সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

হাসপাতালে কেমন আছেন খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাসপাতালে কেমন আছেন খালেদা জিয়া

টানা ১৮ দিন রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এখনই রিলিজ পাচ্ছেন না তিনি। তাঁকে বাসায় নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা এখনো হয়নি। কবে হাসপাতাল ছাড়তে পারবেন সেটাও চিকিৎসকরা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না। কারণ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা কখন কী   হয়, কেউ বলতে পারেন না। এমন আশঙ্কাই করছেন চিকিৎসক টিমের সদস্যরা। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনও একই কথা বলেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। তার শারীরিক নানা জটিলতার কিছুটা উন্নতি হলেও সেটাকে যথেষ্ট ভালো বলা যাবে না। হাসপাতালে তাঁকে আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন। সে কারণে তাঁকে আরও কিছুদিন হাসপাতালেই থাকতে হবে। জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার কিডনি জটিলতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও লিভার জটিলতা কাটেনি। এখনো তাঁকে বেশির ভাগ সময়েই তরল খাবার দেওয়া হচ্ছে। তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা দিনরাত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখার জন্য। বিশেষ করে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁর শারীরিক অবস্থা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হচ্ছে। চিকিৎসক, নার্স আর গৃহকর্মী ছাড়া কারও সঙ্গে তেমন একটা দেখাসাক্ষাৎ হচ্ছে না সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। মাঝেমধ্যে দলের দু-একজন সিনিয়র নেতা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রায় প্রতি সপ্তাহে এক দিন হাসপাতালে গিয়ে তাঁর খোঁজখবর নিতেন। শুক্রবার তিনি নিজেও চিকিৎসার্থে সস্ত্রীক সিঙ্গাপুরে গেছেন। চিকিৎসকদের মধ্যে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন দিন ও রাতের বেশির ভাগ সময়ই হাসপাতালে কাটাচ্ছেন। মূলত তিনিই চেয়ারপারসনের সার্বিক চিকিৎসার বিষয়টি সমন্বয় করছেন। জানা গেছে, বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল। ৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তির সময় তাঁর শরীরে জ্বর ও কিডনি জটিলতা ছিল। বর্তমানে জ্বর নেই। আর কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিসসহ অন্য রোগগুলোও ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। আপাতত নতুন কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি বেগম জিয়ার শরীরে। তবে বয়স বিবেচনায় যে কোনো সময় এ অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। ফলে আরও কিছুদিন তাঁকে হাসপাতালে রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে অবস্থা বুঝে মেডিকেল বোর্ড ব্যবস্থা নেবে। প্রতিদিন সকাল ও বিকালে কমপক্ষে দুবার করে খালেদা জিয়ার কেবিনে যাচ্ছেন মেডিকেল টিমের সদস্যরা। সেখানে তাঁকে ‘সিসিইউ’ সমমানের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা পর বৈঠক করে, যখন যা দরকার সে অনুযায়ী ওষুধপত্র দিচ্ছেন তাঁরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, হার্ট, ফুসফুস, ডায়াবেটিস, কিডনি, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। যে কারণে কয়েক বছর ধরে কিছুদিন পর পর প্রায়ই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম সাত্তারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ‘ম্যাডাম’ বেঁচে আছেন। তবে সুস্থ বলা যাবে না। কারণ তাঁর লিভার সমস্যাসহ অনেক জটিল সমস্যাই রয়ে গেছে। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা প্রতিদিনই সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশের কোনো ‘অ্যাডভান্স মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হেলথ সেন্টারে’ নিয়ে যেতে তাগিদ ও পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তাঁকে সেখানে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না’। জানা গেছে, এভারকেয়ার হাসপাতালে আরও কিছুদিন বেগম জিয়াকে পর্যবেক্ষণে রাখতে চান চিকিৎসকরা। ফলে আরও কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে তাকে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন আরও বলেন, প্রায় প্রতিদিনই প্রয়োজন অনুসারে ‘ম্যাডামের’ স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সেগুলোর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মেডিকেল বোর্ড তাঁর চিকিৎসা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে তাঁর নানা শারীরিক জটিলতার কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে সেটাকে ভালো বলা যাবে না। হাসপাতালে কতদিন থাকতে হবে না হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার শুধু মেডিকেল বোর্ডের।

সর্বশেষ খবর