বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

কোনো কূটনৈতিক ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ

শমসের মবিন চৌধুরী

কোনো কূটনৈতিক ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বলেছেন, আমি মনে করি না যে বাংলাদেশ কোনো ধরনের কূটনৈতিক ঝুঁকিতে আছে। কিংবা বাংলাদেশ কোনো আন্তর্জাতিক চাপে আছে। বরং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয় স্বার্থকে অক্ষুণ্ন রেখেই বাংলাদেশকে সব সময় সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্র কিংবা জাতীয় স্বার্থবিরোধী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেশের বাইরে থেকে টেলিফোনে দেওয়া সংক্ষিপ্ত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

‘বাংলাদেশ কি কোনো ধরনের কূটনৈতিক ঝুঁকিতে আছে? এ প্রশ্নের জবাবে- শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ কোনো ধরনের কূটনৈতিক ঝুঁকিতে আছে বলে আমি মনে করি না। বাংলাদেশ কূটনৈতিক ঝুঁকিতে আছে- এটা কীভাবে বুঝলেন? বাংলাদেশ কূটনৈতিক কোনো ঝুঁকিতেও নেই। বিদেশি কোনো চাপেও নেই।

‘বিশ্বরাজনীতিতে বর্তমানে ভারত-চীন প্রতিযোগিতা, যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতা ও যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া প্রতিযোগিতা চলছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বের এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে বাংলাদেশ জড়িয়ে যাচ্ছে। কিংবা এর সঙ্গে বাংলাদেশও রয়েছে।’ এর বিষয়ে সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন, কেন? যুক্তরাষ্ট্র বা চীন কি বাংলাদেশকে কোনো রকমের চাপ দিচ্ছে। চীন বা ভারত কি বাংলাদেশকে এমন কোনো রকমের চাপ দিচ্ছে? যার ফলে মনে হয় যে, বাংলাদেশ কূটনৈতিক ঝুঁকিতে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়া কোনো দেশ বা সরকারের পক্ষ থেকেই বাংলাদেশের ওপর কোনো রকমের চাপ নেই। কূটনৈতিক কোনো ঝুঁঁকিও নেই।

‘সামনে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। শক্তিধর দেশগুলোর কূটনীতিকরা অনেক ধরনের কথা বলছেন। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে। অনেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন। এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?’ জবাবে বিশিষ্ট এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, এটা তো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। একটা বন্ধু রাষ্ট্রের নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু হয়, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হয়- সেটা তো তারা চাইতেই পারেন। এখানে তো চাপের কিংবা ঝুঁকির কিছু নেই। এটা তো বাংলাদেশ ও দেশের জনগণের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

‘সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা ঢাকায় ‘আসা-যাওয়া’ শুরু করেছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা ঘন ঘন বাংলাদেশ সফর শুরু করেছেন। এটার কারণ কী?’ এর উত্তরে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, কোনো দেশের সঙ্গে যখন আরেকটা দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গুরুত্ব থাকে, তখন তারা ঘন ঘন সফরে আসতেই পারেন। সেটা বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। অর্থনৈতিক কারণে হতে পারে। বাণিজ্যিক কারণে হতে পারে। আবার আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক সহযোগিতার কারণেও হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সফরকারী প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের নির্বাচনের কথা বলেছেন। তারা প্রত্যাশা করেন- একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু তারা কি কখনো বলেছেন যে, বাংলাদেশের নির্বাচনকালে সরকারের ধরন কী হবে? এটা কখনোই তারা বলেননি। এমনকি নির্বাচন ‘অংশীদারিত্বমূলক’ হবে কিনা- এ কথাটা পর্যন্তও যুক্তরাষ্ট্র বা সেদেশের সরকার কখনোই বলেনি। তাছাড়া চীন কিংবা ভারতের পক্ষ থেকেও এ ধরনের কোনো কথাবার্তা বলা হয়নি। বরং তাদের অনেকেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছেন যে, বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ‘যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য ‘নতুন ভিসা নীতি’ আরোপ করা হয়েছে। আরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এগুলোকে কীভাবে দেখেন? জবাবে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, র‌্যাবের ভিসানীতি তো অনেক আগেই দিয়েছে। এটা তো নতুন নয়। ভিসানীতিও দ্বিপক্ষীয় বিষয়। একটা দেশ নিজেদের জাতীয় স্বার্থ বজায় রাখতে নানা রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। তাছাড়া নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা তারা এখনো পর্যন্ত আরোপ করেনি। এটা তো কোনো রকমের কূটনেতিক ঝুঁকি বা চাপ নয়। ‘বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিবৃতি দিয়ে তাঁকে হয়রানি না করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়টি দেশ কিংবা সরকারের ওপর কোনো রকমের চাপ কিনা?’ এ প্রসঙ্গে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে সম্প্রতি বিশ্বের কয়েকজন নোবেল লরিয়েট একটি যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন। এতে তারা তাকে হয়রানি না করার কথা বলেছেন। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলার বিষয়টা আদালতের বিষয় হয়ে গেছে। এখানে সরকারের কী করার আছে? এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও বিচার বিভাগের বিষয়। তাছাড়া তার নামে নতুন যে মামলাগুলো হয়েছে- সেগুলো তার প্রতিষ্ঠানের লোকেরাই করেছেন। অতএব দেশের আদালতেই এসব মামলাগুলোর নিষ্পত্তি হবে। এতে সরকারের ওপর চাপের কিংবা বাংলাদেশের ওপর কূটনৈতিক ঝুঁকির কোনো বিষয় নেই।

সর্বশেষ খবর