শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বনেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনা

ব্রিকসকে বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আহ্বান, পাঁচ দফা প্রস্তাব

বিশেষ প্রতিনিধি

বিশ্বনেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনা

ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে আলাপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি : পিএমও

বিশ্ব অর্থনীতির এক-চতুর্থাংশের নিয়ন্ত্রণকারী পাঁচ দেশের জোট ব্রিকসের সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক, সাক্ষাৎ ও কুশলবিনিময় করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর কথা হয়েছে বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে।

ব্রিকস সম্মেলনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বাইরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ও সাক্ষাৎ হয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান অল-সাউদ, উগান্ডার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেসিকা রোজ আলুপ্পোসহ, মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপে জ্যাচিনতো নাইওসিরসহ বিভিন্ন দেশের নেতার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রধানমন্ত্রীর কর্মব্যস্ততা সম্পর্কে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট বুধবার রাতে জোহানেসবার্গের গ্যালাঘের এস্টেট, মিড্রান্ডে তাঁর আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে এক নৈশভোজের আয়োজন করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কয়েক গজ দূরে থাকা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার কাছে হেঁটে গিয়ে কুশল বিনিময় করেন এবং কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পরস্পরের খোঁজখবর নেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাসহ অন্য কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। মোমেন বলেন, খুবই সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে তারা কুশল বিনিময় করেন। গতকাল সকালে জোহানেসবার্গের স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে ৭০টি দেশের প্রতিনিধি নিয়ে ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডারস ডায়ালগ (ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড দ্য ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ) ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ব্রিকস’-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সাইডলাইনে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে আসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে একটি ফটোসেশনেও অংশ নেন। ব্রিকস লিডারস ডায়ালগে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের এই বহুমুখী বিশ্বে ব্রিকসকে একটি বাতিঘর হিসেবে প্রয়োজন। আমরা আশা করি আমাদের প্রতি প্রতিক্রিয়ার সময় এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফরম হিসেবে আবির্ভূত হবে। আমাদের শিশু ও যুবকদের কাছে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, আমাদের জাতিগুলো সংকটে পড়তে পারে, কিন্তু কখনই পরাজিত হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া তথাকথিত পছন্দ ও বিভাজনকে ‘না’ বলা উচিত। সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টা আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সবাইকে সব ধরনের হুমকি, উসকানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমি বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে এসে বিশ্বব্যাপী জনগণের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগসহ নিয়মভিত্তিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থা সংরক্ষণ করতে হবে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   ছবি : পিএমও

পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন : গতকাল স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্লোবাল সাউথে আমাদের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এসডিজি-৫ অর্জনের জন্য আমাদের সবার হাতে হাত রেখে চলা উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এ লক্ষ্যে পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রথম প্রস্তাবে বলেন, আমাদের নারী ও মেয়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলমান খাদ্য, শক্তি ও আর্থিক সংকটের বিরূপ প্রভাব প্রশমিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, তিনি আমাদের মেয়েদের স্কুলে রাখতে, তাদের সাইবার অপরাধ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ও তাদের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল বিভাজন কমানোর জন্য প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানান। অনেক মেয়েই এ সমস্যার সম্মুখীন হয়। শেখ হাসিনার তৃতীয় প্রস্তাবে নারীদের লাভজনক কর্মসংস্থান, শালীন কাজ, মজুরিসমতা ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তাঁর চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী একটি সক্রিয় ও টেকসই রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য নারীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পাশাপাশি জলবায়ুর প্রভাবের কারণে নারীদের সুরক্ষা ও টিকে থাকার ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীতার ওপর গভীরভাবে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিয়োম্যাটিক অ্যাম্বাসাডর এবং অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর