শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
চূড়ান্ত আন্দোলন সেপ্টেম্বরে

সারা দেশে বিএনপির বার্তা

♦ প্রস্তুত থাকতে হবে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে ♦ তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ হাইকমান্ডের ♦ আজ ঢাকায় কালো পতাকা মিছিল

শফিউল আলম দোলন

সারা দেশে বিএনপির বার্তা

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ দিতে সেপ্টেম্বর মাসকেই টার্গেট করেছে বিএনপি। পুরো মাসেই রাজপথ দখলে রেখে লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। লক্ষ্য একটাই- সরকারের অবস্থান নড়বড়ে করে দিয়ে এক দফা আদায়। এ লক্ষ্যে সারা দেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র ঘোষিত যে কোনো কর্মসূচি ও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব নেতা-কর্মীকে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে মানসিকভাবে। মূল দল ছাড়াও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রতি একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে এবারের আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতেই হবে’- এমন কড়া নির্দেশ পেয়েছেন তারা। দলের শীর্ষ পর্যায়ের এবং কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও স্থানভেদে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন দলের হাইকমান্ড। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, কঠোর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে নেতা-কর্মীদের। বেশ কয়েকজনকে এরই মধ্যে সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে দায়িত্বে অবহেলার কারণে। দলের স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠক ও বুধবার বিকালে বিএনপির সাংগঠনিক নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে এমন বার্তা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত কয়েক দিনে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে ধাপে ধাপে বৈঠক করেছেন তিনি। বৈঠকে ঢাকার আন্দোলন প্রস্তুতির বিষয়টি সর্বাধিক প্রাধান্য পায়। সেপ্টেম্বর ঘিরে অনেককেই নির্দিষ্ট করে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান ও ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ঘোষণা হলে সে ক্ষেত্রে কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে, সে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে বাধা এলে নেতা-কর্মীদের কী করণীয় তাও জানানো হয়েছে। পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার বার্তা দিয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড। একই সঙ্গে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দফতর নজরদারিতে রাখছেন তিনি। নীতিনির্ধারণী মহলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী মাসেই ঢাকায় লাগাতার কর্মসূচির রোডম্যাপ প্রস্তুত করেছে বিএনপি। ঢাকায় মহাসমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচিসহ ভিন্ন ধরনের কর্মসূচির কথাও ভাবছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। লাগাতার কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে চলতি মাসেই বিভিন্ন কর্মসূচিকে ‘ওয়ার্মআপ’ হিসেবে নিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে সেপ্টেম্বরে লাগাতার কর্মসূচির প্রস্তুতি নিতে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরামের সদস্যরা। ২৯ জুলাই ঢাকায় প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচির প্রস্তুতির ঘাটতি ও দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি মাথায় নিয়েই আবারও ঢাকার আন্দোলনে দৃষ্টি রাখছেন নীতিনির্ধারকরা। পূর্বে কোন নেতা কোথায় কী ধরনের দায়িত্ব পালন করেছেন লাগাতার আন্দোলনে যাওয়ার আগে এরও তালিকা করা হচ্ছে। পুলিশের গ্রেফতার, দমন-পীড়নের বিষয়টি মাথায় রেখে একাধিক সিনিয়র নেতাকে সমন্বয়ক হিসেবে রাখা হয়েছে। গায়েবি মামলার বিষয়গুলো আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি কীভাবে সফল করে তোলা যায় সে ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিরোধী জোট ও সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আগামী মাসে ঢাকামুখী আন্দোলন জোরদার করতে সবাই একমত। এবার রাজধানীতেই আন্দোলন জোরদার করতে চাইছেন নেতারা। এ জন্য নেতা-কর্মীদের সুসংগঠিত করতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতারা মহানগর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরামর্শ ও নির্দেশনা দিচ্ছেন। সক্রিয় নেতাদের সামনে আনা হচ্ছে। এ জন্য বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সমন্বয় কমিটিতে রাখা হচ্ছে পদে নেই এমন নেতাদের। একই সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কার্যক্রমও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দেশ, জাতি ও দলের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এই সময়ে যারা দায়িত্ব পালনে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তাদের পরিবর্তে অন্য নেতাদের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে মাথায় রাখছেন নীতিনির্ধারকরা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ প্রসঙ্গে বলেন, এ আন্দোলন আজ শুধু বিএনপির নয়, সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল ও জনগণের। অভীষ্ট লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তবে মানুষের অংশগ্রহণ ও জাগরণ বলে দিচ্ছে যে জনতার বিজয় এবার অনিবার্য।

জানা যায়, আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ দিতে এরই মধ্যে একাধিক রোডম্যাপ প্রস্তুত করেছে দলটি। সরকারের পতন নিশ্চিতে ধারাবাহিকভাবে সম্ভাব্য কঠোর কর্মসূচির পাশাপাশি বিকল্প কর্মসূচি হাতে নিয়েই এবারের আন্দোলন সফল করতে চান বিএনপি নেতারা। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বুধবার বলেছেন, নিশ্চিত পরিবর্তন আসছে এবার। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এই সরকারকে হটাতে হবে। বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করতেই হবে। এ জন্য বড় রকমের ঝাঁকুনি দরকার, যুদ্ধ দরকার। সুনামির মতো অভ্যুত্থান তৈরি করে এই স্বৈরাচারী সরকারকে সরাতে হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এবার জনতার আন্দোলনের ফসল ঘরে উঠবে। এই সরকারকে হটাতে বিএনপি সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে রাজপথে থাকবে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ঢাকাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ-সংগঠনগুলো লাগাতার কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সবাইকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সরকারের এত অত্যাচার, নির্যাতন, মামলা, হামলা সত্ত্বেও আমরা কর্মসূচি পালন করে আসছি। বাধা দিলে তাৎক্ষণিকভাবেই এবার পাল্টা জবাব দেবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।’ দলের অপর একজন সিনিয়র নেতা বলেন, ‘এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে ঢাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি আছে। অতীতের ব্যর্থতাকে আমরা অতিক্রম করছি। ঢাকায় বিএনপির শক্তি প্রদর্শন ও সাংগঠনিক শক্তি যাচাইয়ে সাম্প্রতিককালে মহানগরগুলোতে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সিনিয়র নেতাদের ঢাকার বাইরের বিভিন্ন কর্মসূচিতে পাঠানো হচ্ছে, যাতে ঢাকায় মহানগর দুটির নেতারা নিজেরাই কর্মসূচি পালন ও সফল করতে পারেন। এটা থেকে বোঝা যায়, ঢাকা মহানগর বিএনপি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আরও জানা যায়, আগস্ট মাসের গতানুগতিক কর্মসূচি ছাড়াও ধাপে ধাপে সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচির পথেই হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই ফের রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান, ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও এবং লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির মতো কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। এসব কর্মসূচিতে অতীতের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার সমর্থকদের বাধার সম্মুখীন হলেও তাৎক্ষণিকভাবে রাজপথেই তা মোকাবিলা করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

আজ ঢাকায় বিএনপির কালো পতাকা মিছিল : সরকার পতনের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার ঢাকায় কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি। সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল, জোটসহ বিএনপির সমমনা দলগুলোও এ কর্মসূচি পালন করবে। বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে পৃথকভাবে এই কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। বেলা ৩টায় একই সময়ে শুরু হবে উভয় সংগঠনের কর্মসূচি। জোট, শরিক ও সমমনা দলগুলোও কাছাকাছি সময়ে এ কর্মসূচি পালন করবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর শ্যামলী লিংক রোড থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এবং মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত কালো পতাকা গণমিছিল হবে। একই দিন এ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবে সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল, জোট ও বিএনপির সমমনা দলগুলো। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ শাহবাগ, ১২-দলীয় জোট বিজয়নগর, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টন, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি আরামবাগ, এলডিপি পূর্ব পান্থপথ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) ও সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ জাতীয় প্রেস ক্লাব, গণঅধিকার পরিষদ (নূর) ফকিরাপুল কালভার্ট রোড, এনডিএম মালিবাগ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য সেগুনবাগিচা, এবি পার্টি বিজয়নগর শ্রমভবনের সামনে, জনতার অধিকার পার্টি বিজয়নগর পানি ট্যাংকির সামনে থেকে কালো পতাকা মিছিল বের করবে। এই দলগুলোর কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিও দুপুরের পরপরই শুরু হবে। মঙ্গলবার রাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে কালো পতাকা মিছিল এবং আগামীকাল শনিবার দেশের সব মহানগরে গণমিছিল করবে বিএনপি।

সর্বশেষ খবর