সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৯ বছর

বিভীষিকাময় সেই দিন কী ঘটেছিল

বিচারপতি অসুস্থ থাকায় শুনানি বন্ধ- এ বছরই নিষ্পত্তির আশা আইনমন্ত্রীর - সাজা বহালে যুক্তি উপস্থাপন করব -- অ্যাটর্নি জেনারেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিভীষিকাময় সেই দিন কী ঘটেছিল

আজ রক্তাক্ত বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট। বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের ১৯তম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ শান্তির শোভাযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় ঝরে যায় ২৪টি প্রাণ। আহত হন দলীয় ৫ শতাধিক নেতা-কর্মী। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এ হত্যাকান্ড চালানো হয়। সেদিন রক্তঝড়ের প্রচ-তায় মলিন হয়ে গিয়েছিল বাংলা ও বাঙালির মুখ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ সেদিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড সমাবেশের জন্য ব্যবহƒত ট্রাকে বিস্ফোরিত হলে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কোনো সিনিয়র নেতাই প্রাণে রক্ষা পেতেন না। আর এটাই ছিল ঘাতকচক্রের মূল পরিকল্পনা। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আয়োজিত সে সমাবেশ বিকাল ৪টা থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষে কানায় কানায় ভরে ওঠে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি খোলা ট্রাকে বানানো উন্মুক্ত মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। বিকাল ৫টার দিকে সমাবেশস্থলে পৌঁছান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ট্রাকে তাঁর সঙ্গে প্রয়াত জিল্লুর রহমান, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আবদুল জলিল, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতা-নেত্রী ছিলেন। প্রায় ২০ মিনিট বক্তৃতা দেন শেখ হাসিনা। সময় তখন বিকাল ৫টা ২২। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তৃতা শেষ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগোতে থাকলেন ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে। কয়েকজন ফটোসাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকন্যাকে একটু দাঁড়াতে বললেন ছবি তোলার জন্য। মুহূর্তেই শুরু হলো নারকীয় গ্রেনেড হামলা।

তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচালিত পৈশাচিক এ হামলায় সেদিন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মীসহ অনেক সাধারণ মানুষ। সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মানববর্ম তৈরি করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন তাদের প্রধান টার্গেটে থাকা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় ছয় রাউন্ড গুলি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও আহত হন, তাঁর শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার সময় আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর চার নেতাকেও ষড়যন্ত্র করে কারাগারে হত্যা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার হীন প্রচেষ্টা চালানো হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্পেশালাইজড মারণাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।’ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পেছনে ছিলেন তৎকালীন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা, কয়েকজন শীর্ষ জঙ্গি আর পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের মতোই ২১ আগস্টের হামলার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করা হয়েছিল। ওই সময়ের কিছু সামরিক কর্মকর্তা আর জঙ্গি নেতাদের নিয়ে হাওয়া ভবনে বসে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আশ্বাসে সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়। হামলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের পাকিস্তানে ট্রেনিং দেওয়া হয়। ট্রেনিংয়ের পর তাদের আর্জেস গ্রেনেডও সরবরাহ করে দেশটি। আর হামলা শেষে পাকিস্তান ঘাতকদের আশ্রয়ও দেয়। ১৯ বছর আগে ২০০৪ সালের এই দিনে মুহুর্মুহু গ্রেনেডের বিকট বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। মানুষের আর্তনাদ আর কাতর ছোটাছুটিতে সেখানে তৈরি হয় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির। আহতদের অনেকেই এখনো শরীরে গ্রেনেডের স্পি­ন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন। স্পি­ন্টারের আঘাতে কেউ হারিয়েছেন চোখ, কারও গেছে চলার ক্ষমতা, কেউ হারিয়েছেন শ্রবণশক্তি। অনেকে প্যারালাইজড হয়ে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করছেন। এত বছর পরও স্পি­ন্টারের যন্ত্রণায় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না তারা। 

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আজ বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। ১১টা ১৫ মিনিটে নিহতদের স্মরণে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর