর্টে মামলা নিষ্পত্তির হার আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। চলতি বছরের কয়েক মাসেই প্রায় ১ হাজার মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে। পুরনো অধিকাংশই মামলাই নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর