শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
দৃষ্টান্ত

এমএ পাস চাওয়ালা পরিচয় সম্মানের

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমএ পাস চাওয়ালা পরিচয় সম্মানের

রাজধানীর বাড্ডায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাষক ছিলাম। করোনাকালে কর্তৃপক্ষ বেতন ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিতে চায়। ফলে সেই চাকরি করা সম্ভব হয়নি। চাকরিটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হই। শিক্ষকতা ছেড়ে অর্ক টেক লিমিটেড নামে একটি অনলাইন (ই-লার্নিং) কোম্পানি খুলি। সেখানেও সুবিধা করতে পারিনি। সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। আমার স্ত্রী তখন অন্তঃসত্ত্বা। এ সময় অনাগত সন্তানকে নিয়ে আমাদের উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখার কথা কিন্তু বর্তমানের চিন্তায় দিশাহারা আমি। অনেক চিন্তাভাবনা করে আমি চায়ের দোকান দিই। নাম দেই ‘এম এ পাস চাওয়ালা’। সৎভাবে পরিশ্রম করে আয় করি। এম এ পাস চাওয়ালা পরিচয় আমার কাছে অনেক সম্মানের। জীবনের এ গল্প স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী মো. সহিদুল ইসলামের। রাজধানীর ভাটারায় একটি চায়ের দোকান দিয়েছেন, তিনি যার নাম ‘এম এ পাস চাওয়ালা’। এই নাম বেছে নেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চমক সৃষ্টি করে দৃষ্টি আকর্ষণ করা ও নিজের অবস্থান বোঝানোর জন্য নামটি দেই আমি। ২০১৩ সালে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম এ পাস করেছি। এম এ পাস করে চাওয়ালা হব, বিষয়টি পরিবারের সদস্যসহ অনেকেই শুরুতে মানতে পারেননি। অনেক আত্মীয় আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে। কিন্তু আমার তাতে কিছু যায় আসে না। আমি কোনো কাজকেই ছোট মনে করি না। আমার কাছে মনে হয় সমাজে সম্মান নিয়ে বাঁচতে হলে সৎ হওয়াই যথেষ্ট। দোকানে গিয়ে দেখা যায়, অভিনব কায়দায় দোকানকে সাজিয়েছেন সহিদুল। চায়ের দোকানে এ এক নতুনত্ব। বিভিন্ন ধরনের পিতলের তৈজসপত্র দিয়ে সাজিয়েছেন দোকান। চা পরিবেশন করা হয় নান্দনিকভাবে। সহিদুল বলেন, আমার দোকানে ইরানি জাফরান চা, ইরানি দুধ চা, ইন্ডিয়ান মালাই চা, স্পেশাল (বিশেষ) মাসালা চা, আমেরিকান চকলেট দুধ চাসহ নানা স্বাদের চা পাওয়া যায়। দাম প্রতি কাপ ৩০ থেকে ৭০ টাকা। চায়ের সঙ্গে বাড়িতে বানানো শিঙাড়াসহ বিভিন্ন নাস্তা আইটেম পাওয়া যায়। ২০১০ সালে পর্যটন করপোরেশন থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট (ব্যবস্থাপনা) বিষয়ে একটি কোর্স করার সূত্রে সোনারগাঁও হোটেলে তিন মাস শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সে অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগছে। সাধারণ চায়ের দোকান না করে আমি নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছি। এখন আমরা গরুর দুধ হোম ডেলিভারি দিচ্ছি। পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখলে ক্রেতা আসবেই এটা আমার বিশ্বাস। দোকান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে বলেন, নতুনত্ব আনতে পরিবেশবান্ধব পোড়ামাটির কাপ, বাটি, কাঠের ট্রে, পিতলের নানান বাহারি বাসনকোসন ব্যবহার করেছি। নিজের ছবি দিয়ে ‘এম এ পাস চাওয়ালা’ লিখে লাল-কালো টিশার্টও বানিয়ে নিয়েছি। ফেসবুকে দোকানের নামে একটি পেজ এবং একটি ওয়েবসাইট চালু করেছি। আমাকে নিয়ে বেশ কিছু গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে। এখন অনেকেই বিনিয়োগ করতে চায় আমার প্রতিষ্ঠানে। এটার ফ্রাঞ্চাইজি খোলার জন্য চেষ্টা করছি। ঢাকাসহ সারা দেশে থাকবে এম এ পাস চাওয়ালার আউটলেট, এটাই আমার স্বপ্ন। এটাকে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে সেই লক্ষ্যে ছুটে চলেছি।

সর্বশেষ খবর