বুধবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিত্যপণ্য বাজারে সমিতির নামে সিন্ডিকেট

মাঠে নামছে প্রতিযোগিতা কমিশন নেবে আইনি ব্যবস্থা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ছোট একটি ডিম, যাকে মুঠোয় পুরে রাখা যায়- তাকে হাতের মুঠোতে রেখেই দাম বাড়াতে কলকাঠি নাড়ছে অন্তত ছয় থেকে সাতটি সংগঠন। খামার থেকে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছাতে একটি ডিমের সঙ্গে যেসব সংগঠনের নাম যুক্ত হয়, তার মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ), বাংলাদেশ পোলট্রি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন, এগ প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)।

ওপরের এই পাঁচ অ্যাসোসিয়েশনের হাত ঘুরে রাজধানীতে ভোক্তার হাতে যাওয়ার আগে মধ্যবিত্তের আমিষ জোগানোর এই খাদ্যটি যায় তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির হাতে। আর এভাবেই ৭ টাকার ডিম সমিতির হাত ঘুরতে ঘুরতে ভোক্তার হাতে পৌঁছানোর আগে হয়ে যায় ১৪ টাকা।

শুধু কি রাজধানী! নানা নামে সারা দেশেই এ ধরনের সমিতির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। ঢাকার অদূরে সাভারে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সাভার পৌর ডিম ব্যবসায়ী সমিতি। চট্টগ্রামের ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে পাহাড়তলি ডিম ব্যবসায়ী সমিতি।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এসব সমিতির নামে সিন্ডিকেট কার্যক্রম তদন্তে মাঠে নামছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন বাজারে কথিত ‘কমিশন ব্যবসা’র হদিস পেলেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচনের আগে একটি চক্র অহেতুক কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের দাম বাড়াতে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে বলে মনে করছে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। আর দাম বাড়ানোর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে বাজারভিত্তিক বিভিন্ন সমিতির নামে কমিশন। সূত্র জানায়, এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সম্প্রতি প্রতিযোগিতা কমিশন একটি বৈঠক করে। ওই বৈঠকের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরে সভার কার্যবিবরণী গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

কার্যবিবরণীর তথ্য অনুযায়ী কমিশন যে দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে : (১) বিভিন্ন সমিতির নামে বিভিন্ন সেক্টরে বিদ্যমান সিন্ডিকেট বা প্রতিযোগিতাবিরোধী কর্মকান্ডের যথাযথ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং (২) বিভিন্ন বড় বাজারে বিদ্যমান তথাকথিত ‘কমিশন ব্যবসা’র বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা আইনের ধারায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্ত্তী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিভিন্ন পণ্যের নামে বা বাজারভিত্তিক যেসব সমিতি রয়েছে সেগুলোর কার্যক্রম খতিয়ে দেখব আমরা। তদন্তে সমিতি বা বাজারগুলোর কার্যক্রম যদি আমাদের (প্রতিযোগিতা কমিশন আইন, ২০১২) আইনে আমলযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রমাণিত হয়- তবে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কমিশনের অনুসন্ধান কার্যক্রমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও যুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি। উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনের শুরুতে শুধু ডিম সংশ্লিষ্ট সমিতিগুলোর তথ্য তুলে ধরা হলেও প্রতিযোগিতা কমিশনের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, তাদের অনুসন্ধানে সব ধরনের নিত্যপণ্যের তালিকাই থাকবে। যে পণ্যের নামেই সমিতি হোক- তা সিন্ডিকেট বা কমিশন গ্রহণে যুক্ত প্রমাণিত হলে মামলা হবে। আর মামলায় বাদী হবে খোদ প্রতিযোগিতা কমিশন।

 

সর্বশেষ খবর