শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

পাঁচ বছরের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে ডেঙ্গু

বেশি আক্রান্ত পুরুষ, মৃত্যু বেশি নারীর; সর্বোচ্চ আক্রান্ত আগস্টে; নিয়ন্ত্রণে ছিল করোনার দুই বছর

শামীম আহমেদ

পাঁচ বছরের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে ডেঙ্গু

ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যায় বিগত পাঁচ বছরের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে দেশ। ২০১৮ সাল থেকে ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালে। ওই বছর হাসপাতালে ঠাঁই নেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ ডেঙ্গু রোগী। ২০২০ সালে করোনা মহামারি হানা দিলে কমে যায় ডেঙ্গুর দাপট। পরে আবার বাড়তে থাকে। চলতি বছরের ১৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে মোট ৯৫ হাজার ৮৭৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিদিন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন দেড় থেকে ২ হাজার মানুষ। সেই হিসাবে আর তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যায় ২০১৯ সালের রেকর্ড ভাঙতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে ১ হাজার ৫৬৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ৯ জন। আগের দিনও মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের, আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ২৮৮ জন। চলতি বছওে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫ হাজার ৮৭৭ জন। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৫৩ জন। বেশিরভাগ মৃত্যুই হয়েছে দেশের সব বড় বড় আধুনিক হাসপাতালের শহর ঢাকায়। ৪৫৩ জনের মধ্যে ঢাকা সিটিতেই প্রাণ গেছে ৩৪৩ জনের, ঢাকা সিটির বাইরে মারা গেছেন ১১০ জন।

এদিকে আশ্চর্যজনকভাবে করোনা মহামারির দুই বছর এডিস মশা নিধনে তেমন কোনো তৎপরতা না থাকলেও কমে যায় ডেঙ্গুর দাপট। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ডেঙ্গু আক্রান্তের ঘটনা ঘটে ২০২০ সালে। ওই বছর মাত্র ১ হাজার ৪০৫ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জন, ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন, ২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫ জন, ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯ জন, ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। অন্যদিকে চলতি বছরের আট মাস পার না হতেই ডেঙ্গু রোগী ৯৬ হাজার ছুঁই ছুঁই। করোনার সময় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডব্লিউএইচও সতর্কতা জারি করেছে, বিশ্বের অর্ধেক মানুষ এখন ডেঙ্গু ঝুঁকিতে। করোনার দুই বছর আমরা স্বাস্থ্য সচেতন ছিলাম। রাস্তাঘাট পরিস্কার ছিল। নিজেরা ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি ঘরবাড়িও পরিষ্কার রেখেছি। ব্লিচিং ছিটিয়েছি। আর পানিতে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্লিচিং দিলে এডিস মশা ডিম পাড়তে পারে না। এসব কারণে হয়তো তখন ডেঙ্গুর প্রভাব কমে গিয়েছিল। এখন আমাদের সেই সচেতনতা চলে গেছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনকে যেমন মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে, সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। পানি জমতে দেওয়া যাবে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকেই দেশে ডেঙ্গুর প্রভাব ছিল। জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন আক্রান্ত হন, মারা যান ছয়জন। সর্বনিম্ন আক্রান্ত হন মার্চে ১১১ জন। মৃত্যু হয়নি কারও। এপ্রিলে কিছুটা বাড়ে। আক্রান্ত হন ১৪৩ জন, দুজন মারা যান। মে মাসে আক্রান্ত হন ১ হাজার ৩৬ জন, মারা যান দুজন। জুনে আক্রান্ত হন ৫ হাজার ৯৫৬ জন। মৃত্যু হয় ৩৪ জনের। জুলাইয়ে এক লাফে আক্রান্তের সংখ্যা দিয়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৮৫৪ জনে। মারা যান ২০৪ জন। আগস্টে আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ৪৪ হাজার ৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২০২ জন। এদিকে ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে পুরুষ। মৃত্যু বেশি হচ্ছে নারীর। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের ৬২.৪ শতাংশ পুরুষ ও ৩৭.৬ শতাংশ নারী। অন্যদিকে পুরুষ মারা গেছেন ১৯৪ জন। নারী মারা গেছেন ২৫৯ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। এদিকে চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা মশার ওষুধের বাইরে রয়েছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিধনকর্মীরা অনেক এলাকায় যান না। গত বছর মশা নিধনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্প্রে করতে দেখা গেলেও এবার সেই তৎপরতা চোখে পড়ছে না।

সর্বশেষ খবর