শুক্রবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ছাত্রলীগ পুলিশ প্রশাসনে এত সাঈদীভক্ত এলো কোথা থেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর তার প্রতি সমবেদনা জানাতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মীকে। একইভাবে সমবেদনা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন জনপ্রতিনিধি, পুলিশ সদস্য ও প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের এসব কর্মকাণ্ডে হতবাক মানুষ। প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই- ছাত্রলীগ, পুলিশ-প্রশাসনে হঠাৎ এত সাঈদীভক্ত এলো কোথা থেকে।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত সাঈদীর মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন শিক্ষক ও পুলিশ কর্মকর্তাও। মামলা হয়েছে জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর পর ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী শোক প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি আমাকে অবাক করেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ওপেন ডোর পলিসি বন্ধ করতে হবে। দলে লোক ঢুকানোর সময় অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে ঢোকাতে হবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, দলে হাইব্রিড নেওয়ার চেয়ে, দল কর্মীশূন্য থাকা ভালো। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মানতে হবে। সাঈদীভক্ত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

বিচারপতি মানিক আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মৃত্যুর পর পুলিশ ও প্রশাসনের কিছু লোকও শোক প্রকাশ করেছে। এটা তাদের চাকরিবিধির লঙ্ঘন। সরকারি চাকরি করে তারা কখনোই একজন স্বাধীনতাবিরোধীর পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না। এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

চট্টগ্রামে শিক্ষকদের শাস্তি দাবি, আট ছাত্রলীগ নেতাকে অব্যাহতি : চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা সাজাপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যুতে চট্টগ্রামের কয়েকজন শিক্ষক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন। তাদের এ স্ট্যাটাসে বিরূপ প্রক্রিয়া দেখা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শিক্ষকদের মধ্যে। এরই মধ্যে এক মাদরাসা শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রশংসা করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকে অব্যাহতি ও দুজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অব্যাহতি দেওয়া ছয় নেতা হলেন- চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি গাজী আমজাদ, সহসভাপতি মো. তাউসিফ, উপদফতর সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুম ও সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মো. রুস্তম, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. আফসার ও পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান। এ ছাড়া বহিষ্কার করা হয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের উপ-কর্মসংস্থান সম্পাদক মো. সাজেদুল হক সাজ্জাদ ও সহসম্পাদক শাহাজাহান হাবিবকে।

সাতক্ষীরা ছাত্রলীগের তিন নেতা বহিষ্কার : সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রশংসা করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় সাতক্ষীরায় তিন ছাত্রলীগ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ। এ ছাড়া তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্র কমিটি বরাবর সুপারিশ করা হয়েছে। বুধবার রাতে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. সুমন হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়েছে। অব্যহতিপ্রাপ্তরা হলেন- তালা উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. সাইফুদ্দিন আজাদ সবুজ ও মাঈনুল ইসলাম মাসুম এবং সীমান্ত আদর্শ কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশিক কবির।

শাস্তির মুখে পুলিশ কর্মকর্তা : রাজশাহী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, যুদ্ধাপরাধ মামলায় আজীবন দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে শাস্তির মুখে পড়তে যাচ্ছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের পরিদর্শক খাইরুল ইসলাম। তিনি রাজশাহী মহানগর পুলিশের কোর্ট ইন্সপেক্টর পদে কর্মরত। পোস্টটি নজরে আসার পর মহানগর পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার আরএমপির সাইবার ইউনিটকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। বুধবার দুপুরে আরএমপির সাইবার ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) উৎপল কুমার চৌধুরী পুলিশ কমিশনারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগের ১৭ নেতা-কর্মী বহিষ্কার : ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদ প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় ছাত্রলীগের ১৭ নেতা-কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগ। তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। বুধবার বিকাল ও রাতে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি তার নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন। বহিষ্কৃত ১৭ নেতা-কর্মীর মধ্যে জেলার কসবা উপজেলার ৭ জন, আখাউড়া উপজেলার চারজন, সরাইল উপজেলার চারজন এবং আশুগঞ্জ ও নবীনগর উপজেলার একজন করে রয়েছেন।

আদমদীঘিতে তাঁতী লীগের সম্পাদককে অব্যাহতি : বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আহসান হাবীবকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতে বগুড়া জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক রাশেকুজ্জামান রাজনের যৌথ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ১৪ আগস্ট ফেসবুকে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর পক্ষে ও ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস নিয়ে বিতর্কিত স্ট্যাটাস দেওয়ার দায়ে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- ভোলাহাট উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহনাজ শিমু, পোস্টদাতা উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের নিমগাছি এলাকার জমসেদ আলীর ছেলে ও ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি সোহেল রানা, হোসেন ভিটা এলাকার আবদুস শুকুরের ছেলে বাইরুল ইসলাম, মুশরিভুজা-খড়কপুরের আলমাস আলীর ছেলে মিনহাজুল ও খড়কপুরের জাহির হোসেনের ছেলে সাগর আলী। বুধবার রাতে মামলাটি দায়ের করেছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব।

সর্বশেষ খবর