বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

শোক ও শ্রদ্ধায় জাতির পিতাকে স্মরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শোক ও শ্রদ্ধায় জাতির পিতাকে স্মরণ

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মোনাজাত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা -পিআইডি

শোক, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় গতকাল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করল সমগ্র বাঙালি জাতি। এই দিনে শোক শক্তিতে রূপান্তরিত করে যে কোনো অপশক্তিকে রুখে দেওয়ার শপথ নেয় শোকাহত জাতি।

গতকাল ছিল জাতির পিতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী। দিবসটি ছিল জাতীয় শোক দিবস। শোকাবহ এই দিনে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাঞ্জলিতে সিক্ত হয়েছে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল, ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বনানী কবরস্থান। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোয় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি। দিনের শুরুতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৬টা ৩২ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাঁরা। এ সময় তিন বাহিনীর সদস্যরা জাতির পিতার প্রতি রাষ্ট্রীয় সালাম জানান, তখন বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে দ্বিতীয়বার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর একে একে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা। এ ছাড়া জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের পক্ষে তাঁর মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশিদের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ছেড়ে গেলে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ সময় সেখানে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীর ঢল নামে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় দলের কেন্দ্রীয় ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, ওবায়দুল কাদের, মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, শাজাহান খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবদুল মোমেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম প্রমুখ সেখানে ছিলেন। সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের অন্য শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে এ সময় মা-ভাইসহ ১৫ আগস্টে নিহত সব শহীদের কবরে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেন তিনি। পরে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন তাঁরা। তিনি বেলা পৌনে ১২টার দিকে যান টুঙ্গিপাড়ায়। সেখানে পৌঁছে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দোয়া ও ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন সরকারপ্রধান। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

স্বাধীনতার মহানায়কের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে টুঙ্গিপাড়া, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন, বনানী কবরস্থানে ছিল শোকার্ত লাখো মানুষের ঢল। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণ ছিল জনারণ্য। গতকাল দিনটি ছিল সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সরকারি-বেসরকারি রেডিও ও টিভি চ্যানেলগুলো দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা হয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেশজুড়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, রচনা, চিত্রাঙ্কন, হামদ ও নাত প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান এবং মিলাদ, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।

রাজধানীসহ সারা দেশে শোকের প্রতীক কালো পতাকার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ড ও তোরণ নির্মাণ করা হয়। অলিগলিতে মাইকে বাজানো হয় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গান, কবিতা এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণামূলক গানও প্রচারিত হয়। ভোর থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের রাস্তায় সমবেত হতে থাকেন। থানা, ওয়ার্ড ও মহল্লায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের উদ্যোগে দিনব্যাপী কোরআনখানি, মোনাজাত, আলোকচিত্র প্রদর্শনী করা হয়। এরপর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া সামাজিক ও সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

বঙ্গভবনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল : গতকাল বাদ আসর বঙ্গভবনের দরবার হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন। মাহফিলে রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রপতির সচিবগণ, বঙ্গভবনের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মচারীরা অংশ নেন। মিলাদের পর বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি কামনা করা হয়।

মহিলা আওয়ামী লীগের দোয়া : বিকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভবনে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগ বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা যোগ দেন। মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, সাধারণ সম্পাদক শবনম পারভীন শিলাসহ সংগঠনের নেত্রীরা এতে অংশ নেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা : জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাব। সকালে ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তের নেতৃত্বে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং পরে ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আর্তমানবতার সেবায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সহসভাপতি রেজোয়ানুল হক রাজা, যুগ্মসম্পাদক আশরাফ আলী, কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য কাজী রওনাক হোসেন, জুলহাস আলম, শাহনাজ সিদ্দীকি সোমা, কল্যাণ সাহা। এ ছাড়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক ও মহাসচিব দীপ আজাদ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ বাদল, সাংবাদিক নেতা আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, আবদুল জলিল ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক পরিষদসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।

এতিমদের তবারক বিতরণ : জাতির পিতার শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এতিম, দুস্থদের মাঝে তবারক বিতরণ করা হয়। ঢাকা-১৮ আসনের এমপি ও ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান নির্বাচনী এলাকায় ২১টি গরু বিতরণ করেন। এ ছাড়া ১২১টি ইউনিটিতে নগদ অর্থ বিতরণ করেন। গতকাল প্রতিটি ইউনিটিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে খাবার বিতরণ, আলোচনা সভা, শোকর‌্যালি বের করা হয়। দেড় ডজন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে হাবিব হাসান অংশ নেন।

ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ ডেমরা চৌরাস্তাসহ ১৬টি স্থানে অসহায়-দুস্থদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেন প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার জ্যেষ্ঠপুত্র ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল। এদিন তাঁর নেতৃত্বে দিনব্যাপী কোরআন তেলাওয়াত, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার, বঙ্গবন্ধুর সমাধি ও প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, কালোব্যাজ ধারণ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল, রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মেরাজনগর সুপার মার্কেটে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। রাজধানীর সবুজবাগে কালীমাতা মন্দির, বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল রাজধানীর প্রগতি সরণিতে ইসহাক টাওয়ারের সামনে ঢাকা উত্তর সিটির ১৭ নম্বর কাউন্সিলর হাজি মোহাম্মদ ইসহাক মিয়ার উদ্যোগে কাঙালিভোজের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসান। ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের উদ্যোগে রাজধানীর পুরান ঢাকায় এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।

মানুষের ঢল : জাতির পিতার ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। ভোর থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের রাস্তায় জমায়েত হতে থাকে। সকাল ৬টার মধ্যেই অগণিত মানুষের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে ৩২ নম্বর সড়ক।

মুক্তিযোদ্ধাদের শোকর‌্যালি : জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ভবনে শোকর‌্যালিসহ শ্রদ্ধা জানান বীর মুক্তিযোদ্ধারা। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের স্মার্ট প্যানেলের পক্ষে চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী, মহাসচিব প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল বাহার মজুমদার টিপুর নেতৃত্বে এ মিছিল নিয়ে আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। পরে তেজগাঁও শাহ মাজার প্রাঙ্গণে কোরআন খতম, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা শেষে তবারক বিতরণ করা হয়। গতকাল এফবিসিসিআইয়ের নবনির্বাচিত সভাপতি মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান সংগঠনের নেতারা। গতকাল পুরানা পল্টনে ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি-এনপিপি এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীর কলাবাগানে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এ সময় অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. কামরুল আহসান, ডিএমপি কমিশনার (অতিরিক্ত আইজিপি) খন্দকার গোলাম ফারুক, পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর (অতিরিক্ত আইজিপি) ড. মল্লিক ফখরুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাজহারুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি মো. আতিকুল ইসলাম, নৌপুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও অ্যাসোসিয়েশনের অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। দেশব্যাপী দুস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী বিজিবি সদর দফতরসহ সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর, ইউনিটের মসজিদে জোহর নামাজের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ শাহাদাতবরণকারী পরিবারবর্গের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এর আগে বিজিবির সব মসজিদে বাদ ফজর কোরআন খতম করা হয়।

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গতকাল বেলা ১১ টা ৫৩ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া পৌঁছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সমাধিসৌধের বেদির পাশে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার ও সশস্ত্র সালাম প্রদান করা হয়। বিউগলে বেজে ওঠে শোকের মূর্ছনা। শ্বেতশুভ্র কালো কারুকার্য খচিত শাড়ি পরিহিত প্রধানমন্ত্রীকে শোকার্ত দেখাচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশ। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ফাতেহা পাঠ ও পিতা বঙ্গবন্ধু, মাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া-মোনাজাত করেন। পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শোক দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন জাতির পিতার সমাধিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বিনম্র শ্রদ্ধা জানান। বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠানে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, প্রধানমন্ত্রীর চাচা বাংলাদেশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ অংশ নেন। শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত ১৫৪ কিমি সড়কে কালো কাপড় দিয়ে অসংখ্য তোরণ নির্মাণ করে শোকাবহ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। গোপালগঞ্জ থেকে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত পথে পথে কালো পতাকা টানানো হয়। টুঙ্গিপাড়ার সর্বত্র ছিল কালো পতাকা। টাঙানো হয় ব্যানার, ফেস্টুন।

সর্বশেষ খবর