বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

কথিত হিজরত থেকে ফিরে আত্মসমর্পণ চার তরুণের

নিজস্ব প্রতিবেদক

কথিত হিজরত থেকে ফিরেছেন চার তরুণ। তারা আত্মসমর্পণ করেছেন এলিট ফোর্স র‌্যাবের কাছে। র‌্যাব জানিয়েছে, আত্মসমর্পণকারীদের একজন নারায়ণগঞ্জের আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০২১ সালে শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয় সে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১২ তরুণের সঙ্গে তথাকথিত হিজরত করে পাহাড়ে যায়। পরে নিজের ভুল বুঝতে পারে। ফেরার চেষ্টা ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে তা সম্ভব হয়নি। পালাতে গিয়ে দুবার ধরা পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়। সর্বশেষ গত মার্চের প্রথম দিকে আবু বক্করসহ বেশ কয়েকজন পালাতে সক্ষম হয়। গত মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব-১১ ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আবু বক্করসহ চার তরুণ আত্মসমর্পণ করে। নিজেদের পরিচয় ও কথিত হিজরতের পর ভুল বোঝার তথ্য দিলে তাদের আটক করে র‌্যাব। তারা হলেন- নারায়ণগঞ্জ বন্দরের আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান (১৬), সিলেট ওসমানী নগরের মো. হাসান সাইদ (২৬), শেখ আহমেদ মামুন (২৩) এবং মাদারীপুরের মো. ইয়াছিন (২১)।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র?্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ২০২১ সালে ভুল একটা পথকে সঠিক মনে করে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন ‘কেবিন ক্রু’ মা আম্বিয়া সুলতানা ওরফে এমিলি। তিনি নিজেই তার ছেলেকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে পাঠিয়েছিলেন। পরে র‌্যাবের ডি-র‌্যাডিকালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন তিনি। ছেলেকে ফিরে পেতে গত ৯ নভেম্বর র‌্যাবের সহায়তা চেয়ে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হন ওই নারী।

মঈন বলেন, চার তরুণ বিভিন্ন সময় বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতজনের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াতে যোগ দেয়। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা তাদের ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে তথাকথিত হিজরতের কথা বলে। এ ছাড়া চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে তাদের পাহাড়ে যেতে আগ্রহী করা হয়। ২০২২ সালের জুন মাসে সিপ্পি পাহাড় থেকে পালিয়ে রনি পাড়া এসে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে যাওয়ার রাস্তা খোঁজার সময় কেএনএফ সদস্যদের কাছে ধরা পড়ে চার তরুণ। এ সময় জঙ্গি ক্যাম্পে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের বন্দি রেখে নির্যাতন করা হয়। পরে পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। সুযোগ বুঝে অন্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গত মার্চে পালিয়ে সমতলে চলে আসে। তারা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে থাকে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, আত্মসমর্পণ করা এবং ভুল বুঝতে পারা জঙ্গিদের র‌্যাবের আইনগত সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরিবারের উৎসাহে এবং আইনগত সহযোগিতা পাওয়ার আশায় র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে আত্মসমর্পণ করে ওই চার তরুণ।

আত্মসমর্পণ করা অন্যদের বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সিলেট ওসমানী নগরের স্থানীয় মাদরাসা থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করা হাসান সাঈদ ২০২১ সালে শুরা সদস্য মায়মুনের মাধ্যমে উগ্রবাদে জড়ায়।

খন্দকার আল মঈন জানান, আত্মসমর্পণকারী শেখ আহমেদ মামুন সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিল। ইয়াসিন ছিল মাদারীপুরের একটি দোকানের ঘড়ি মেকানিক। সিরাজের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে ২০২১ সালের নভেম্বরে পাহাড়ে যায়। পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কার্যক্রম দেখে সে ভুল বুঝতে পারে এবং সমতলে ফিরে আসে।

র‌্যাব জানায়, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘরছাড়া ৫৫ তরুণের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৮ জন আত্মসমর্পণসহ আটক হয়েছে। তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছে সাতজন। তাদের আইনের আওতায় আনার তৎপরতা চলছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর