মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা
জ্বরের অজুহাতে ডাবের দামে অরাজকতা

রায়পুরে ৪০ ঢাকায় ২০০

রাশেদ হোসাইন

রায়পুরে ৪০ ঢাকায় ২০০

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় গাছের মালিকরা একটি ডাব বিক্রি করেন ৪০ টাকায়। সে ডাব কয়েক হাত বদল হয়ে ঢাকায় এসে বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে ডাবের দাম নিয়ে চলছে অরাজকতা। ইচ্ছামতো দামে ডাব বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। কোথাও বিক্রেতারা এক জোড়া ডাব ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। বিক্রেতাদের দাবি, প্রতি বছর আষাঢ়-শ্রাবণে ডাবের সরবরাহ কমে যায়। পাশাপাশি ডেঙ্গুসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ও গরমের কারণে ডাবের চাহিদা অনেক বাড়ে। এসব কারণে ডাবের দাম বেড়ে যায়। ক্রেতাদের দাবি, সিন্ডিকেটের কবলে ডাবের বাজার। ডেঙ্গুর প্রভাব কাজে লাগিয়ে চড়া দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল, রমনা পার্ক, কারওয়ানবাজার ও পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে ডাবের। আর এ সুযোগে চড়া দামে ডাব বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এলাকাভেদে প্রতি পিস বড় আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত। আর মাঝারি ও ছোট আকারের ডাব ১২০ থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত। রাজধানীর ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় হাঁটতে আসা হানিফ মাহমুদ বলেন, ডাবের দাম এখন নাগালের বাইরে। কয়েক মাস আগেও প্রতিটি ডাব ১০০ টাকার নিচে বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার ওপরে। মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় রহিম নামে এক ক্রেতা বলেন, হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত ভাইয়ের জন্য ডাব কিনতে এসেছিলাম। ডাবের দাম অনেক। একটা ডাব ২০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। কারওয়ানবাজারের আড়তদাররা বলেন, একটি ডাব কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে ঢাকায় আসে। প্রথমে গাছের মালিকরা টাকা নেন। তারপর যারা গাছে ওঠেন তারা নেন। এরপর যে গাড়িতে লোড হয় তারা টাকা নেয়। এরপর সেই ডাব আড়তে নিয়ে আসেন ব্যাপারীরা। তারা আড়তদারদের একটা দাম নির্ধারণ করে দেন। তার ওপর নির্ভর করে ডাব বিক্রি হয়। বর্তমানে আড়তে প্রতিটি ডাব পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। গত বছর এ সময়ে বিক্রি হতো ৮০ টাকায়। ঢাকা মেডিকেল এলাকার ডাব বিক্রেতা সোলায়মান জানান, ডেঙ্গু রোগ বাড়ায় ডাবের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। তবে পর্যাপ্ত জোগান নেই। ফলে দাম কিছুটা বাড়ছে। আরেক ডাব বিক্রেতা অনীক হাসান বলেন, ডাবের বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। সরবরাহ কম, অথচ চাহিদা বেশি। এজন্য ডাবের দাম বাড়ছে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, ডাব অনানুষ্ঠানিক ব্যবসা। ডিমের মতো এখানেও সিন্ডিকেটের থাবা পড়েছে। তারা তিন-চার রকম সাইজ করে বেশি দামে বিক্রি করছেন। এ দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সৎ লোক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দামে ডাব বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে হাসপাতাল এলাকায় বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। এখন হাসপাতল এলাকায় ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, বেড়িবাঁধ, মিরপুর এলাকায় ডাব পাইকারি বিক্রি হয়। যাত্রাবাড়ীতে ১৭ জন আড়তদার রয়েছেন। তারা নিজেরা ডাবের দাম ঠিক করে নেন। আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় খবর নিয়ে জেনেছি গাছ মালিকরা প্রতিটি ডাবে ৩৫ থেকে ৪০ টাকার বেশি দাম পান না। এখন গাছের মালিকরাও বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়েছেন ঢাকায় ডাবের দাম বেশি। তাই তারা এখন ডাবের দাম বেশি চাইছেন।

এদিকে ডাবের মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখতে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ডাব ব্যবসায়ীদের কেনাবেচার রসিদ, পাকা ভাউচার ও ডাবের মূল্য তালিকা টাঙিয়ে রাখতে হবে। এগুলো করার পর বাজারে যদি প্রভাব না পড়ে, তাহলে পরবর্তীতে আরও কাজ করব। ডাবের বাজার যতদিন স্থিতিশীল না হবে, ততদিন এখানে কাজ করব। গতকাল যৌক্তিক মূল্যে ডাব কেনাবেচাবিষয়ক সচেতনতামূলক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ডিজি সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমি কোনো দিন চিন্তা করিনি ডাব নিয়ে আমাকে এভাবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসতে হবে। ডাবও এখন আমাদের টক অব দ্য কান্ট্রি। আমি ভাবিনি ডাব নিয়ে আমাদের এভাবে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘কিছুদিন ধরে ডাবের বাজার অস্থির। ডেঙ্গু রোগের একটি বড় চিকিৎসা হলো তরল পানি পান করা। এজন্য প্রাকৃতিক ডাবই হলো সবচেয়ে উত্তম পানীয়। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে ডাবের চাহিদা বাড়ায় পণ্যটি দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ডাবের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ডাবের দাম বাড়ানোর সুযোগ এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা নিচ্ছেন।’ ডেঙ্গু পুঁজি করে ডাবের দাম বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে ডিজি সফিকুজ্জামান বলেন, ‘এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই ডাব ব্যবসায়ীরা সম্মানের সঙ্গে এ ব্যবসা করবেন। অতি মুনাফাকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করে যাব।’ সম্প্রতি ডাবের আড়তে ও বাজারে ভোক্তা অধিদফতরের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়েছে জানিয়ে ডিজি সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা যেসব তথ্য পেলাম, তাতে ডাবের দাম খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১০০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। আশা করি ডাবের বাজারের যে অস্থিরতা তা নিরসন হয়ে ৭০-৮০ শতাংশ দাম কমে যাবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর