শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভাঙাচোরা সড়কে নগরে ভোগান্তি

♦ সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি ♦ অধিকাংশ সড়ক বেহাল ♦ তিন বছরে দুই সিটির খরচ ৯০৮ কোটি টাকা

হাসান ইমন

ভাঙাচোরা সড়কে নগরে ভোগান্তি

যাত্রাবাড়ী কদমতলী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সড়কের অবস্থা বেহাল -রোহেত রাজীব

রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার সড়ক খানাখন্দে ভরা। কোথাও পিচ উঠে গেছে, কোথাও ছোট ছোট গর্ত হয়েছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় সৃষ্ট গর্তের আকার বেশ বড়। এসব গর্তে বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। যাত্রী ও চালকদের ঝুঁকি নিয়ে এসব সড়কে চলতে হচ্ছে। পাড়ামহল্লার অলিগলিরও একই অবস্থা। এ ছাড়া যখন তখন বিভিন্ন সংস্থার অপরিকল্পিত সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছেই। এসব কারণে অন্তহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

সরেজমিন দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী-কুতুবখালী সড়কের এক কিলোমিটার অংশে কার্পেটিং, পিচ, পাথর, সুরকি উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটির সংস্কার শুরু হলেও কাজের ধীরগতির কারণে দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। একই অবস্থা গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকড্রাইভ সড়কে। সড়কটি ২০১৮ সালে সংস্কার করা হয়। এরপর পাঁচ বছরে আর এখানে হাত দেওয়া হয়নি। পুরো সড়কেই ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। কোথাও কোথাও গর্ত এমন বড়, বৃষ্টি হলে সেখানে ছোট পুকুরের মতো দেখায়। কয়েকবার রিকশা উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অনেক ঝুঁকি নিয়ে এ সড়কে মোটরসাইকেল, কাভার্ডভ্যান ও প্রাইভেট কার চলাচল করে। লেকড্রাইভ সড়ক নিয়ে কথা হয় গ্যারেজ কর্মচারী ইসমাইলের সঙ্গে। তিনি বলেন, মরিয়ম টাওয়ার থেকে গুদারাঘাট পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। সড়কটি এক বছরে খানাখন্দে ভরে গেছে। অনেক জায়গায় বড় গর্তও হয়েছে। যেখানে প্রায়শই রিকশা উল্টে যায়। প্রাইভেট কার গর্তে পড়ে যায়। ওই গাড়ির বডির বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়। একই অবস্থা মেরুল বাড্ডার পোস্ট অফিসগলির। সড়কটির মেইন রোড থেকে পাঁচতলা কাঁচাবাজার পর্যন্ত অংশে অসংখ্য খানাখন্দ। একটু বৃষ্টি হলেই এসব গর্তে হাঁটুপানি জমে যায়। ডিআইটি ৪ নম্বর সড়ক ও বাজার রোডেরও একই অবস্থা। বাজার রোডে সংস্কার কাজ চলায় দুর্ভোগ আরও বেশি বলছেন স্থানীয়রা। মাদারটেক-খিলগাঁও সড়কের অধিকাংশ স্থানে পিচ উঠে অসংখ্য ছোট ছোট গর্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও বড় গর্তও হয়েছে। বেটার লাইফ হাসপাতাল থেকে দক্ষিণ বনশ্রী টেম্পো স্টেশন সড়ক বেহাল। এর বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত হয়েছে। সিপাহিবাগ বাজার-গোড়ান বাজার সড়কটির অনেক স্থানেও ছোট-বড় গর্ত হয়েছে। পুরান ঢাকার বাবুবাজার এলাকার সড়কে বড় বড় গর্ত হওয়ায় যানবাহনগুলোকে চলতে হয় হেলেদুলে। বাবুবাজার সেতুর নিচের সড়কে রিকশা-মোটরসাইকেল চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ গেণ্ডারিয়া নতুন সড়কও খানাখন্দে ভরা।

দয়াগঞ্জ মোড় থেকে জুরাইন রেলগেট পর্যন্ত গেণ্ডারিয়া নতুন সড়ক সর্বশেষ সংস্কার হয়েছিল ২০২০ সালে। কাজ শেষ হওয়ার কিছুদিন পরই সড়কটির এক পাশ পদ্মা সেতুর রেল প্রকল্পের অধীনে নেওয়া হয়। বর্তমান সড়কটির এক পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। এ অংশের প্রায় পুরোটাই ব্যবহারের অযোগ্য বলছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালক। টিকাটুলীর কে এম দাস লেন এলাকার মূল সড়কের প্রায় পুরোটা খানাখন্দে ভরা। গোপীবাগ এলাকার বিভিন্ন সড়কেরও একই অবস্থা। খানাখন্দে ভরা সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কমলাপুর বাজার এলাকার রাস্তাটি দীর্ঘদিন ভাঙাচোরা। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া ৩৬ ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়কই বেহাল। এসব ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তা এখনো কাঁচা। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কিছু রাস্তা পাকা করলেও এগুলোর অনেক স্থানে পিচ উঠে ছোট-বড় গর্ত হয়েছে।

রাজধানীজুড়ে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি চলছেই। হাতিরঝিল সড়কটির মগবাজার থেকে রামপুরা অংশে ডিপিডিসি বিদ্যুতের তার মাটির নিচ দিয়ে নিচ্ছে। সেখানে রাস্তা কাটা হয়েছে। রামপুরা ব্রিজ থেকে বনশ্রী সড়কের একাংশে ডিপিডিসি রাস্তা কেটে বিদ্যুতের তার মাটির নিচ দিয়ে নিচ্ছে। কাটার কারণে রাস্তা সরু হয়ে গেছে। সব সময় যানজট লেগেই থাকে সড়কটিতে। একই অবস্থা রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলেও। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তিন বছরে সড়ক সংস্কারে ৯০৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা খরচ করেছে। এরমধ্যে ডিএসসিসি সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নে খরচ করেছে ২৪৩ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ১১১ কোটি ১২ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয় ১০৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে সড়ক উন্নয়নে ২৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি।

ঢাকা উত্তর সিটি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৮৯ কোটি ৫০ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪৩ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৬৪ কোটি এবং সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৫৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে অঞ্চলভিত্তিক সড়ক, ফুটপাত, নালা সংস্কার ও নির্মাণে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে আরও ৬৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক প্রকৌশলী এ বিষয়ে বলেন, বৃষ্টিতে অনেক সড়কেই খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা কাটছে। এতে রাস্তা দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া সড়ক সংস্কারের গুণগতমান ঠিক রাখার ক্ষেত্রে বড় বাধা দুর্নীতি-অনিয়ম। সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে ঠিকাদার নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ম ও যোগ্যতার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে মানা হয় না। ঠিকাদার কাজটি ঠিকমতো করার সক্ষমতা রাখেন কি না, তা দেখাও হয় না। এ ক্ষেত্রে ‘পছন্দ-অপছন্দ’ কাজ করে। আবার ঠিকাদার কাজ ঠিকমতো করছেন কি না, সে তদারকিতেও ঘাটতি থাকে।

ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের বলেন, বৃষ্টিতে কিছু সড়ক নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী-কুতুবখালী সড়কটির সংস্কার কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে অন্য সড়কগুলো সংস্কারে হাত দেওয়া হবে। অলিগলির সড়ক সংস্কারে করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিস কাজ করছে।

জমে থাকা পানি সড়কের শত্রু

ত্বরিতগতিতে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভোগান্তি বাড়ছে

সড়ক সংস্কারে গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন আছে

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর