বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সরকারের ওপর আস্থা রাখুন : প্রধানমন্ত্রী

আরও ১২৩ উপজেলা ভূমিহীন গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারের ওপর আস্থা রাখুন : প্রধানমন্ত্রী

গণভবনে গৃহহীনদের বাড়ির রেপ্লিকা হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকায় ভোট দিয়ে দেশবাসী স্বাধীনতা পেয়েছিল। নৌকায় ভোটের কারণে আজ ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ বিনামূল্যে জায়গাসহ ঘর পেয়েছে। তাই আমি বলতে চাই, আওয়ামী লীগের প্রতি সবাইকে বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে হবে। সরকারের ওপর আস্থা রাখুন। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে বাড়ি হস্তান্তরকালে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল দেশের আরও ১২টি জেলা ও ১৩২টি উপজেলায় চতুর্থ ধাপে আরও ২২ হাজার ১০১টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে জমিসহ নবনির্মিত স্বপ্নের নীড় স্থায়ী ঠিকানার বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রম উদ্বোধন এবং ১২টি জেলার সব উপজেলাসহ মোট ১২৩টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশির ভাগ সুবিধাভোগীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা এবং সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সুবিধাভোগীরা খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার আওতাধীন বারাসত সোনার বাংলা পল্লী আশ্রয়ণ প্রকল্প, পাবনার বেড়া উপজেলার আওতাধীন চাকলা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এ সময় শেখ হাসিনা ঘরের সুবিধাভোগীর স্বামীর অমানবিক নির্যাতনে অন্ধ মহিলা লিলি বেগমের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। প্রধানমন্ত্রী পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার দৃষ্টিশক্তিহীন মহিলার চিকিৎসার যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংল্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। নতুন ১২টি ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা হলো- মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছি। মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আজকে আমি আনন্দিত যে, আমরা এ পর্যন্ত ৩৩৪ উপজেলাকে ভূমিহীনমুক্ত করতে পেরেছি। ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ লাখ, ৫৫ হাজার ৬১৭টি পরিবারকে ঘর দিতে পেরেছি। বাড়ি হস্তান্তরকালে উপকারভোগীদের মুখের বাঁধভাঙা হাসি দেখে তিনি আবেগজড়িত কণ্ঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের জন্যই জীবনটা উৎসর্গ করেছেন, সেই সঙ্গে আমার মা-ও। গৃহহীন মানুষগুলো ঘর পাবে, তারা সুন্দর জীবন পাবে, এটা আমার বাবার জীবনের স্বপ্ন ছিল। তিনি সবসময়ই বলতেন, আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে আর সে জন্যই আমি প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেশের একজন মানুষও অবহেলিত থাকবে না-বঙ্গবন্ধুর এ আকাক্সক্ষা পূরণে সরকার সবার জন্য বাড়ির ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তিনটি গৃহনির্মাণ স্থল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, পাবনার বেড়া এবং খুলনার তেরখাদা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে আরও বলেন, আমি শুধু এটুকু বলব, আস্থা ও বিশ্বাস রাখবেন, একটানা সরকারে আছি বলেই আজ ভূমিহীনদের ঘর করে দেওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষা, শতভাগ বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট উন্নত করা সব করে দিচ্ছি, করতে পারছি। এদেশের মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজ আপনারা ঘর পেলেন, জীবন-জীবিকার সুযোগ পেলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসব উপজেলার প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে দুই কাঠা করে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে। এসব ঘরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার, সেই অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। কাজেই এসব জেলা-উপজেলাকে আমি আজ ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উন্নত জেলা-উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করছি। জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। দেশে একটি মানুষও অবহেলিত থাকবে না-এটাই তাঁর আকাক্সক্ষা ছিল, আমরা তাঁর সেই আকাক্সক্ষাটাই পূরণ করছি। দেশের প্রত্যেকের জীবনমান আরও উন্নত হবে, জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।

বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন ও ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। আমি জানি আমাদের একটি বিরোধী দল আছে, যারা মানুষ খুন করা, অগ্নিসন্ত্রাস, বাসে আগুন, রেলে আগুন দেওয়া এবং সাধারণ মানুষকে হত্যা করা- এ ধরনের কাজই করে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সমমনা দলগুলো দিনের পর দিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। মানুষ ভোটের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমরা যখন জনগণের ভোট নিয়ে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসি, সেই সময় এই বিএনপি-জামায়াত, যে সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা, গুলি ছাড়া আর কিছুই বোঝে না, তারা সেভাবেই মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, ৩ হাজার ৮০০ মানুষকে তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। এর মধ্যে শত শত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। কাজেই মানুষের জন্য তাদের কোনো চিন্তা নেই। ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি, লুটপাট, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করা, অর্থ চোরাকারবারি- এ কাজগুলোই তারা করে গেছে এবং এখনো মানুষকে তারা জিম্মি করে নানাভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যাতে আবার ভোট চুরি করতে না পারে সেজন্য আমরা একটি ডিজিটাল ভোটার তালিকা তৈরি করেছি। বিএনপি-জামায়াত চক্র জনগণের কল্যাণে কিছুই করেনি বরং লাগামহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। সেই কায়েমি গোষ্ঠী (বিএনপি-জামায়াত) এখনো ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে জনগণকে বন্দি করার চেষ্টা করছে যেটি তারা ২০১৩-১৪ সালে সেই সময়ের জাতীয় নির্বাচন স্থগিত করার লক্ষ্যে শুরু করেছিল। এ ব্যাপারে তিনি দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। আর ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একটি স্থিতিশীল অবস্থা, সব বাধা অতিক্রম করে, একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অন্যদিকে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করে জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। দারিদ্র্যের হার ১৮ ভাগ এবং হতদরিদ্র ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ইনশা আল্লাহ এ দেশে আর কোনো হতদরিদ্র থাকবে না। প্রত্যেকের জন্য অন্তত একটু জমি, ঘর এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি, করে দেব। আমি শুধু এটুকু বলব, আস্থা ও বিশ্বাস রাখবেন, একটানা সরকারে আছি বলেই আজ ভূমিহীনদের ঘর করে দেওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষা, শতভাগ বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট উন্নত করা সব করে দিচ্ছি, করতে পারছি। এদেশের মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজ আপনারা ঘর পেলেন, জীবন-জীবিকার সুযোগ পেলেন। এ পর্যন্ত ৩৩৪ উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হলো। এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭টি পরিবারকে ঘর দিয়ে জীবন-জীবিকার পথ করে দেওয়া হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জানান। বাংলাদেশের জনগণকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত রাখার সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে সমাজের বিত্তশালীদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের কেউ যেন গৃহহীন ও ভূমিহীন না থাকে তা নিশ্চিত করা। অনেক ধনী লোক সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে এগিয়ে আসতে পাওে, যাতে সমাজের কেউ অবহেলিত না থাকে। প্রধানমন্ত্রী কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় বেসরকারি উদ্যোগে ৬৫টি গৃহহীণ ও ভূমিহীন পরিবারকে একটি আবাসন প্রকল্পে পুনর্বাসিত করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের দ্বিতীয় রাউন্ডের চতুর্থ ধাপে ১২টি জেলা ও ১২৩টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করার ফলে সারা দেশে ২১টি জেলা ও ৩৩৪টি উপজেলা গৃহহীণ ও ভূমিহীণ মুক্ত হলো। আমি আজ ১২টি জেলা ও ১২৩টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করছি। যারা জমিসহ বাড়ি পেয়েছেন তাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব বাড়ি আপনাদের মর্যাদা বাড়াতে সাহায্য করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাদের জন্য তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেসব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রচেষ্টা দেখে তাঁর আত্মা শান্তি পাবে। যারা বাড়ি পেয়েছেন তাদের বাড়ির ভিতরে এবং আশপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে এবং বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর