বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

জেলায় জেলায় প্রশাসন-পুলিশ ও ইসি কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব

গোলাম রাব্বানী

জেলায় জেলায় ডিসি, এসপি এবং উপজেলায় উপজেলায় ইউএনও, ওসিদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ পেয়েছে। বিশেষ করে এবারে ভোট কেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসিদের ক্ষমতা দেওয়ায় ইসির কর্মকর্তাদের মতামত মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। মূলত তা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, ডিসি-এসপিরা মন্ত্রী-এমপি ও রাজনীতিবিদের তদবিরে ভোট কেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য ইসি কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। খসড়া তালিকায় কিছু পরিবর্তন এলেও চূড়ান্ত তালিকায় পরিবর্তন করতে এখনো চাপ দিচ্ছেন। আবার অনেক এলাকায় ভোটার সংখ্যা বাড়লেও পুলিশ চাইছে ভোট কেন্দ্র কমানোর জন্য। কোথাও কোথাও ইসির কর্মকর্তারা কেন্দ্র পরিবর্তনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ডিসি-এসপিরা তাদের হুমকি-ধমকিও দিচ্ছেন। তবে যেসব জেলার ইসির কর্মকর্তারা ডিসি-এসপিদের কথা শোনেননি সেখানে ভোট কেন্দ্র নীতিমালা অনুযায়ী কমিটির অন্য সদস্যরা তা অনুমোদন দিয়েছেন। ফলে ইসির কর্মকর্তাদের মতামত মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে একাধিক নির্বাচন কর্মকর্তা মৌখিক অভিযোগও দিয়েছেন। এদিকে ভোট কেন্দ্রের নীতিমালায় ডিসি-এসপিদের রাখা নিয়ে ভিন্ন সুরে কথা বলছে নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় প্রভাব বিস্তার ঠেকাতেই ভোট কেন্দ্র নির্ধারণে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলে গতকাল জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘একজন কর্মকর্তার ওপর দায়িত্ব দেওয়া থাকলে অনেকেই সেখানে প্রভাব বিস্তার করেন। তারা চাপের মুখে থাকেন। এ চাপ অতিক্রম করা অনেক সময় কঠিন হয়। সেজন্য আমরা জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে পুলিশ, শিক্ষা ও আমাদের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি করেছি। এতে একক কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। এ ছাড়া এত কর্মকর্তার ওপর চাপ প্রয়োগ করাও সম্ভব হবে না। এদিকে নিয়ম অনুযায়ী খসড়া প্রকাশের পরে কোনো ভোট কেন্দ্র নিয়ে আপত্তি থাকলে বা কোনো কেন্দ্র স্থাপনের দাবি থাকলে এ সংক্রান্ত লিখিত আবেদনও করার বিধান রয়েছে। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে আহ্বায়ক কমিটি এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। তবে ডিসিরা জেলা নির্বাচন অফিসারদের বলছেন সংশ্লিষ্ট এলকায় গিয়ে তা নিষ্পত্তি করতে। তা নিয়েও নতুন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক জেলা-উপজেলা নির্বাচন অফিসার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, এবারের ভোট কেন্দ্রের নীতিমালায় ডিসি, ইউএনওদের কেন্দ্র স্থাপনে ক্ষমতা দেওয়ায় নীতিমালা ব্যস্তবায়ন বাধার মুখে পড়েছে। ডিসি-ইউএনওরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন কেন্দ্রে পরিবর্তন করেছেন। চূড়ান্ত তালিকায় আরও পরিবর্তন করতে বলছেন। যদিও তা নীতিমালার আলোকে হচ্ছে না। ইসির কর্মকর্তারা এনিয়ে কথা বললে তাদের বিভিন্ন দলের সমর্থক বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী ভোট কেন্দ্রের আপত্তি শুনে নিষ্পত্তি করবে কমিটি। কিন্তু বিভিন্ন জেলার ডিসিরা বলছেন, জেলা নির্বাচন অফিসার সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করবেন। তবে জেলা নির্বাচন অফিসার সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে ভোট কেন্দ্রের বিবাদ নিষ্পত্তি করতে গেল তোপের মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। একজন জেলা নির্বাচন অফিসার বলেছেন, ডিসি-ইউএনওদের সঙ্গে শুধু ভোট কেন্দ্র নিয়ে দ্বন্দ্ব নয়। বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনের সময় বরাদ্দ নিয়ে জটিলতা হয়। দেখা গেছে নির্বাচনের আচরণবিধি দেখভালের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য প্রতিদিন বরাদ্দ থাকে ৫ হাজার টাকা। আর সে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় ডিসির অনুকূলে। কিন্তু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যখন মাঠে তথা কোনো উপজেলায় যান তখন তিনি সে টাকা পান না। তখন ইউএনও সংশ্লিষ্ট উপজেলা অফিসারকে আবার বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে টাকা দিতে বলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের খরচ বহনের জন্য। নির্বাচন এলেই এরকম বরাদ্দ নিয়ে সমস্যা হয়। ১৬ আগস্ট ভোট কেন্দ্রের খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ খসড়া তালিকার ওপরে দাবি-আপত্তি দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকক্ষ বেড়েছে ২৬.২২ শতাংশ বা ৫৪ হাজার ৩৪৯টি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটকক্ষ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৩১৯টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৬৬৮টি। সব থেকে বেশি ভোটকক্ষ বেড়েছে কুমিল্লায় ৩০ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর সব থেকে কম ভোটকক্ষ বেড়েছে ঢাকায় ২১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি কেন্দ্র থেকে বেড়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার ৩৮০টির মতো হতে পারে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার ভোট কেন্দ্র বাড়ছে ২ হাজার ১৯৭টি। ইসির ১০টি অঞ্চলের মধ্যে এবার কুমিল্লা অঞ্চলে কেন্দ্র বাড়ছে বেশি। এ অঞ্চলে ১১ দশমিক ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অঞ্চলে একাদশের ৪ হাজার ২৯৪টি কেন্দ্র থেকে বেড়ে ৪ হাজার ৭৭৫টির মতো কেন্দ্র হচ্ছে। সবচেয়ে কম বাড়ছে সিলেট অঞ্চলে। সেখানে একাদশের ২ হাজার ৮০৫টি কেন্দ্র থেকে বেড়ে ২ হাজার ৮৬৫ হচ্ছে। ৩১ আগস্ট প্রকাশিত খসড়া কেন্দ্রের ওপর দাবি-আপত্তি নেওয়ার শেষ তারিখ। এসব দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির শেষ তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর এবং খসড়া ভোট কেন্দ্রের তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে ১৭ সেপ্টেম্বর।

সর্বশেষ খবর