রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফের সাজা গ্রেফতার আতঙ্ক

♦ চলতি মাসে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন ৩২৮ মামলা ♦ আসামি ১৫ হাজার ♦ আটক হাজারের বেশি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ফের সাজা গ্রেফতার আতঙ্ক

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি নেতারা আবারও নতুন মামলা এবং পুরনো মামলায় সাজা ও গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁরা বলছেন, চলমান এক দফা আন্দোলন ঘিরে নতুন করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আগের মামলায় সাজা দেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, ১৯ আগস্ট রাতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনসহ ১৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। আহত ছাত্রদল নেতা আবু তৈয়বকে ২২ আগস্ট রাজধানীর নিউ লাইফ হাসপাতালে দেখতে যান কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি আবুল হাসান চৌধুরী। এ সময় হাসপাতালের সামনে থেকে আবুল হাসান চৌধুরীকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির বিরুদ্ধে করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা প্রায় ৪৯ লাখ ৪১ হাজার ৭২২। আর অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা এর কয়েক গুণ। মোট মামলার মধ্যে ২ হাজার ৮৩০টির বেশি হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। বিএনপি দফতর সূত্র জানায়, ১৮ ও ১৯ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি গণমিছিল ও পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সারা দেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী চারটি নতুন মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি ২ হাজার ১১৫ জন। এ সময় সারা দেশে বিএনপির ৯৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৮ ও ২৯ জুলাই থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ৩২৪টি নতুন মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব মামলায় আসামি ১৩ হাজার ১১৫ জন। এ সময় সারা দেশে বিএনপির ১৫২১ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিএনপির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ১৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানার জামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম মেম্বার, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মো. সুরুজ মিয়া; ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম সর্দার, রূপগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা- সুমন, নাদিম, আয়লান, পিন্টু, স্বপন, বিষু, পারভেজ ও সাজ্জাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া একই দিনে হবিগঞ্জ জেলার আলী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন ফয়সাল, আজমিরীগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফখরুল ইসলাম ও ৫ নম্বর দৌলতপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি শেখ মো. ওমর ফরুকসহ ১৪ জনের অধিক নেতা-কমীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ছাড়া সম্প্রতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওতাধীন ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক মো. সোহাগ, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি নেতা শফিকুল ইসলাম স্বপন, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনির হোসেন, যাত্রাবাড়ী থানার ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দফতর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টু বলেন, ২৮ জুলাই মহাসমাবেশ থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত ১৯ আগস্ট খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলাধীন পাগলা থানা বিএনপি নেতা- ফরিদ খান, যুবদল নেতা ফারুক খান ও ছাত্রদল নেতা আবদুল্লাহ খানকে বিনা ওয়ারেন্টে গভীর রাতে তাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ ছাড়াও ভালুকা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাখাওয়াত হোসেন পাঠান, যুবদল নেতা মো. দুলাল ও শ্রমিক দল নেতা মো. উজ্জ্বল মিয়া এবং মুক্তাগাছা উপজেলার কুমারগাতা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য মো. উজ্জ্বল মিয়া, মো. ইদ্রিস আলী, যুবদল নেতা মো. রফিকুল ইসলাম, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা বিপ্লব হোসেন রবি, জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ন কবির, গৌরীপুর উপজেলা বিএনপি নেতা মনির খান, ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আ. মালেক মেম্বার, ঈশ্বরদী উপজেলা যুবদল নেতা খায়রুল আলম সোহাগ, ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ও বিএনপি নেতা তারেকুল ইসলাম তারেককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, দাবি বিএনপির।

২০১৩ সালের গাড়ি ভাঙচুর ও টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় গত ৮ আগস্ট জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ বিএনপির ২১ জনের দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া ২০০৭ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এক মামলায় গত ২ আগস্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা মামলায় সম্প্রতি বিচারিক আদালতে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছরের সাজা বহাল রেখেছেন হাই কোর্ট। পৃথক আরেকটি মামলায় দলটির আরেক নেতা আমানউল্লাহ আমানের ১৩ বছরের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আমানউল্লাহ আমানের স্ত্রী সাবেরা আমানেরও তিন বছরের সাজা উচ্চ আদালত বহাল রেখে রায় দিয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর