বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়ে তিন সংকট

স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহারে অনুমতি চান বিদেশিরা

গোলাম রাব্বানী

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক আনা নিয়ে তিন সংকট দেখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ সংকট সমাধানে বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালায় আনতে হবে পরিবর্তন। গতকাল সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক আনা নিয়ে নির্বাচন কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে করেছে। নির্বাচন ভবনে বেলা ১১টায় কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়, চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা বিদেশি পর্যবেক্ষক আনা নিয়ে কী কী সংকট হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করেন। সূত্র জানিয়েছেন, প্রথমত বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বেশিদিনের জন্য আসতে চান; কিন্তু বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা স্বল্প মেয়াদে তিন সপ্তাহ বা দীর্ঘ মেয়াদে দুই মাসের বেশি দেওয়ার সুযোগ নেই। দ্বিতীয়ত, বিদেশি পর্যবেক্ষকরা স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার, ভেহিকল ট্র্যাকার ব্যবহারসহ বেশকিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে চান; কিন্তু নীতিমালায় এসব আনার পদ্ধতি নিয়ে কিছু বলা নেই। তৃতীয়ত, বিগত সময়ে অনভিজ্ঞদের বিদেশি পর্যবেক্ষক সাজিয়ে আনায় নানা সমালোচনা হয়েছে। তা নিয়ে সংকটও সৃষ্টি হয়েছিল। এজন্য এবারে অভিজ্ঞ বিদেশি পর্যবেক্ষক আনা নিয়ে নীতিমালা পরিবর্তনের চিন্তা করা হচ্ছে। গতকাল কমিশনের বৈঠকে এসব সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব সংকট সমাধানে আগামী সপ্তাহের বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।

এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে চায় নির্বাচন কমিশন। গতকাল বৈঠক শেষে এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা নিয়ে বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আমাদের আরও সভা করতে হবে। পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এনবিআর, তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা করেছি। আমাদের বর্তমান যে নীতিমালাটি আছে, সেটি পর্যালোচনা করেছি। কোন কোন পয়েন্ট যুযোপযোগী করা প্রয়োজন তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আগামী সপ্তাহে আমরা আবারও বসব। আরও দু-একটি সভা করে আমরা খসড়া চূড়ান্ত করে কমিশনে উপস্থাপন করব। কমিশন অনুমোদন দিলেই চূড়ান্ত হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা নীতিমালাটি এমনভাবে করছি যাতে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য সহায়ক হয়, ব্যবহারবান্ধব হয়।’ নীতিমালার কয়টি জায়গায় পরিবর্তন আসতে পারে? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে খসড়া চূড়ান্ত করতে পারব। এটা চূড়ান্ত হওয়ার পর কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি যাবে। তারা আবেদন করবে। আবেদন অনুযায়ী যে পদ্ধতি থাকবে সে অনুযায়ী অনুমোদন পেয়ে তারা পর্যবেক্ষক হিসেবে আসতে পারবে।’ বৈঠকের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের ভিসা দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। একটি বিদেশি পর্যবেক্ষণ মিশন জানিয়েছে, তারা পর্যবেক্ষণে এলে দীর্ঘ সময় থাকতে চায়। বিদ্যমান নীতিমালায় বলা আছে পর্যবেক্ষকদের স্বল্প মেয়াদে তিন সপ্তাহ এবং দীর্ঘ মেয়াদে দুই মাসের ভিসার কথা। যদি কেউ এর চেয়ে বেশিদিন থাকতে চান, তাহলে কী হবে, তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। যদিও বৈঠকে মতামত এসেছে, প্রয়োজনে ভিসার মেয়াদ পরে বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ ‘ব্রডব্যান্ড গ্লোবাল অ্যারেনা নেটওয়ার্ক (বিজিএএন)’ সুবিধা, স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার, ভেহিকল ট্র্যাকার ব্যবহারসহ বেশকিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে চান। বিদ্যমান নীতিমালায় এসব আনার পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু বলা নেই। এটি নিয়েও সংকট হতে পারে। এ ছাড়া বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বিগত নির্বাচনে বিদেশিদের সাজিয়ে আনা এবং একটি সংস্থার সম্প্রতি দেশে আনা বিদেশি নাগরিকদের নিয়ে সমালোচনা হওয়ার বিষয়টি। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে অনভিজ্ঞরা যাতে বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে আসতে না পারে। এজন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পূর্বাভিজ্ঞতা থাকার বিষয়টি নীতিমালায় যুক্ত করার পরামর্শ এসেছে বৈঠকে।

সর্বশেষ খবর