শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রিগোজিনকে হত্যার নির্দেশের অভিযোগ মিথ্যা : রাশিয়া

প্রিগোজিন ভেবেছিলেন পুতিন তাকে ক্ষমা করবেন : মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রিগোজিনকে হত্যার নির্দেশের অভিযোগ মিথ্যা : রাশিয়া

রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ভাড়াটিয়া সেনাবাহিনী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক জমে উঠেছে। আর বিতর্কের মূল কারণ, এই প্রিগোজিনই দুই মাস আগে হঠাৎ রুশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসেছিলেন। যদিও সে ঘটনা চাপা পড়ে যায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ক্ষমার মনোভাবে। তবে ভিতরে ভিতরে এ নিয়ে রহস্য রয়েই গিয়েছিল, আর তখনই বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রিগোজিনের। মার্কিন মহল থেকে সঙ্গে সঙ্গে বলা হয়, রুশ প্রেসিডেন্টের নির্দেশ মতোই এ ঘটনা ঘটেছে। ভ্লাদিমির পুতিনই তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও রাশিয়া এ অভিযোগকে ডাহা মিথ্যা বলে অভিহিত করেছে। সূত্র : বিবিসি, আলজাজিরা, রয়টার্স, পার্স টুডে।    প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গতকাল ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ক্রেমলিন প্রিগোজিনকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল- এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিবিসির সাংবাদিকদের এক কনফারেন্স কলের সময় পেসকভ একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্ত হওয়া এবং যাত্রীদের মারা যাওয়ার ঘটনা নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। আর পশ্চিমাদের ক্ষেত্রে এ সমস্ত জল্পনা অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকেই হচ্ছে। এগুলো সবই পুরোপুরি মিথ্যা। আমরা যখন এ বিষয়ে কথা বলছি, তখন অবশ্যই আমাদের প্রকৃত ঘটনাটাই বলা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে আসলেই কী ঘটেছে- সে সম্পর্কে আমরা বেশি কিছু জানি না। সরকারি তদন্তের মধ্য দিয়ে প্রকৃত ঘটনাটি স্পষ্ট করে জানা দরকার, যেটি এখন চলছে।’ প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমান বিধ্বস্তের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের করা মন্তব্যেরও কড়া সমালোচনা করেন তিনি।

গণমাধ্যমের খবরগুলোতে বলা হচ্ছে, প্রিগোজিনকে বহনকারী বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনী মস্কোর উত্তরে তিভিয়ের অঞ্চলে বিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে বলে ওয়াগনার সংশ্লিষ্ট টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোনে দাবি করা হয়। ফলে প্রিগোজিনের মৃত্যু নিয়ে বিশ্বজুড়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। যদিও তিনি সত্যিই মারা গেছেন কি না, তা নিয়েও সামান্য হলেও সংশয় রয়ে গেছে। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রিগোজিন মারা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে তিনি যে বিমানে ছিলেন তেমন অকাট্য কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত নেই।

এর আগে ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক আইএসডব্লিউ (ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার) দাবি করেছিল, ‘রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের বিশ্বাস ছিল, গত ২৩ জুনের বিদ্রোহের ঘটনায় তিনি ক্ষমা পেয়ে যাবেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাকে সত্যিই ক্ষমা করে দেবেন।’ আইএসডব্লিউ আরও উল্লেখ করে, ‘ভাগনারের বিদ্রোহ, মস্কো দখল এবং সামরিক কমান্ডারদের উৎখাতের মধ্য দিয়ে পুতিনকে যে ব্যক্তিগতভাবে অপমান করা হয়- এমন বিষয়টিকে হয়তো প্রিগোজিন খুব একটা গুরুত্ব দেননি। তার কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়েছে, তিনি পুতিনের প্রতি তার আনুগত্য নিয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কারণ, পুতিন তার প্রতি অনুগতদের মূল্যায়ন করে থাকেন। অনুগত রুশ কর্মকর্তা ও সামরিক কমান্ডাররা ব্যর্থ হলেও তাদের নিয়মিত পুরস্কৃত করে থাকেন তিনি। কিন্তু প্রিগোজিনের বিদ্রোহের ঘটনাটি ছিল অবাধ্যতার শামিল। যদিও তার দাবি, রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য বজায় রেখেই তিনি বিদ্রোহ করেন।’ আইএসডব্লিউ মন্তব্য করে, ওই বিদ্রোহকে ‘পিঠে ছুরি মারার মতো’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন পুতিন। ফলে অনেক বিশ্লেষকের আশঙ্কা ছিল, বিদ্রোহের পরিণতি মোটেও ভালো হবে না প্রিগোজিনের জন্য।

এদিকে প্রিগোজিনের মৃত্যুর পর প্রথম দিকে রুশ প্রেসিডেন্ট নীরব থাকলেও গত বৃহস্পতিবার তিনি মুখ খোলেন। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘প্রিগোজিনের সঙ্গে আমার পরিচয় বহু দিনের। ৯০ দশকের শুরুর দিকে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। তিনি একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি; যিনি নিজের জীবনে মারাত্মক কিছু ভুল করেছিলেন এবং সেসবের ফলও পেয়েছেন। কুঝেনকিনো অঞ্চলে বিমান দুর্ঘটনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। এটা খুবই হৃদয়বিদারক একটি দুর্ঘটনা।’

আরেক খবরে বলা হয়েছে, বুধবার বিমান দুর্ঘটনায় ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন ও তার ডান হাত হিসেবে পরিচিত দিমিত্রি উতকিনসহ ১০ জন নিহত হওয়ার পর মার্কিন কর্মকর্তাদের কেউ কেউ একথা বলেছিলেন, রাশিয়া হয়তো ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বিমানটিকে ভূপাতিত করে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছিল। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বা পেন্টাগন বৃহস্পতিবার এ ধরনের খবরকে গুজব হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য কোনো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বিমানটিকে আঘাত করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

 

সর্বশেষ খবর