শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বিবৃতি

রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া অনিরাপদ বিকল্প দেশে পুনর্বাসনের আশা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়াকে অনিরাপদ বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল রোহিঙ্গা ঢলের ছয় বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে এ মনোভাবের কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য বিকল্প দেশে পুনর্বাসনের আশা প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ১৪ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ হাজার রোহিঙ্গার পুনর্বাসনের তথ্য জানিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশকে পুনর্বাসনে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া অনিরাপদ। তাই আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, পুনর্বাসনের মাধ্যমে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার সর্বাঙ্গীণ সমাধানে অবদান রাখছি। আন্তর্জাতিক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখা অন্যান্য দেশগুলোর উদারতাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আশা করি, ঐতিহ্যগতভাবে পুনর্বাসন দেওয়া দেশগুলোর বাইরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় যোগ দেবে। ২০০৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ এই অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে স্বাগত জানিয়েছে। যেহেতু এই সংকট সপ্তম বছরে পদার্পণ করছে, সমগ্র অঞ্চলজুড়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে বা শেষ করতে সম্ভাব্য সব বিকল্প খুঁজতে আমাদের অবিচল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বলেছে, রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যাভিযানের ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে। সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে বহনযোগ্য অল্প কিছু জিনিস নিয়ে পালাতে বাধ্য করেছিল শাসকদের এই গণহত্যা। বাংলাদেশের জনগণ সহানুভূতি এবং মানবতার হাত বাড়িয়ে তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। প্রায় এক মিলিয়ন উদ্বাস্তুর প্রতি আতিথেয়তা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের জনগণ। আমরা এই উদারতার প্রশংসা করি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে তার এই প্রচেষ্টায় সমর্থন জানাতে সমবেত হয়েছিল। আমেরিকার জনগণ ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চলজুড়ে উদ্ভূত মানবিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় ২ দশমিক ১ বিলিয়নের ডলারেরও বেশি অবদান রেখেছে। এর ভিতর রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের এই সমর্থন অবিচল রয়েছে। মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, মিয়ানমারের অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। বিশ্বজুড়ে অন্যান্য সংকট যেহেতু সীমিত সম্পদের মধ্যেই সমাধান হয়, সে কারণে রোহিঙ্গারা তাদের আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী এবং নিজ পরিবারের অর্থনৈতিক কল্যাণে কীভাবে অবদান রাখতে পারে তা চিহ্নিত করার প্রয়োজন বাড়ছে। এর মাঝে রয়েছে আয়-উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ড এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রোহিঙ্গা সামাজিক সংস্থাগুলোতে তাদের অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করা। আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে সর্বোত্তম চর্চা, ধ্যান-ধারণা এবং সংস্থান বিনিময়ে উন্মুখ। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে আশ্রয় খুঁজে ফেরা রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে। মর্যাদার সঙ্গে, নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়া, সপরিবারে শান্তিতে বাস করা এবং অর্থ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ পাওয়া তাদের অধিকার। সেই লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি, আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতের সমর্থনের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার, নৃশংস অপরাধীদের জন্য জবাবদিহিতা এবং সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সর্বশেষ খবর