রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

অপহরণ নির্যাতনে সাবেক স্বামী

কর কর্মকর্তার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নারী কর্মকর্তা অপহরণ ও নির্যাতনের নেপথ্যে ছিলেন তার সাবেক স্বামী হারুন অর রশীদ। ভয়ংকর এই কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল ওই নারী কর্মকর্তার সাবেক গাড়িচালক মাসুদকে। নির্যাতনের জন্য হাতিরঝিল এলাকায় আগে থেকেই ৫০ হাজার টাকায় ঠিক করা হয়েছিল একটি বাসা। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে রাজধানীর মাদারটেক ও পার্শ্ববর্তী গাজীপুর এলাকা থেকে গাড়িচালক মাসুদসহ তিনজনকে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৩-এর যৌথ অভিযানে শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার বাকি দুজন হলেন আবদুল জলিল ও আবদুল হাফিজ।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে পুরো বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গ্রেফতার ব্যক্তিদের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, মাসুদসহ গ্রেফতার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জানা গেছে, নারী কর্মকর্তা মাসুমা খাতুনকে অপহরণের পরিকল্পনায় ছিলেন তার সাবেক স্বামী হারুন অর রশীদ। অন্যদিকে মাত্র ২০ দিনের মাথায় ১ আগস্ট চাকরিচ্যুত করায় ভুক্তভোগীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন গাড়িচালক মাসুদ। ভুক্তভোগীর সাবেক স্বামী হারুন অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। তিনি মাসুদকে প্রাথমিকভাবে নগদ ৭০ হাজার টাকা দেন। কাজ শেষ হওয়ার পর বিপুল পরিমাণ টাকা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। ৭০ হাজার টাকা মাসুদ মিশনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। ভুক্তভোগীর বর্তমান গাড়িচালকের সঙ্গে অপহরণকারী দলের সদস্য হাফিজের সুসম্পর্ক ছিল। বর্তমান চালকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই নারীর অবস্থান জেনে নেন অপহরণকারীরা।

জানা গেছে, র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া তিনজনসহ গতকাল পর্যন্ত এ নিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন মোট ছয়জন। আগের গ্রেফতার তিনজন হলেন সাইফুল ইসলাম, আবু বকর ও ইয়াছিন আরাফাত। অপহরণে জড়িত পাঁচজনই চালক মাসুদের ঘনিষ্ঠ বলছে র‌্যাব।

কমান্ডার মঈন বলেন, ১৭ আগস্ট রাত ৮টার দিকে ওই নারী মগবাজার থেকে বেইলি রোডে পৌঁছালে আগের স্বামীর পরিকল্পনা অনুযায়ী অপহরণকারীরা একটি মোটরসাইকেল ও রিকশা দিয়ে তার গাড়ির গতি রোধ করে। তখন গাড়ির চালক নিচে নামলে তাকে মারধর করে চালকের আসনে বসেন আসামি মাসুদ। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী গাড়ি নিয়ে তারা হাতিরঝিলের একটি বাসায় আসেন। তবে বাসার দরজার প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় তারা গাড়ি নিয়ে ঢাকায় ঘুরতে থাকেন। পরে রাত ১২টার দিকে কাঁচপুরে মাসুদের পরিচিত একটি গ্যারেজে নিয়ে ওই নারীকে বেধড়ক পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়। গাড়ির গ্লাসে কালো কাগজ লাগানো থাকায় কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারেননি। এ সময় ওই নারীর কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। তার কাছ থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয় আসামিরা। পরদিন তাকে মাদারটেকের একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। র‌্যাব সূত্র বলছে, মাদারটেকের বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর মাসুদ আবার ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে মাসুদসহ অন্যদের ওই নারীকে হাতিরঝিলের বাসায় নিয়ে যেতে বলেন তার সাবেক স্বামী। সেখানে যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে নেমে মাসুদ, রাজু ও সাব্বির খাবার আনতে যান। গাড়ির পাহারায় ছিলেন সাইফুল ইসলাম, আবু বকর ও ইয়াছিন আরাফাত। সুযোগ বুঝে ওই নারী ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে চিৎকার করলে স্থানীয়রা জড়ো হয়ে তাকে উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনায় ১৮ আগস্ট রমনা থানায় মামলা করেন ওই নারী কর্মকর্তা।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, মাসুমা অপহরণ ও নির্যাতনে সরাসরি জড়িত চালক মাসুদ গাড়ি চুরিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া বাস চালানোর সময় কয়েকজনকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলেন, সেই সব মামলার আসামিও তিনি। মূল পরিকল্পনাকারী হারুনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘তিনি মগবাজারের বাসাতেই অবস্থান করছেন বলে জেনেছি। ভুক্তভোগীর বক্তব্য এবং এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে জোর দেওয়া হয়েছে। তথ্যটি তদন্তকারী সংস্থাকে জানানো হবে। তারাই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।’

সর্বশেষ খবর