সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাদেশি জুয়াড়ির ভিড় কাঠমান্ডুর ক্যাসিনোতে

শিমুল মাহমুদ, কাঠমান্ডু, নেপাল থেকে

বাংলাদেশি জুয়াড়ির ভিড় কাঠমান্ডুর ক্যাসিনোতে

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ক্যাসিনোগুলোতে বাংলাদেশি জুয়াড়িদের ভিড় বেড়েই চলেছে। সহজে অন-অ্যারাইভাল ভিসাপ্রাপ্তি এবং ঢাকার ক্যাসিনোপাড়ায় পুলিশি অভিযানের পর থেকেই নেপালমুখী হয়েছেন বাংলাদেশি জুয়াড়িরা। এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, কেবল ক্যাসিনোতে খেলতে ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটের প্রতিটি ফ্লাইটেই দল বেঁধে নেপাল আসছেন বাংলাদেশি জুয়াড়িরা। জুয়ার টাকার জোগান দিতে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে হুন্ডিতে। সম্প্রতি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দেবাশীষ কুমার সাহার নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে, তিনি মূলত একজন পেশাদার ক্যাসিনো জুয়াড়ি। জুয়া খেলতে নেপালে এসে জেল খাটার পাশাপাশি তাকে আর্থিক জরিমানাও গুনতে হয়েছে। তবে এই যাত্রায় দেবাশীষ একা নন, কাঠমান্ডুর ক্যাসিনোগুলোতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কাঠমান্ডুর বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তথ্য পেয়ে এ বিষয়ে তদন্তে নেমেছে ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ। তারা বলছে, ক্যাসিনোর পুরো টাকাই লেনদেন হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। এ ছাড়া তদন্তে আরও নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। জুয়াড়িদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এদিকে নেপালের ক্যাসিনোতে বাংলাদেশি জুয়াড়িদের তৎপরতা ঠেকাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করেছে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তারা নেপালগামী কম বয়সী একা যাত্রী পেলেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে নেপালে কার্যরত একাধিক ট্যুর অপারেটর বলেছেন, প্রকৃত জুয়াড়িরা ঠিকই নেপালের ক্যাসিনোতে ভিড় করছেন। উল্লেখ্য, পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ট্রাভেল ডেস্টিনেশন নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর নাইট লাইফ খুবই জমজমাট। বলা হয়ে থাকে, রাতেই নাকি কাঠমান্ডু জেগে ওঠে। বার, নাইটক্লাব ও ক্যাসিনো দিয়ে ভরা এই শহর। কাঠমান্ডুর নাইট লাইফ উপভোগ করতে হলে ঢুকে পড়তে হবে পছন্দমতো একটি ক্লাবে। পকেটে পর্যাপ্ত টাকা থাকলে ঢুকতে হবে ক্যাসিনোতে। কাঠমান্ডুর নাইট লাইফ তার পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে, যা উপেক্ষা করা খুবই কঠিন। ইতিপূর্বে ঢাকায় নেপালিদের সহায়তায় বেশ কয়েকটি ছোট আঙ্গিকের ক্যাসিনো গড়ে উঠেছিল। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের পর এসব ক্যাসিনোর সম্রাটরা অনেকেই আটক হন। অনেকে আস্তানা বদল করে ব্যাংকক, কাঠমান্ডুতে জুয়ায় অংশ নেন। সহজ ভিসাপ্রাপ্তির কারণে অধিকাংশই আসেন নেপালের রাজধানীতে। ঢাকায় অবৈধভাবে পরিচালিত ক্যাসিনোতে নেপালের অনেক নাগরিক কাজ করতেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় যেসব ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়েছে সেখানে শতাধিক নেপালি নাগরিকের কাজ করার প্রমাণ মেলে। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নারী। যেসব জুয়ার বোর্ড আনা হয়েছিল সেগুলো পরিচালনার জন্য দক্ষ লোক বাংলাদেশে না থাকায় নেপালি নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ক্যাসিনোগুলোকে অভিজাত চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করেন ক্যাসিনো মালিকরা। কোনো কোনো ক্যাসিনোতে নেপালিদের অংশীদারিত্ব ছিল বলেও কথা উঠেছে। নেপালি নাগরিকরা ঢাকায় মূলত ম্যানেজমেন্টের কাজ করতেন, ক্যাসিনো পরিচালনায় তারা যথেষ্ট দক্ষ। নেপালের নাগরিকরা এসব ক্যাসিনোর বোর্ড পরিচালনার পাশাপাশি বাংলাদেশি কয়েকজনকেও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এদিকে কাঠমান্ডুর ক্যাসিনোতে কয়েকজন বাংলাদেশির বিনিয়োগ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। পুলিশের বরখাস্ত হওয়া পরিদর্শক সোহেল রানা ই-অরেঞ্জ নামের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নামে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করলেও দেশে-বিদেশে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। নামে-বেনামে থাকা তার ঢাকায় বিভিন্ন সম্পদের বাইরেও চার দেশে রয়েছে বিপুল সম্পদ। থাইল্যান্ডের পাতায়ায় সুপারশপ, জমি ও ফ্ল্যাট, পর্তুগালের লিসবনে সুপারশপ, বার ও রেস্তোরাঁ, ফিলিপাইনের ম্যানিলায় বার এবং নেপালের কাঠমান্ডুতে বার ও ক্যাসিনো রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি বর্তমানে জামিন নিয়ে বিদেশে পলাতক। নেপাল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ যেখানে বৈধভাবে ক্যাসিনো চালু করা হয়েছে। বর্তমানে দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে ৯টি এবং রাজধানীর বাইরে ২টি ক্যাসিনো চালু রয়েছে। প্রতিটি ক্যাসিনোতে কমপক্ষে ৩০০-এর মতো কর্মী রয়েছে। এসব ক্যাসিনোর বাইরে নেপাল-ভারত সীমান্তে দুই ডজনের বেশি ছোট ক্যাসিনো রয়েছে। তবে নেপালের আইন অনুযায়ী, দেশটির নাগরিকরা ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে পারেন না। ক্যাসিনো নামের এই জুয়ার ব্যবস্থা শুধুই বিদেশি নাগরিকদের জন্য। তবে স্থানীয়রা ক্যাসিনোর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত।

সর্বশেষ খবর