মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

কেন্দ্রের ডেটাবেজ করবে ইসি

রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে সতর্কতা জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশের ভোট কেন্দ্রগুলোর ডেটাবেজ তৈরি করে রাখবে নির্বাচন কমিশন। খসড়া এ তালিকা থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ভোটের আগে বাছাই চূড়ান্ত করার পর তা গেজেট করবে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি। সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি পরবর্তীতে স্থানীয় সরকারের ভোটেও এ ডেটাবেজ ব্যবহার করা হবে এবং কেন্দ্র হালনাগাদ করা হবে। গতকাল নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এসব তথ্য জানান।

এ নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে মাঠ কর্মকর্তাদের জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রোহিঙ্গারা ভোটার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইসি মো. আলমগীর বলেন, রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো সুযোগ নেই। কারণ কয়েক ধাপে ওখানে আবেদন যাচাই করা হয়। তবে এখন শুনছি যে কোনো কোনো রোহিঙ্গা অন্য এলাকায় চলে গিয়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যে আপনারা বিষয়টি দেখবেন। ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে ২০১৯ সালে চট্টগ্রামের ৩২টি উপজেলাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। সে মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রধান করে বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। যে কমিটি ওইসব এলাকার প্রতিটি আবেদন পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ভোটার তালিকায় যুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে ১০ লাখ রোহিঙ্গার আঙুলের ছাপ রয়েছে। তাই কেউ ভোটার হতে চাইলে প্রথমেই সেখান থেকে যাচাই করা হয়। এরপরও রোহিঙ্গারা সমতলে মিশে গিয়ে ভোটার হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকে।

ভোট কেন্দ্রের ডেটাবেজ রাখবে ইসি : নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, “ভোট কেন্দ্রের একটা ডেটাবেজ করা হবে। শুধু জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় নির্বাচনেও এগুলো ব্যবহার করা হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময়ও আবার চূড়ান্ত করা হবে। কারণ অনেক কেন্দ্র পরিবর্তন করতে হবে। নদীভাঙন বা প্রাকৃতিক দুযোগে কিংবা অন্য কারণে কেন্দ্র করার অনুপযোগী হতে পারে।” তিনি জানান, ভোট কেন্দ্র নীতিমালা শর্তানুযায়ী বিদ্যামানটা বহাল রাখতে হবে। তবে নতুন ভবন হলে, বা পাশে নতুন একটি কলেজ হলে কিংবা প্রাকৃতিক কারণে অনুপযোগী হলে নতুন করে কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। কাজেই ডেটাবেজ থেকে কোনটা ব্যবহার করব, কোনটা করা হবে না, তা নির্বাচন এলে চূড়ান্ত করা হবে।

ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুতের বিষয়ে এ নির্বাচন কমিশনার জানান, আইনে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ভোট কেন্দ্রের তালিকা প্রণয়ন করবে। যখন তফসিল ঘোষণা হবে তখন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তালিকা দেবে। খসড়া তালিকা করার সময় নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি শিক্ষা কর্মকর্তা, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করার হয়েছে এবার। আমরা ভোট কেন্দ্র করার সময় অভিযোগ পাই। একজন কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব দেওয়া থাকলে অনেকেই সেখানে প্রভাব বিস্তাব করে। তারা চাপে মুখে থাকে। বাস্তবতা হলো এ চাপ অতিক্রম করা কঠিন হয়। চাপ সহ্য করতে গেলে অনেক সময় তারা বিব্রতকর অবস্থায়। এ নির্বাচন কমিশনার জানান, এজন্য চাপ যাতে না হয়, চাপ যাতে না দিতে পারে এবং ন্যায়সঙ্গত ভোট কেন্দ্র যাতে হয় সে জন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে পুলিশ, শিক্ষা ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে।

নূরুল হুদা কমিশনের পেনশন সুবিধার প্রস্তাব অযৌক্তিক : দায়িত্বকাল শেষ হওয়ার পর পেনশন সুবিধা চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাব ‘অযৌক্তিক’ ছিল। তাই সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন ওই প্রস্তাবে একমত নয় বলে আইন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধার কোনো পরিবর্তন আসছে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালে যে অধ্যাদেশ আছে, তা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান বেতন পান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং হাই কোর্টের বিচারপতির সমান অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা সুযোগ-সুবিধা পান। এ ছাড়া অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সমান পাবেন। কে এম নূরুল হুদা কমিশনের সময়কার এই ইসি সচিব বলেন, গত কমিশন একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। বর্তমান কমিশনের মতামত কী সেটা জানার জন্য মন্ত্রণালয় আবার সেটা ফেরত পাঠিয়েছে। তখন আমরা দেখলাম যে, খসড়া আইনে পেনশনের বিষয়টা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। পেনশন বিষয়ে আমরা একমত না বলে জানিয়েছি।

সর্বশেষ খবর