শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিআইডির নজরদারিতে এমটিএফই প্রতারকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমটিএফই অনলাইন প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য জানতে চায় অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ছাড়া অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের তথ্য দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি মাধ্যম চালু করেছে সংস্থাটি। গতকাল সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এসব জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স টিম এ ব্যাপারে নজরদারি করছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রতারক চক্রের তথ্য দিয়ে অভিযোগ জানাতে সিআইডি সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হলো। যোগাযোগের ঠিকানা হলো : ফেসবুক : পেজ https://www.facebook.com/cpccidbdpolice/ ইমেইল : [email protected] এবং ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ নম্বর : ০১৩২০০১০১৪৮ অথবা ৯৯৯। সিআইডি বলছে, মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ ইনকরপোরেটেড বা এমটিএফই অনলাইন বা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ডলার, শেয়ার বা ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচার কানাডা ও দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এমটিএফই অ্যাপসের মাধ্যমে গ্রাহকদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানানো হয় এবং লেনদেন পরিচালনা করা হয়। নিজেদের ছায়া প্ল্যাটফরমে ট্রেড করার সুযোগ দিয়ে এই অ্যাপ সম্প্রতি আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে এর কোনো অফিস না থাকলেও চলতি বছরের জানুয়ারি এর কার্যক্রম শুরু হয়। ঘরে বসে সহজে আয়ের পথ বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউবে ব্যাপক প্রচারণা চালায় তারা। বিভিন্ন ভিডিও ও বিজ্ঞাপন দেখে ভুক্তভোগীরা আগ্রহী হয়। সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয় একজন আরেকজনকে দেখে। এ ক্ষেত্রে রেফারেল বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কাজ করে। এমটিএফইও এমএলএম পদ্ধতিতে কাজ করেছে। বেশি লাভের আশায় লাখ লাখ মানুষ অ্যাপসটিতে বিনিয়োগ করেছে। কিছু মানুষ অবশ্য লাভের অংশ পেয়েছে। তবে চূড়ান্ত বিচারে বিনিয়োগের সব অর্থই খোয়াতে হয় গ্রাহকদের।

ঢাকাসহ বরিশাল, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সাতক্ষীরায় প্রতারণা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- সারা দেশে ৪ থেকে ৫ লাখ গ্রাহক এমটিএফইর মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন।

অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, শুধু এমটিএফই নয়, দেশে এখনো সক্রিয় আছে অনিবন্ধনকৃত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনভিত্তিক এ ধরনের প্রতারক চক্র, যেখানে বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী এমএলএম ব্যবসা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ ও নিষিদ্ধ। অ্যাপস ও অনলাইনভিত্তিক যে কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতা দরকার।

টাঙ্গাইলে এমটিএফইর ফাঁদ, দিশাহারা হাজারো বিনিয়োগকারী : রাতারাতি ধনী হওয়ার লোভে এমটিএফই-এর ফাঁদে পা দিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছে টাঙ্গাইলের হাজারো বিনিয়োগকারী। জানা গেছে, ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচার দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ-এমটিএফইতে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশই যুবক। উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম মডেলে ব্যবসা করত প্রতিষ্ঠানটি। ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে লাভ পাওয়া যাবে, এই লোভে অনেকে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু সম্প্রতি বিনিয়োগকারীরা টাকা তুলতে পারছিলেন না, তখন বলা হয় সফটওয়্যার আপডেটের কথা। হঠাৎ বিনিয়োগকারীদের অ্যাপের অ্যাকাউন্টে জমা থাকা ডলারের বিপরীতে সমপরিমাণ দেনা দেখাতে থাকে। পরে অ্যাপটিই উধাও হয়ে যায়। প্রতারিত হওয়ার পর তারা না পাচ্ছেন তথাকথিত টিম লিডারদের দেখা; না পারছেন এ ব্যাপারে কোনো আইনি পদক্ষেপ নিতে। গোটা জেলায়ই এর বিছানো জালে অন্তত শত কোটি টাকা খোয়া গেছে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

এমটিএফই অ্যাপে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেছেন এসব ব্যক্তি ‘টিম লিডার’ হিসেবে স্থানীয়দের মাঝে পরিচিত। এ অ্যাপে বিনিয়োগ করে সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হয়েছেন ঘাটাইল, ভূঞাপুর ও মধুপুর উপজেলার মানুষ। মধুপুর উপজেলার রাজু, রফিক, সাজ্জাদসহ আরও অনেকেই জানান, চাকরির পাশাপাশি ৫০/৬০ হাজার টাকা খাটিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিমাসে ২০/৩০ হাজার টাকা বাড়তি ইনকাম করা যায়। সেই লোভে পড়েছি আমরা। আমাদের মতো হয়তো অনেকেই ঠকেছে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, এ রকম অদৃশ্য অ্যাপে বিনিয়োগ বন্ধে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর