মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

এখনো কাটেনি ডলার বাজারের অস্থিরতা

বাড়তি দামে বেচাকেনার অভিযোগ

শাহেদ আলী ইরশাদ

এখনো কাটেনি ডলার বাজারের অস্থিরতা

ডলারের বাজারের অস্থিরতা এখনো কাটেনি। অনেক ব্যাংক যথাসময়ে আমদানির এলসি দায় পরিশোধ করতে পারছে না। আবার কোনো কোনো ব্যাংক নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে ডলার বেচাকেনা করছে। এতে বাজারে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, এক বছর আগেও মানি এক্সচেঞ্জগুলো থেকে এক ডলার ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় কেনা যেত, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১১৮ টাকায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক মানি এক্সচেঞ্জগুলোর প্রতি ডলার কেনার কথা ১১০ টাকা ৫০ পয়সায়, আর বিক্রি করবে ১১২ টাকায়। এ বিষয়ে একটি মানি এক্সচেঞ্জের বিক্রয় কর্মী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা তো ওই রেটে কিনতে পারি না। আমাদের প্রতি ডলার কিনতে হয় ১১৫ টাকা থেকে ১১৭ টাকায়। ব্যাংক রেটে বিক্রি করব কীভাবে?’  মানি এক্সচেঞ্জগুলোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনার একটি কাঠামো রয়েছে তফসিলি ব্যাংকগুলোরও। যৌথভাবে এই দর নির্ধারণ করে ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও বেসরকারি ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। সংগঠন দুটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলতি আগস্ট মাসে আমদানির জন্য প্রতি ডলার বিক্রি করার কথা ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায়। তবে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এলসি খোলার জন্য প্রতি ডলারে ৫-৬ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে তাদের। এর আগে আমদানিকারকদের কাছে ১০৯ টাকার বেশি দামে ডলার বিক্রি না করার জন্য গত ৫ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে দেশের ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজার পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদা বিজ্ঞপ্তি জারি করে ব্যাংকগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ম মেনে চলতে বলেছিল। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করা প্রতি ডলারের বিপরীতে কয়েকটি ব্যাংক ১০৯ টাকার বেশি নিয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফুডস্টাফ ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বোরহান ই সুলতান সাংবাদিকদের জানান, ঋণপত্র খোলার জন্য কোনো কোনো ব্যাংক প্রতি ডলার ১১৪-১১৫ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। এতে ২০ হাজার ডলারের এলসিতে তিন টাকা করে বেশি নিলে ৬০ হাজার টাকা বেশি নিচ্ছে। এই ৬০ হাজার টাকা বেশি দেওয়ার কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজারে।

তথ্য বলছে, রপ্তানি বিল নগদায়নে প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধাণ করা আছে। আর প্রবাসী আয়ের রেমিট্যান্সের দাম ১০৯ টাকা। যদিও বিশেষ ক্ষেত্রে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে ১১৪ টাকা থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত। জাহিদ হুসেন বলেন, একেক ব্যাংকের একেক পলিসির কারণে এমনটা হচ্ছে। অনেক ব্যাংক বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনে বেশি দামে এলসির ডলার বিক্রি করছে।

হিসাব বলছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানিয়েছেন, দেশের রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স ইতিবাচক ধারায় আছে। বিপরীতে আমদানি ব্যয় অনেক কমে এসেছে। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে আগের মতো বাজারে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে না। জানুয়ারি নাগাদ ডলার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর