বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
সিরিজ বোমা হামলার ১৮ বছর

বিচার বন্ধ সাক্ষীর অভাবে

নিম্ন আদালতেই ঝুলছে ৪১ মামলা, সাক্ষী আসছে না গ্রেফতারি পরোয়ানায়ও, দ্রুত শেষের আশা আইনমন্ত্রীর

আরাফাত মুন্ন

বিচার বন্ধ সাক্ষীর অভাবে

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। ঢাকার রাস্তায় ছিল প্রতিদিনের মতো যানজট। মানুষ ছুটছিল যার যার গন্তব্যে। ১৮ বছর আগে আজকের দিনটি শুরু হয়েছিল স্বাভাবিক অন্য একটি দিনের মতোই। কিন্তু হঠাৎই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বোমার বিকট শব্দে কর্মচঞ্চল মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। শুধু রাজধানী ঢাকাই নয়, সেদিন মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে ৬৩ জেলার ৪৫০ স্থানে একযোগে ৫ শতাধিক বোমা ফাটান নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা।

এ ঘটনার পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৫৯টি মামলা দায়ের হয়। তবে মামলাগুলোর বিচার গতি পায়নি। সাক্ষী না পাওয়ায় বিচার এক প্রকার বন্ধ হয়ে আছে ৪১ মামলার। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সাক্ষী হাজিরের দায়িত্ব পুলিশের। আদালত থেকে সমন, এমনকি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও পুলিশ সাক্ষী হাজির করতে পারছে না। তাই মামলাগুলো শেষ হচ্ছে না। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, মামলাগুলো অনেক পুরনো হওয়ায় সাক্ষীদের ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে। মামলার নথির উল্লিখিত ঠিকানায় তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ মামলাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর নেই। এখন যে কোনো অপরাধেরই বিচার হয়। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে যে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল, ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর বিচার চলমান। অনেক মামলার রায় এরই মধ্যে হয়েছে। আশা করি বাকি মামলাগুলোর বিচারও দ্রুতই শেষ হবে।

ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) একযোগে চালানো এ হামলায় দুজন নিহত হন। আহত হন ২ শতাধিক। হামলা চালানো হয় সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেস ক্লাব, সরকারি ও আধাসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কাছে।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্যানুযায়ী, সিরিজ বোমা হামলার এ ঘটনায় ঢাকাসহ দেশের ৬৩ জেলায় ১৬২টি মামলা হয়। তিনটি খারিজ হওয়ায় অবশিষ্ট থাকে ১৫৯টি মামলা। এ মামলাগুলোর মধ্যে ১৪৩টিতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। এসব মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ১ হাজার ১৩১ জনকে। এদের মধ্যে ১ হাজার ২৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি ১৬ মামলায় ঘটনার সত্যতা থাকলেও আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। আদালতসূত্র জানান, চার্জশিট দেওয়া ১৪৩ মামলার মধ্যে সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ১০২টি মামলায় নিম্ন আদালতে রায় হয়েছে। এর মধ্যে গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গায় সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলার অন্যতম আসামি শায়খুল ইসলাম সাইফুল ওরফে রাকিবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বর্তমানে আরও ৪১টি মামলা নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ পর্যন্ত রায়ে সাজা হয়েছে ৩২২ জনের। আর খালাস পেয়েছেন ৩৫৮ জন। দায়েরকৃত মামলার মধ্যে ডিএমপিতে ১৮টি, সিএমপিতে ৮টি, আরএমপিতে ৪টি, কেএমপিতে ৩টি, বিএমপিতে ১২টি, এসএমপিতে ১০টি, ঢাকা রেঞ্জে ২৩টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১টি, রাজশাহী রেঞ্জে ৭টি, খুলনা রেঞ্জে ২৩টি, বরিশাল রেঞ্জে ৭টি, সিলেট রেঞ্জে ১৬টি, রংপুর রেঞ্জে ৮টি, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৬টি ও রেলওয়ে রেঞ্জে ৩টি মামলা দায়ের হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু বলেন, ঢাকার আদালতে সিরিজ বোমা হামলার ১৭টি মামলা ছিল। এর মধ্যে এখন ৫টির বিচার চলছে। আমরা মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বারবার সমন দিয়েও সাক্ষী পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, সাক্ষী হাজিরের দায়িত্ব পুলিশের। সমনের পাশাপাশি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও পুলিশ সাক্ষী আনতে পারে না। এজন্য মামলাগুলো শেষ করা যাচ্ছে না। জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে আদালতের ধার্য তারিখে সাক্ষীদের হাজির করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু মামলাগুলো অনেক পুরনো হওয়ায় সাক্ষীদের ঠিকানা পরিবর্তন হয়েছে। মামলার নথিতে থাকা ঠিকানা অনুযায়ী তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’ সূত্র জানান, ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ ৯৬১ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবিপ্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল ও ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর